ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১০৫৮

গার্ডিয়ানের চোখে বাংলাদেশের নির্বাচন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০৯:১৫ ২৯ ডিসেম্বর ২০১৮  

সংগৃহীত

সংগৃহীত

আগামী ৩০ ডিসেম্বর বাংলাদেশের সাধারণ নির্বাচন। এই নির্বাচনের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করে। বিরোধীদলের কাছে ‘গণতন্ত্র পুনঃউদ্ধার’ , সরকার দলের কাছে জনগণের উন্নয়ন, আর জনগণের কাছে শান্তি।


এতো গেলো দল আর জনগণের ব্যাপার। আর ব্যক্তিক দিক থেকে শেখ হাসিনার একটানা তৃতীয়বারের মতো প্রধানমন্ত্রীত্বের শপথ গ্রহণ, অন্যদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তি। সবকিছুকে সরলীকরণ করা অনেক কঠিন বলে গার্ডিয়ানকে বলেছেন বাংলাদেশের জনগণ।


বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরেকবার ক্ষমতায় আসবেন কি?

তা নির্ধারণ করতে বাংলাদেশের নাগরিক রোববার ভোট দেবেন।

বাংলাদেশকে দ্রুত গতিতে মধ্য আয়ের অর্থনীতির দেশ হিসেবে তুলে এনেছে শেখ হাসিনার সরকার। তবে এই সরকারের বিরুদ্ধে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপক অভিযোগও রয়েছে।

ব্রিটিশ পত্রিকা দ্য গার্ডিয়ান-গতকাল এসব কথা বলেছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রক্তক্ষয়ী নির্বাচনী প্রচারের পরও শেখ হাসিনার প্রধানমন্ত্রী থাকার পক্ষে পরিবেশ পরিস্থিতি অনুকূল রয়েছে।

তবে বিরোধীরা চলমান পরিস্থিতিকে দেশটির ৪৭ বছরের ইতিহাসে ‘সবচেয়ে বেশি শ্বাসরুদ্ধকর’ বলে উল্লেখ করেছে।

নির্বাচন-পূর্ব কয়েক মাসে শেখ হাসিনার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী খালেদা জিয়াসহ বিরোধীপক্ষের অসংখ্য নেতা-কর্মী কারাগারে আছেন কিংবা গুম হয়েছেন।

আন্তর্জাতিক নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ও মুক্তমত প্রকাশের সংগঠনগুলো অভিযোগ তুলে বলেছে, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ কাজে বাংলাদেশে যাওয়ার জন্য ভিসা দিতে অপ্রয়োজনীয়ভাবে দেরি ও হয়রানী করা হচ্ছে।

শেখ হাসিনার বিরোধী জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন দাবি করেছেন, ‘প্রতিপক্ষের কর্মীদের ওপর পুলিশের হয়রানি নজিরবিহীন পর্যায়ে পৌঁছেছে।’ তাঁদের জোটের ৭০ জনের বেশি প্রার্থীর মিছিল ও দলীয় কার্যালয়ে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়েছে। তাঁরা এখন নির্বাচনী কার্যক্রম চালাতে ভয় পাচ্ছেন।

যদিও নির্বাচনী প্রচার শুরু হওয়ার প্রথম দিনই সহিংসতায় আওয়ামী লীগের দুই সদস্য নিহত হন।


শেখ হাসিনা আশা করছেন, ১০ কোটি ভোটার সহিংসতাকে ঘৃণা করে দেশের অভূতপূর্ব অর্থনৈতিক উন্নতির দিকে গুরুত্ব দেবেন। এর মধ্যে ২০০৯ সাল থেকে মাথাপিছু আয় তিনগুণ বেড়ে যাওয়া ও গত এক দশকে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি ৬ শতাংশের বেশি হওয়ার বিষয় রয়েছে। এই প্রবৃদ্ধির বেশিরভাগই এসেছে দেশের ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের গার্মেন্টস খাত থেকে, যেখানে ৪৫ লাখ মানুষ কাজ করেন। এ খাতে নারীদের অংশগ্রহণ দ্বিগুণ বেড়েছে। মাতৃ ও শিশুস্বাস্থ্যের সুবিধা বাড়ায় গড় আয়ু ৭২ বছর হয়েছে, যা ভারত ও পাকিস্তানের চেয়ে বেশি।

ইতিবাচক হিসাবনিকাশ দেখালেও এ বছরেই রাজধানী ঢাকা দুইবার অচল করে দিয়েছিল আন্দোলনকারীরা, যা কয়েকজন বিশ্লেষকের দৃষ্টিতে ব্যাপক অস্থিরতাকে তুলে ধরে।


বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউট (বিএই) নামের গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলেছে, বিশ্বের অতি ধনী ব্যক্তিদের তালিকায় উঠে আসার হার বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি। এর মানে হচ্ছে নিম্ন আয়ের মানুষেরা সুবিধা পাচ্ছেন না।

বিএই দাবি করছে, গত আগস্ট মানে নিরাপদ সড়ক চাই আন্দোলন নিষ্পত্তিমূলক সিদ্ধান্তের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছিল। আইনশৃঙ্খলার নামে জননিরাপত্তার বিষয়গুলোকে প্রধান্য দিয়েছে গার্ডিয়ান।

মানবাধিকার সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, শত শত মানুষকে জোর করে তুলে নেওয়া হয়েছে বা গোপন জেলখানায় জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ ছাড়া মাদক ব্যবসার অভিযোগে ৪৫০ জন পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত হয়েছেন।

নির্বাচনের আগে ভুয়া প্রচার ঠেকানোর প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে কয়েকবার ইন্টারনেট সেবা সীমিত করেছে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের (বিটিআরিসি) এক কর্মকর্তা বলেন, দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবার গতি কমানো হয়। কয়েক ঘণ্টার জন্য থ্রি-জি ও ফোর-জি সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।

বার্তা সংস্থা এএফপিকে নাম প্রকাশ না করে বিটিআরসির এক কর্মকর্তা বলেছেন, টেলিকম অপারেটরদের বৃহস্পতিবার রাতে থ্রি-জি ও ফোর-জি সেবা বন্ধে নির্দেশ দেওয়া হয়। ভুয়া প্রচার রোধ ও ইন্টারনেটে বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট ছড়ানো রোধে এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অবশ্য ১০ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকালে ইন্টারনেটের গতি স্বাভাবিক করা হয়।

২০১৪ সালে আওয়ামী লীগের অধীনে পাতানো নির্বাচনের অভিযোগ তুলে নির্বাচনে যেতে অস্বীকৃতি জানায় খালেদা জিয়ার দল বিএনপি। ফলে বিদায়ী সংসদে তাদের কোনো প্রতিনিধি নেই। দুর্নীতির দায়ে খালেদা জিয়ার সাজা হয়েছে। তাঁর ছেলে তারেক রহমানের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনাকে হত্যা ষড়যন্ত্রের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি এখন লন্ডনে থাকছেন।

শেখ হাসিনার সরকার প্রধান বিরোধীদের বিরুদ্ধে ৩ লাখ মামলা করেছে এবং নির্বাচনে তাদের দৌড়ের ওপর রেখেছে। শত শত নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তারও করেছে।

চলতি সপ্তাহে ফেসবুক বার্তা সংস্থা এপিকে বলেছে, ১৫টি পেজ বন্ধ করে দিয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে ঘিরে মিথ্যা ও বিভ্রান্তিমূলক তথ্য ছড়ানোর অভিযোগে এ পেজগুলো বন্ধ করা হয়। সেগুলোতে বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের পক্ষে এবং বিরোধীদের বিপক্ষে ভুয়া তথ্য ছড়ানো হচ্ছিল।

অন্য জনপ্রিয় সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম টুইটার জানিয়েছে বাংলাদেশে ১৫টি এমন অ্যাকাউন্ট খুঁজে পাওয়া গেছে যে অ্যাকাউন্টগুলো থেকে ভুয়া খবর ছড়ানো হচ্ছে। 

ফিচার বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর