ঢাকা, ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ৫ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৭৭৩

ঘুরে আসতে পারেন কাশ্মির-সাংলা-ছিটকুল-কল্পা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৫:০৬ ১০ ডিসেম্বর ২০১৯  

সাংলা-আজাদ কাশ্মীর-ছিটকুল-কল্পা। হিমাচলের অনন্যসুন্দর উপত্যকায় পা রাখলে মনে হবে, প্রকৃতির যাবতীয় রূপ যেন এখানেই। রুক্ষ পাহাড়ের গায়ে ঝুলে থাকা পাথর আর তারই বুক চিরে চলে গিয়েছে ভয়ঙ্কর সুন্দর রাস্তা।
 

সাংলা


হিমাচলের অসামান্য সুন্দর পাহাড়ে ঘেরা উপত্যকা। কিন্নর জেলার এই উপত্যকাকে অনেকে বসপা বলেন। কিন্তু, পর্যটকদের কাছে সাংলা নামেই পরিচিত। রুক্ষ পাহাড়ের গায়ে ঝুলে থাকা পাথর আর তারই বুক চিরে চলে গিয়েছে ভয়ঙ্কর সুন্দর রাস্তা। ডান দিকে বয়ে চলেছে বসপা নদী। এই পথের শেষে নীল আকাশের নীচে তুষারশুভ্র পাহাড়ের কোলে সাংলা উপত্যকার বিস্তার। সারাদিন বরফে মোড়া শৃঙ্গে অবিরাম রংবদলের খেলা চলে। ৮৭০০ ফুট উচ্চতায় সাংলা শীতে বরফের চাদরে মুড়ে থাকে।

আবার জুলাই-অগস্টে গ্রামের প্রতিটি বাড়ির বাগানে লাল আপেল আর গোল্ডেন আপেলের বাহার। সাংলার প্রায় এক কিমি ওপরেই বুশাহার রাজাদের প্রাচীন দুর্গ কামরু। মাঝে পড়বে কামরু মনাস্টি। এর পর কামরু দুর্গ। তবে দুর্গের অন্দরমহলে সাধারণের প্রবেশাধিকার নেই। এখানে দেবী কামাখ্যার মন্দির রয়েছে। মন্দিরে চামড়ার জিনিস, মোবাইল নিয়ে প্রবেশ নিষেধ। এখান থেকে চারপাশের প্রাকৃতিক দৃশ্যাবলী আর সাংলা উপত্যকাকে দেখতে অসাধারণ লাগে। বসপা নদীর ধারে রেনবো ও ব্রাউন ট্রাউট ফিশিং-এর খ্যাতি আছে।


 

আজাদ কাশ্মীর

কিন্নরে কাশ্মীর? তা-ও আজাদ কাশ্মীর! হ্যাঁ, শুনতে অবাক লাগলেও সত্যি। বসপা নদীকে সঙ্গী করে চলে আসুন তিন কিমি দূরে। গাড়ির রাস্তা শেষ। সামান্য হেঁটেই খানিক নীচের দিকে নামলেই বসপা নদীর এক বহতা দেখা দেবে। ছোট্ট সাঁকো পেরিয়ে চলে আসুন। স্বাগত জানাবে পাইনের সারি। এটাই আজাদ কাশ্মীর গ্রাম। ছোট ছোট গ্রামের বাড়িঘর। প্রতিটি বাড়ির আঙিনায় রয়েছে আপেলের গাছ। দূরের সাংলাকে এখান থেকে অসাধারণ লাগে। আসলে রাস্তা তৈরির কাজের খোঁজে একদল শ্রমিক এসেছিলেন সাংলায়। তাঁদের সঙ্গে স্থানীয় বাসিন্দাদের একটা দূরত্ব তৈরি হয়। ফলে তাঁরা বসপা নদীর এ পারে এসে বসবাস শুরু করেন। তাঁরা এই জায়গার নাম রাখেন আজাদ কাশ্মীর। সাংলার অল্পচেনা আজাদ কাশ্মীর অবশ্যই দেখে নেবেন। সাংলার ট্রাউট মাছের বেশ সুনাম আছে। আজাদ কাশ্মীর গ্রাম পেরিয়ে সরকারি ব্যবস্থাপনায় বসপার জলে পুষ্ট, তাজা রেনবো ট্রাউট কিনে নিতে পারেন।


 

কীভাবে যাবেন

সারাহান থেকে জিওরি, করছাম হয়ে সাংলার দূরত্ব ৯৫ কিমি। শিমলা থেকে ২৩৫ কিমি। বাস আসছে। গাড়িভাড়া করেও চলে আসা যায়।

 

কোথায় থাকবেন

সাংলায় থাকার কোনও সরকারি হোটেল নেই। বেসরকারি হোটেলের মধ্যে রয়েছে দেবভূমি রিজেন্সি (০৯৪৩৩১-২০৯৯৭), ভাড়া ১৫০০-২৫০০ টাকা। হোটেল সূর্যবংশী (০৯৮৭৪৩৭৩৩৮০), ভাড়া ১২০০-১৮০০ টাকা। লেকভিউ রিসর্ট (০৮৬৯৭৭৪৭৬৩২), ভাড়া ১৭০০-২২০০ টাকা। বসপা গেস্টহাউস (০১৭৮৬-২৪২২০৬) ভাড়া ১০০০-১৪০০ টাকা। মাউন্ট কৈলাস (২৪২৫২৭) ভাড়া ১৩০০-১৮০০ টাকা। সাংলা রিসর্ট (২৪২৪০১) ভাড়া ১৫০০-১৯০০ টাকা। হোটেল মেহেক (০৯০০৭৮৮৪৪২৫) ভাড়া ১৫০০-২৪০০ টাকা। সাংলার এসটিডি কোড: ০১৭৮৬। মরসুম অনুযায়ী প্রতিটি হোটেলের ভাড়া বাড়ে-কমে।

 

ছিটকুল

সাংলা থেকে বসপা নদীর পাকদণ্ডী বেয়ে চলে আসা যায় । পথের দু’পাশে অফুরান সৌন্দর্যের ভাণ্ডার। মাঝে পড়বে ছোট্ট এক জনপদ। রকছাম। পাহাড়, নদী আর নীল আকাশের উদারতা। পাইন, দেওদার তো আছেই। খুব কাছেই নিষিদ্ধ দেশ চিন অধিকৃত তিব্বত সীমান্ত। এক বেগবান সুন্দরী নদী বয়ে এসেছে। বসপা। এ নদী বয়ে এসেছে সুদূর তিব্বত ছুঁয়ে। নদীর ধার ঘেঁষে সবুজ ঘাসে ছেয়ে থাকে রংবেরঙের ছোট্ট ছোট্ট ফুল। যেন ঈশ্বরের সাজানো উপত্যকা। শীতে গোটা উপত্যকা বরফের চাদরে ঢেকে থাকে। ঠিক যেন বরফের বাগান।

 

দেখে নিন

পাহাড়ের ঢালে পাইন, ওক আর দেওদারের আসবুজ বন্ধন। সাংলা থেকে সকাল সকাল বেরিয়ে পড়ুন। আঁকাবাঁকা পথ। মূল উপত্যকায় হাতে গোনা কিছু পরিবারের বসবাস। প্রতিটি পথের বাঁকে প্রকৃতির দৃশ্যপটের বদল। পথের সঙ্গী বসপা নদী। প্রায় ১৭ কিমি আসার পর এক মনোরম গ্রামের দেখা মিলবে। গ্রামের নাম— রকছাম।

শীতে এই গ্রাম বরফে মুড়ে থাকে। এখান থেকে ডান দিকের রাস্তা ধরে নেমে গেলেই সেতু পেরিয়ে বরফের মুকুট পড়া পর্বতমালার স্তর, বসপা নদী আর উপত্যকার উচ্ছ্বাস। ৩১৫০ মিটার উচ্চতায় এক অনাঘ্রাত সৌন্দর্য। রকছাম থেকে আরও এগিয়ে গেলেই রূপকথার রাজ্যে পৌঁছে যাওয়া যায়। ভারতের শেষ গ্রাম। ৩৪৫০ মিটার উচ্চতার এই গ্রামের নাম ছিটকুল।

 

সামনেই খরস্রোতা বসপা নদীর ধারে বেশ কিছু গ্রাম। শীতে পুরু বরফের আস্তরণে ঢেকে যায় এই ছোট্ট গ্রাম। অন্য সময় হিমেল আবহে মুড়ে থাকা এক নির্জন অনাবিল সৌন্দর্যের সেরা ঠিকানা। গ্রামের চিত্রলেখামাতা মন্দির, শিবমন্দির ও ৫০০ বছরে প্রাচীন দুর্গটি দেখতে ভুলবেন না। ছিটকুল থেকে মাত্র ৩০ কিমি দূরে চিন অধিকৃত তিব্বত সীমান্ত।

কী ভাবে যাবেন:

সাংলা থেকে ছিটকুল গাড়িতে চলে আসা যায়। দূরত্ব ২৭ কিমি।

 

কোথায় থাকবেন

ছিটকুলে থাকার সরকারি কোনও হোটেল নেই। বেসরকারি হোটেলই ভরসা।  রয়েছে আইবাক্স ক্যাম্প (০৩৩-৪০৬৬০২৩৪) ভাড়া ২৫০০ টাকা। বসপা নদীর ধারে রয়েছে যাযাবর ক্যাম্প রিসর্ট (০৯৪৩৩১২০৯৯৭) ভাড়া ১৮০০-২৫০০ টাকা। হোটেল অ্যালপাইন ভিউ (০৯৮১৬৪০৪৭৯৩) ভাড়া ১০০০-১২০০ টাকা। শাহেনশা রিসর্ট (০৯৪৩৩৪৮৩৪১১) ভাড়া ১৫০০-২০০০ টাকা। ছিটকুল-কিন্নর ক্যাম্প (৯৮০৫৪৭৮৩২৪), রকছাম— হোটেল অ্যাপল পাই, (৮৮৬০৮৬৮৪৯৬)। ভাড়া ১২০০-১৮০০ টাকা।

 

কল্পা

সাংলা থেকে এ বারের গন্তব্য হিমাচলের আরও এক কল্পলোক— কল্পা। এখানে এলে মনে হবে, প্রকৃতি তার আপন খেয়ালে প্রতি মুহূর্তে ছবি এঁকে চলেছে কল্পার ক্যানভাসে। পবিত্র কিন্নর-কৈলাস পর্বতমালার ঘেরাটোপে অতীতের ‘চিনি’, আজকের কল্পা।

 

দেখে নিন

শীতে প্রবল তুষারপাতে ঢেকে যায় কল্পা। সাংলা থেকে করছাম হয়ে আসতে হয়। ঢুকতেই দেখা মিলবে কিন্নর জেলার সদর শহর রেকংপিও। জ্যামজমাট আর ভিড়ে ঠাসা। সদর শহর বলে কথা। ছোট্ট শহরের মাথার উপর বরফমোড়া শৃঙ্গরাজদের ক্যানভাস। আঁকাবাঁকা পাহাড়ি পথের দু’পাশে পাইনের আতিশয্য। তারই ফাঁকে পবিত্র কৈলাস শৃঙ্গের হাসিমাখা মুখ।

কল্পা বাজারের কাছেই সুন্দর গোম্ফা হু-বু-লাংকার দেখে নিন। কল্পার ঠিক নীচেই চিনি গ্রাম। কাঠ, পাথরের সুন্দর ঘরবাড়ি আর সামদুব চোলিং বৌদ্ধগোম্ফা আর নারায়ণ-নাগিন মন্দির। এই গ্রামের আতিথেয়তা মুগ্ধ করবে। কল্পার গোল্ডেন আপেলের খ্যাতি জগৎজোড়া। তবে অনুমতি ছাড়া আপেল গাছে হাত দিলে জরিমানা করা হয়। শুধু কল্পায় নয়, এমন রীতি চালু আছে গোটা হিমাচলে।

 

কল্পাকে দেখতে হলে হাতে অন্তত দু’দিন সময় রাখা উচিত। এখান থেকে ১০ কিমি দূরে পাঙ্গি ঘুরে আসতে পারেন। আপেল বাগিচার জন্য বিখ্যাত। অপরূপ শোভায় ভরা পাঙ্গির প্রাকৃতিক দৃশ্য অনেক দিন মনের ফ্রেমে থেকে যায়। এখান থেকে ৭ কিমি দূরে ইকো পয়েন্ট আর সুইসাইড পয়েন্ট দেখে চলে আসুন অল্পচেনা রোখি গ্রামে। চারদিকের তুষারধবল শৃঙ্গ ঘেরা রোখি-র রূপ অসাধারণ।

 

কেনাকাটা

এখানে বাজার বলতে রেকংপিও-তে আসতে হয়। এখানে নানা রেস্তরাঁ, জুতো, শীতের নানান সামগ্রী কিনতে পারেন।

কী ভাবে যাবেন: সাংলা থেকে কল্পার দূরত্ব ৫২ কিমি। করছাম হয়ে আসতে হয়। রেকংপিও থেকে মাত্র ১১ কিমি। শিমলা থেকে দূরত্ব ২৫২ কিমি। সরাসরি বাসেও চলে আসতে পারেন। তবে গাড়ি করে আসাটা সবচেয়ে ভাল।

কোথায় থাকবেন

কল্পায় থাকার জন্য রয়েছে হিমাচল পর্যটন দফতরের হোটেল দ্য কিন্নর-কৈলাস (০১৭৮৬-২২৬১৫৯) ভাড়া ২২০০-৬০০০ টাকা। দ্য কৈলাস কটেজ (০১৭৮৬-২২৬১৫৯) ভাড়া ১৯০০-২৫০০ টাকা। সান এন স্নো (০১৭৮৬-২২৬১৫৯) ভাড়া ১১০০-১১৫০ টাকা। বেসরকারি হোটেল কৈলাস ভিউ (০৯৪৩৩১-২০৯৯৭) ভাড়া ১৮০০-২৮০০ টাকা। হোটেল শীতল (০৮৫৮৪৮৫২৭০৮) ভাড়া ১৬০০-২০০০ টাকা।