ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
২৯৮

চীনফেরত শিক্ষার্থী নিয়ে রংপুর মেডিকেলে তোলপাড়

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:১৩ ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২০  

চীনফেরত এক শিক্ষার্থী রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। এরপর সেখানে তোলপাড় চলছে। শ্বাসকষ্ট ও বুকব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হন তিনি। তাকে হাসপাতালের নবগঠিত করোনা ইউনিটের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।
ওই শিক্ষার্থীর জ্বর, সর্দি, কাশির মতো ভাইরাসজনিত সাধারণ উপসর্গ নেই। তবু মেডিকেল কর্তৃপক্ষ তাকে নিয়ে একের পর এক বৈঠক করছে। তারা ঢাকায় রোগতত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনিস্টিটিউটকে ( আইইডিসিআর) খবর দিয়েছেন। আইইডিসিআর শনিবারই রংপুরে প্রতিনিধি পাঠিয়ে ছাত্রটির রক্ত, লালা আর ঘামের নমুনা সংগ্রহ করেছেন। পরীক্ষার জন্য ঢাকায় আনা হয়েছে।
আইইডিসিআর-এর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলছেন, শিক্ষার্থীর শারিরীক অবস্থা এখন ভালো আছে। পরীক্ষার ফলাফল এখনো পাওয়া যায়নি। তবে তার করোনা ভাইরাস হয়েছে সন্দেহে এরই মধ্যে একধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
অনেকেই শিক্ষার্থীটির ব্যাপারে খোঁজ নিতে হাসপাতালের আশপাশে এসে ভিড় জমাচ্ছেন। টেলিভিশনে প্রচারিত ভিডিওতে দেখা গেছে, করোনা ইউনিটের সামনে শহরের সব সাংবাদিকেরা এসে ভিড় জমিয়েছেন। রমেক চিকিৎসকদের দেখা গেছে, জীবানু প্রতিরোধী বিশেষ পোশাক, মুখোশ, চশমা আর দস্তানা পরে কাজ করছেন। তারা বলছেন, ওই শিক্ষার্থীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও চিকিৎসায় সর্বোচ্চ সাবধানতা অবলম্বন করা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সম্প্রতি রংপুর মেডিকেল কলেজে করোনা ইউনিট খোলা হয়। হাসপাতালের একটি ওয়ার্ডের দুটি বেডকে আলাদা করে এ ইউনিট বানানো হয়েছে। সেখানে কাজ করার জন্য চার সদস্যের বিশেষ চিকিৎসক দলও গঠন করা হয়েছে।  রোববার সকালে ছাত্রটির চিকিৎসায় মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষ ১২ সদস্যের বোর্ড গঠন করেছে বলে কর্মকর্তারা জানাচ্ছেন।
মেডিকেল বোর্ড হেড হলেন রমেক হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের প্রধান অধ্যাপক দেবেন্দ্র নাথ সরকার।  তিনি বলেন, রোগীর শরীরে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনও লক্ষণ নেই। তবে এক ধরনের আতংক সৃষ্টি হয়েছে হাসপাতালের রোগী থেকে সবার মধ্যে।
অধ্যাপক দেবেন্দ্র নাথ সরকার বলেন, সাবধানতা হিসেবে সব ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু তার শরীরে আমরা এখন পর্যন্ত করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার কোনও লক্ষণ পাইনি। এর মধ্যে আইইডিসিআর গতকাল ঢাকা থেকে এসে ওর রক্ত, লালা আর ঘামের নমুনা নিয়ে গেছে। তারা আগামী দুই দিনের মধ্যে (মঙ্গলবার) রিপোর্ট দেবে। সেটা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে এখনো উদ্বেগের কিছু দেখছি না আমরা।
তিনি বলেন, শ্বাসকষ্ট নিয়ে শনিবার দুপুরে হাসপাতালে ভর্তি হন ওই শিক্ষার্থী। এরপর তাকে হাসপাতালের করোনা ইউনিটে আইসোলেশন ওয়ার্ডে নেয়া হয়। ২৯ জানুয়ারি চীন থেকে ফেরেন উনি। দেশটিকে একদফা এবং ঢাকায় বিমানবন্দরে আরেকদফা স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয় তার। এরপর নীলফামারীতে নিজ বাড়িতে ফেরেন ওই শিক্ষার্থী। চীন থেকে ফেরার আট দিন পর তার শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। শ্বাসকষ্ট শুরুর তিন দিন পর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
ছাত্রটির বাবা বলেন, শ্বাসকষ্ট শুরু হওয়ার পরও আমি ছেলেকে হাসাপাতালে নিইনি। কারণ তার আশঙ্কা ছিল এতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়তে পারে অন্যদের মধ্যে। একপর্যায়ে ছেলে বলে, আমি মারা যাওয়ার পরে হাসপাতালে নেবে আমাকে? তখন নীলফামারির সিভিল সার্জনের সঙ্গে পরামর্শ করে তাকে রংপুর মেডিকেলে ভর্তি করি।
বিভিন্নভাবে ছাত্রটির পরিচয় প্রকাশ হয়ে পড়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন আইইডিসিআর পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা। তিনি করোনা ভাইরাস নিয়ে প্রতিদিনের সংবাদ সম্মেলনে রোগির ব্যক্তিগত তথ্যের গোপনীয়তার কথা উল্লেখ করে। বলেন, সন্দেহজনক বা পরীক্ষাধীন এমন ব্যক্তির গোপনীয়তা বজায় রাখা প্রয়োজন। তা না হলে ভবিষ্যতে রোগী সামাজিকভাবে হেয় প্রতিপন্ন হতে পারে। আমরা তাকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেছি। তার ফলাফল এলে আমরা জানিয়ে দেব।

বাংলাদেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর