ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০
good-food
১১৩০

দৃষ্টি সীমাহীন

স্বপন ধর

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৩:০৭ ১৯ মার্চ ২০১৯  

প্রাত্যহিক ধারাবাহিকতায় রাতে শহরের রাস্তায় পাশাপাশি হাঁটছে নীরব-আঁখি দম্পতি। অন্ধকার তেমন একটা জেকে বসতে পারেনি, কারণ পূর্ণিমার বাকী আছে আর মাত্র দিন তিনেকের। সাধারনত যেটা হয়, হাটার সময়ে আঁখিই বেশিরভাগ সময় কথা বলে। আর কথা বলাতে বিষয়ের কোন ঘাটতি আজ পর্যন্ত তার কখনই হয়নি।

আচ্ছা নীরব, তুমি কি নদী দেখেছো?

- হ্যাঁ আঁখি, দেখেছি তো, অসংখ্য বার দেখেছি।

আচ্ছা কেমন লাগে তোমার, নদীর কাছে গেলে?

- কেমন আবার, ভালোই তো লাগে।

শুধুই ভালো লাগে, বলোনা কেন ভালো লাগে?

- আহ্, বললাম তো ভালো লাগে।

না বলছিলাম, দেখার পাশাপাশি তোমার মনে কোন ভাবনার উদ্রেক হয় না?

- না, আমার এসব হয় না। আচ্ছা তুমিও তো আমার সাথে কয়েকবার গিয়েছো, আর প্রতিবারই তোমাকে এক পর্যায়ে আনমনা হয়ে যেতে দেখেছি, কেনো বলো তো?

আমি তোমার মতো শুধু ভাসমান নদীকেই দেখিনা, আমি যে আরো অনেক কিছুই দেখি।

- তা, তুমি আর কি কি দেখো শুনি।

বলতে পারি, কিন্তু তোমার শুনতে ভালো লাগবে কিনা সেটাই ভাবছি।

- না লাগলেও, তুমি বলো, আমি শুনছি।

এই ধরো নদীটি কোন পাহাড়ের ঝরনা ধারা থেকে কতো শত জায়গা পাড়ি দিয়ে এই পর্যন্ত এসেছে এবং আরো কতো শত জায়গা পাড়ি দিয়ে সাগরে গিয়ে মিশবে। একটা সময়ে এই নদীকে ঘিরেই মানুষের সভ্যতা সংস্কৃতি গড়ে উঠেছিল। দূর যাত্রার জন্য পানিপথে নৌকাই ছিলো তখন একমাত্র ভরসা। নদীর পাশেই হাট বাজার বসতো, কখনও কখনও মেলাও হতো। কতো শত মানুষের রুটি রুজি বাঁধা থাকতো ঘাটে নৌকার মতো। অসংখ্য মানুষের আনাগোনায় মুখর থাকতো সময়গুলো। আমি এখনও সেসব মুখর আওয়াজ শোনার চেষ্টা করি। কবিগান, যাত্রা, বাউল, জারী-সারী গান হতো একসময় এই নদীর পাড়েই তো, যা আমি কান পেতে এখনো শোনার চেষ্টা করি। আবার এই নদী তার পাড় ভাঙ্গার মাধ্যমে কত মানুষকে নিঃস্ব গৃহহীন করেছে। আমি সেই সব অসহায় মানুষের কান্না শুনতে পাই যেন। এই নদীই আবার তার বুকে চর জাগিয়েছে বা অন্য পাড়ে পলি জমিয়ে কারো কারো জমি বাড়িয়ে দিয়েছে। আমি তাদের স্বপ্ন, আশা আর হাসির বুনন দেখতে পাই। এই নদীতে মাছ ধরে কতো পরিবার গড়েছে সুখের সংসার। সেই সুখ আমাকেও যেন আন্দোলিত করে। নদীর বহতা জলের মধ্যে আমি বহমান সময়কেই যেন ধরার চেষ্টা করি। আর তাই কেমন যেন এক ধরনের শূণ্যতা আমার ভিতর ভর করে নদীর কাছে গেলে। যদিও সেই শূন্যতার ভেতরে পুরোপুরি ডুবে যেতে পারিনা, তুমি আছো বলেই হয়তো। এই তুমি শুনছো তো?

- হ্যাঁ, শুনছি তো।

আঁখি' কথা বলা শেষ হয়েছে, নীরব আর কথা বাড়াতে চাইলো না, বললো - চলো এখন বাসার দিকে ফেরা যাক।

নীরব আঁখি' হাতটা ধরে হাঁটছে আর মনে মনে ভাবছে ‘‘আমার যা কিছু দেখা সে তো শুধুই চোখেরই দেখা। সে দেখা তো অসম্পূর্ণ। পক্ষান্তরে আঁখি' যে দেখা সেটা চোখের সাথে মনের সমন্বয়ে দেখা, যা সম্পূর্ণ আর একই সাথে পরিপূর্ণ। এভাবে দেখতে গেলে যে অন্তর্দৃষ্টি লাগে সেটা আমার নেই।"