ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৪৮০

নারীর স্বাস্থ্যঝুঁকি বাড়াবে করোনা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:২১ ৯ জুন ২০২০  

গোটা বিশ্বই এখন করোনাময়। সব শ্রেণি-পেশার মানুষ যেখানে এক হয়ে গেছেন। হালের সবচেয়ে ক্ষমতাসীন রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র থেকে দুর্বল ভুটান পর্যন্ত এ ভাইরাসে কুপোকাত।যা মানুষ কোনও দিন কল্পনাও করেনি বা করতে পারেনি। 

বর্তমান বিশ্বের নবাগত পরাশক্তি চীনের হুবেই প্রদেশের উহান শহর থেকে ছড়িয়ে পড়া করোনার কারণে পুরো বিশ্বই এখন বিপর্যস্ত। বিশ্বজুড়ে চলছে এ মহামারি। প্রাণঘাতি এ ভাইরাস থেকে বাঁচতে দেশে-দেশে চলছে লকডাউন, কারফিউ। বিশ্ব এত বড় বিপর্যয় এর আগে কখনো দেখেনি। 

করোনার বিস্তারে বিশ্ব অর্থনীতিতে নেমে এসেছে বিপর্যয়। বিশ্বের প্রায় প্রতিটি দেশের অর্থনৈতিক খাতগুলো মুখ থুবড়ে পড়েছে। ঘরবন্দি হওয়ায় কর্মহীন হয়ে পড়েছেন মানুষ। এ পরিস্থিতিতে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়বে। ঝুঁকিতে পড়বে নারী ও মেয়ে শিশুর প্রজনন স্বাস্থ্য।

জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) এক বৈশ্বিক প্রতিবেদনে এ আশংকার কথা বলা হয়েছে। সম্প্রতি নিউইয়র্ক থেকে ‘ইমপ্যাক্ট অব দ্য কোভিড-১৯ পেনডেমিক অন ফ্যামিলি প্লানিং এন্ড এন্ডিং জেন্ডার বেসড ভায়োলেন্স ফিমেল জেনিটাল মিউটিলেশন এন্ড চাইল্ড ম্যারেজ’ শীর্ষক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

তাতে বলা হয়, কোভিড-১৯ এর কারণে নিম্ন মধ্যম আয়ের ১১৪টি দেশে প্রায় ৪ কোটি ৭০ লাখ নারী আধুনিক পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি ব্যবহার করতে পারবেন না।  ফলে অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ, অনিরাপদ গর্ভপাতের হার বাড়বে। ধারণা করা হচ্ছে, মারণঘাতী ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে বিভিন্ন দেশে বিদ্যমান লকডাউন ৬ মাস অব্যাহত থাকলে বিশ্বে অতিরিক্ত ৭০ লাখ অপ্রত্যাশিত গর্ভধারণ এবং অতিরিক্ত ৩ কোটি ১০ লাখ সহিংসতার ঘটনা ঘটবে।

ইউএনএফপিএর পর্যালোচনা মতে, বর্তমান পরিস্থিতিতে বিভিন্ন দেশে পরিবার পরিকল্পনার চাহিদা পূরণে বাধা, স্বাস্থ্যকর্মীদের সংকট বা স্বাস্থ্যকেন্দ্র বন্ধ হয়ে যাওয়ার কারণে যথাযথ সেবাদানে বিঘ্ন ঘটতে পারে। অন্যদিকে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে সেবা নিতে যাওয়া নারীর সংখ্যাও কমে যাচ্ছে। 
ইউএনএফপিএর হেল্থ সিস্টেম স্পেশালিস্ট দেওয়ান মো. ইমদাদুল হক বলেন, বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে মোট জনসংখ্যার ২৫ শতাংশ প্রজননক্ষম (১৫-৪৯ বছর) জনসংখ্যা। এ জনসংখ্যার মধ্যে গর্ভধারণ করে ১৫ শতাংশ। এদের মধ্যে গর্ভকালীন জটিলতায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে সন্তান জন্ম দিতে হয় ৫ থেকে ১৫ শতাংশকে। তবে দেশের এ পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে গর্ভকালীন, প্রসবকালীন ও প্রসব পরবর্তী সেবা নেয়ার হার কমবে। মায়েরা সংক্রমিত হওয়ার ভয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রে যেতে চাইবেন না। আবার যে নারী কোভিড-১৯ আক্রান্ত, তাকে সেবা দেয়া নিয়েও জটিলতা দেখা দিচ্ছে।

করোনা বিস্তারের ফলে বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতা এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়েছে কি না তা নিয়ে এখন পর্যন্ত তেমন কোনও গবেষণা হয়নি। ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালত সূত্র থেকে পাওয়া তথ্য অনুসারে, ঢাকা মহানগর এলাকায় গত ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল ১০ দিনে ধর্ষণ, যৌতুকের দাবিতে নির্যাতন, যৌন নিপীড়ন ও অপহরণের ২৮টি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ৯টি ধর্ষণের, ৮টি যৌতুকের জন্য নির্যাতন, ৫টি অপহরণ এবং ৬টি যৌন নির্যাতনের মামলা।

ব্র্যাকের নারী নির্যাতন প্রতিরোধ উদ্যেগের পরিচালক বলেন, এ অবস্থার মধ্যেও সমাজে নারী-পুরুষ,ধনী-দরিদ্র বৈষম্য চলছে। এ সময়ে বিশেষভাবে নারীর অবস্থা বুঝতে যে জরিপ চালানো হয়েছে, তাতে দেখা গেছে; মাস্ক ব্যবহারেও নারী সমঅধিকার পাচ্ছে না। ৭০ শতাংশ পুরুষ যেখানে মাস্ক ব্যবহার করছেন, সেখানে নারীর সংখ্যা ৩৫ শতাংশ। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৩২ শতাংশ বলেছেন, এ সময়ে পরিবার ও পাড়ায় নারীর ওপর সহিংসতা আরো বেড়েছে।

ইউএনএফপিএর প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাল্যবিবাহ বন্ধের পরিকল্পিত চেষ্টা ব্যাহত হবে। ওয়ার্ল্ড ভিশন বাংলাদেশের উপ-পরিচালক সাবিহা জামান বলেন, শিগগির মরণঘাতী এ ভাইরাস থেকে আমরা মুক্তি পাচ্ছি না। এখন পর্যন্ত যা অবস্থা তাতে বলতে গেলে করোনা মানবজাতির নিত্যসঙ্গী হয়ে গেছে। বদলে গেছে পৃথিবী। কোনোভাবেই পৃথিবী আর আগের মতো স্বাভাবিক হতে পারবে না। মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আসবেই। এ ভাইরাসটির বিস্তার থামলে কিংবা দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে সমাজে এর প্রভাব দৃশ্যমান হবেই। দেখা যাবে মেয়ে শিশুদের স্কুলে উপস্থিতি ছেলে শিশুর তুলনায় কমে গেছে। এরপর যেকোনও উপায়েই হোক মেয়ের বিয়ে দিয়ে দেয়ার চেষ্টা করা হয়। 
ওয়ার্ল্ড ভিশনের তথ্য অনুযায়ী, মার্চ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত দেশে ২১টি বাল্যবিবাহের ঘটনা ঘটেছে। পরিবার পরিকল্পনায়ও বিঘ্ন ঘটছে। অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভধারণ, গর্ভপাত প্রসঙ্গে জানতে চাইলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের এক পরিচালক বলেন, এখন স্বাস্থ্যকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সেবা দেয়ার কার্যক্রমে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। মানুষ অলস সময় কাটাচ্ছে বলে নারীদের গর্ভধারনের সংখ্যা বেড়ে যাওযার একটা সম্ভাবনা থাকে।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টিসেক্টরাল প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক আবুল হোসেন বলেন, বর্তমানে মানুষের কাজ নেই, হাতে টাকা পয়সা নেই, এমন অবস্থায় পারিবারিক নির্যাতন বাড়ার একটা আশংকা আছে।