ঢাকা, ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৮৮২

প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষার্থীকে যেভাবে ইউনিফর্মের টাকা দেয়া হবে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:০৩ ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯  

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেন জানিয়েছেন, সামনের বছর থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের স্কুল ইউনিফর্ম কেনার জন্য ২ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। গতকাল কুড়িগ্রামের শিক্ষার মান বিকাশের বিষয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি জানান, শিক্ষাবর্ষের শুরুতে যেমন নতুন বই দেয়া হয়, তেমনি আগামী বছরের শুরুর দিন প্রাথমিক বিদ্যালয় অর্থাৎ প্রথম থেকে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্কুল ড্রেসের জন্য ২ হাজার করে টাকা দেয়া হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের তথ্যমতে, বাংলাদেশে মোট সরকারি প্রাইমারি স্কুলের সংখ্যা ৬৩ হাজার ৬০১টি। যেখানে পড়াশোনা করছে ২ কোটি ১৯ লাখ ৩২ হাজার ৬৩৮ জন শিক্ষার্থী। প্রশ্ন উঠেছে, এ পরিমাণ স্কুলে এতো বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থীদের কাছে ইউনিফর্মের অর্থ পৌঁছানো হবে কিভাবে? এছাড়া সেই অর্থ দিয়ে শিক্ষার্থীদের ইউনিফর্ম কেনা হচ্ছে কি না- সেটাও বা তারা কিভাবে নিশ্চিত করবেন?
এ বিষয়ে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এফ এম মঞ্জুর কাদির জানান, পুরো প্রকল্পটি এখনও খসড়া পর্যায়ে আছে। প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে স্কুল ইউনিফর্ম বাবদ কি পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ দেয়া হবে সেটা এখনও নির্ধারণ করা হয়নি। তবে আগামী বছর থেকে এ প্রকল্প যেন বাস্তবায়ন করা যায় সে বিষয়ে বৈঠক চলছে। 
তিনি বলেন, সবকিছু চূড়ান্ত হলে প্রকল্প পরিকল্পনাটি একনেকে পাঠানো হবে। সেখানে প্রকল্পটি পাস হলে আগামী বছর থেকে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের এই সুবিধা দেয়া সম্ভব হবে। তবে যে পরিমাণ অর্থই বরাদ্দ হোক না কেন সেটা শিক্ষার্থীর হাতে বা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে দেয়া হবে না। বরং শিক্ষার্থীর মায়ের কাছে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পাঠানো হবে।
এ মহাপরিচালক বলেন, যদি আমরা স্কুল ড্রেসের জন্য অর্থ দেই এবং কত টাকা দেব, সেটা যদি নির্ধারিত হয়; তা হলে আমরা সেই টাকাটা শিক্ষার্থীর মায়ের অ্যাকাউন্টে রুপালি ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার মাধ্যমে পাঠাবো। এ টাকা শিশুর কাছে, এমনকি শিশুর বাবার কাছেও দেয়া হবে না। সরাসরি মা'কে দেয়া হবে। ঠিক যেভাবে প্রতিমাসে উপবৃত্তির টাকা দেয়া হয়, সেভাবে।
এ এফ এম মঞ্জুর কাদির বলেন, উপবৃত্তি প্রকল্পের আওতায় আগেই শিক্ষার্থীদের মায়েদের মোবাইলের সিম দেয়া হয়েছে এবং অ্যাকাউন্ট করে দেয়া হয়েছে। তাই এই টাকা কিভাবে পাঠানো হবে সেটা নিয়ে নতুন করে কিছু ভাবার নেই। শিশুর যদি মা' না থাকে, তা হলে এ অর্থ বাবাকে দেয়া হবে। যদি বাবা-মা কেউ না থাকেন, তা হলে শিশু যেই অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে থাকবেন তার কাছে এ অর্থ দেয়া হবে। লুটপাট-অনিয়মের আশঙ্কা থাকায় এ প্রকল্পে কোনও টেন্ডারের ব্যবস্থা নেই। 
সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ শিক্ষার্থীর ইউনিফর্ম বাবদ খরচ হবে কি না- এটা নিশ্চিত করার ব্যাপারে পরিষ্কার কিছু বলতে পারেননি তিনি। এ ব্যাপারে প্রতিটি স্কুলের প্রধান শিক্ষক, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর মায়েদের নির্দেশনা দেয়া থাকবে বলে জানান। এছাড়া স্কুল ইউনিফর্মটির নকশা কেমন হবে, সেটা প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতর ঠিক করে দেয়া হবে।
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক বলেন, একজন মা, তার সন্তানের সবচেয়ে ভালো চান। এখন তিনিই যদি, সন্তানের স্কুল ড্রেস কেনার টাকা অন্য কোথাও খরচ করেন। তখন পরিস্থিতি বুঝে আমরা সিদ্ধান্ত নেব যে কি করা যায়। এটা নিয়ে আমরা বেশি চিন্তিত না। যেসব স্কুলের এতদিন কোনও নির্ধারিত পোশাক ছিল না তাদের এই প্রকল্পের আওতায় নতুন স্কুল ড্রেসের জন্য টাকা দেয়া হবে।
তিনি বলেন, মূলত স্কুলের প্রতিটি শিক্ষার্থীর মধ্যে সমতা আনতে এবং বৈষম্য দূর করতে, সেইসঙ্গে স্কুলের প্রতি শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াতেই সরকার এ উদ্যোগ হাতে নেয়া হয়েছে। আমরা চাই শিশুরা যাতে আনন্দের সাথে স্কুলে লেখাপড়া করতে আসে। একটা নতুন ড্রেস তাদের সেই আনন্দটা দেবে। সব বাচ্চারা একইরকম ড্রেস পরবে। গরিবের বাচ্চা আর ধনীর বাচ্চার মধ্যে কোনও ব্যবধান না থাকবে না।
জাতীয় শিক্ষা নীতি ২০১০ এর প্রাইমারি শিক্ষা অধ্যায়ের ১৭ নম্বর ধারায় বলা হয়েছে যে এখনও প্রাথমিকের ৫০% শিক্ষার্থী পঞ্চম শ্রেণীতে উত্তীর্ণ হওয়ার আগেই ঝরে পড়ে। নতুন স্কুলের পোশাক শিশুদের মনে পরিবর্তন এনে এ ঝরে পড়ার হার অনেকটাই কমিয়ে আনবে বলে আশা করেন কাদির।
এদিকে সরকারের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন গণস্বাক্ষরতা অভিযানের পরিচালক ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। তার মতে, প্রান্তিক অঞ্চলের চরম দারিদ্র-পীড়িত শিশুদের স্কুলমুখী করার জন্য এটি একটি ভালো উদ্যোগ। কারণ পিছিয়ে পড়া ওই অঞ্চলগুলোয় শিশুদের স্কুলে যাওয়া না যাওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ পোশাক না থাকা। বিশেষ করে মেয়েদের জন্য এটা বড় সমস্যা।
এক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় অর্থায়নে এ বৃহত্তর পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অর্থের সুষম বিতরণ এবং বরাদ্দকৃত অর্থ ঠিকভাবে কাজে লাগানো হচ্ছে কি না- তা নিশ্চিত করতে সরকারকে নিয়মিত পর্যবেক্ষণ করতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তবে যে শর্তে টাকাটি দেয়া হচ্ছে সেটার সঠিক ব্যবহার আদৌ কিভাবে নিশ্চিত করা হবে সেটা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন রাশেদা কে চৌধুরী।
তিনি বলেন, এ টাকা শর্তসাপেক্ষে টাকা দেয়া হবে, যাকে বলে কন্ডিশনাল ট্যাক্স ট্রান্সফার। যেখানে কন্ডিশন আছে যে ইউনিফর্ম কিনবে। এ টাকা যেন অন্য কোনও খাতে খরচ না হয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে। কিন্তু গ্রামের একটা গরিব পরিবারের ক্ষেত্রে সেটা কিভাবে নিশ্চিত করবেন? এজন্য পুরো বিষয়টা মনিটর করতে হবে। যেন কোন দালাল এর সুযোগ না নেয়। এছাড়া তৃতীয় কোনও পক্ষ যেন সরকারি এ প্রকল্পের সুবিধা নিতে না পারে সেই ব্যাপারে আগেভাগেই ব্যবস্থা নেয়ার পরামর্শ দেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা।
তিনি বলেন, যখন সরকার টাকা দেবে, বলে দেবে যে স্কুলে ইউনিফর্ম পরে আসতে হবে; তখন দেখা যাবে স্কুল ড্রেসের ব্যবসা, টেইলারিং ব্যবসা গড়ে উঠছে। যারা এ প্রকল্পের নামে ফায়দা লুটতে চাইবে। এটা নজরে রাখা দরকার। তবে প্রাথমিক স্কুলে এ ইউনিফর্মের টাকা বরাদ্দের চাইতে দুপুরের জন্য গরম খাবারের ব্যবস্থা করা বেশি প্রয়োজন।