ঢাকা, ১৮ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ৫ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১০৩৪

বহুতল ভবনে আগুন, জীবন বাঁচাতে সহজ উপায়

এসকে মোহাম্মদ নূর নবী

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৩৪ ৪ এপ্রিল ২০১৯  

আমরা সাধারণ মানুষ। আমাদের চিন্তাভাবনাগুলোও অতি সাধারণ। এফআর টাওয়ার থেকে জীবন বাঁচাতে মানুষ যখন লাফ দিচ্ছে, তার বেয়ে নিচে নামার চেষ্টা করছে; তখন মনে হল নিচে লম্বা বড় কাপড় বা জাল টেনে ধরে থাকলে তো তাদের বাঁচানো যেত। পরে গুগল করে দেখলাম সত্যিই তো Fire Safety Net তো কিনতে পাওয়া যায়। যা দিয়ে সহজে হাজার হাজার উৎসুক জনতা অনেক মানুষকে রক্ষা করতে পারত।

তার বেয়ে নামার দৃশ্য দেখে চিন্তা এলো যদি ওপর থেকে মোটা রশি ফেলানো যেত অথবা এমন কিছু থাকত কাপড়ের মতো ওপর থেকে স্লাইড করে তারা নিচে নেমে আসবে। হ্যাঁ সত্যি এমন জিনিসও আছে। দক্ষিণ কোরিয়ার একটা কোম্পানি ঠিক এই জিনিস সারা পৃথিবীতে সরবরাহ করে। যার নাম Fire Escape Chute. স্পঞ্জ টাইপের মেটেরিয়ালে বিশেষভাবে তৈরি এই টানেল দিয়ে সহজে নিচে নেমে আসা সম্ভব। প্রতি তলায় একটা করে রাখলেই হয়ে যেত।

এবার আসুন কিছু বুদ্ধিজীবীতান্ত্রিক এবং আমলাতান্ত্রিক জটিল বয়ান শুনি। প্রতিটা আগুন দুর্ঘটনার পরপরই যা আমাদের শুনতে হয় -

১. ভবনের নকশায় রাজউকের অনুমোদন ছিল না। (ভাবখানা এমন যে এক সপ্তাহের ব্যবধানে এই বিশাল ভবন চুরি করে বানানো হয়েছে তাই রাজউকের নজরে আসেনি)।

২. ১৬ তলা পর্যন্ত অনুমোদন ছিল। কিন্তু বাকি ৬টা তলা অবৈধভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। (ব্যাপারটা এমন যে অনুমোদন থাকলে কিন্তু আগুন লাগত না)।

৩. ভবনে পর্যাপ্ত অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা ছিল না। (মনে হচ্ছে এমন যেন গত সপ্তাহ পর্যন্ত সব ঠিক ছিল। কিন্তু ঢাকা-চট্টগ্রাম রুটে প্রচণ্ড জ্যামের কারণে মেটেরিয়ালগুলো আটকা পড়ে আছে)।

৪. ভবনে ফায়ার হাইড্রেন্ট ছিল না। ফায়ার প্রটেকশন এন্ড ডিটেকশনের ব্যবস্থা ছিল না। স্পিং কলার সিস্টেম ছিল না। (জনাব এসবের কস্টিং সম্পর্কে ধারণা আছে?)।

৫. জরুরি নির্গমনের জন্য ইমার্জেন্সি ফায়ার এক্সিট ছিল না।(যেন সব ভবনে আছে শুধু এফআর টাওয়ারেই নাই)।

আসুন আমরা সমাধানের পথ খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। ভাবছেন এটা কম্পলিট একটা ইঞ্জিনিয়ারিং জব আমাদের দ্বারা কি করে সম্ভব? তাহলে আপনাকে বলি জ্ঞানীগুণী ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ারসহ শিক্ষিত সমাজ যখন এফআর টাওয়ারের সামনে ছবি তোলা বা ভিডিও করায় ব্যস্ত তখন একটা টোকাই ছেলে পানির হোজ পাইপের ছিদ্র বন্ধ করে পাইপের ওপর বসে ছিল। যে ছবি এখন ভাইরাল। দেখুন সমাধানের প্রস্তাবনাগুলোর সঙ্গে আপনার চিন্তাভাবনা মিলে কিনা-

১. রাজউকের অনুমোদনহীন ভবন ভেঙে ফেলা হবে। কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। হেন করা হবে তেন করা হবে..। ভাই থামেন। আপনি কোনো চুলই ফেলতে পারবেন না। এসব আজাইরা আলাপ বাদ দিয়ে যে ভবন যে অবস্থায় আছে তা নিরাপদ করার কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। বছরের পর বছর ধরে যখন ভবন নির্মাণ হয় তখন কি আপনারা আঙুল চুষছিলেন? অযথা ভয়ভীতি না ছড়িয়ে সবাইকে সচেতন করুন।

২. যে ভবনগুলোতে ফায়ার হাইড্রেন্ট নাই, ফায়ার ডিটেকশন প্রটেকশন সিস্টেম নাই, ইমার্জেন্সি এক্সিটের ব্যবস্থা নাই। এসব করার জন্য তাদের আর্থিক বা অবকাঠামোগত সামর্থ্যও নাই। সেই ভবনগুলোতে জরুরি ভিত্তিতে ইমার্জেন্সি এক্সিট বা বিকল্প সিঁড়ি বানানোর নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিন। যে ভবনগুলোতে ইমার্জেন্সি এক্সিট বা বিকল্প সিঁড়ি বানানোর কোনো সুযোগ নাই। সে ভবনে অবশ্যই Fire Escape Chute এবং Fire Safety Net জাতীয় জরুরি নিরাপদ নির্গমনে বিকল্প ব্যবস্থাগুলো নিশ্চিত করুন।

৩. বহুতল ভবনের আশপাশে রাস্তায় সরকারি খরচে ঢাকা ওয়াসার মাধ্যমে ফায়ার হাইড্রেন্ট স্থাপন করে পানির সোর্স নিশ্চিত করুন। যাতে অগ্নিনির্বাপণ করতে এসে ফায়ার সার্ভিসের ইউনিটগুলো সহজে তা ব্যবহার করতে পারে।

৪. সব বহুতল ভবনে নিয়মিত বিরতিতে ফায়ার ড্রিল নিশ্চিত করুন।

৫. বহুতল ভবন বা বানিজ্যিক ভবনগুলোতে এনার্জি অডিটের ব্যবস্থা করুন। Accord Alliance যেভাবে পোষাক কারখানাগুলোতে করেছিল ঠিক সেভাবে। অডিটরের পরামর্শ অনুযায়ী বৈদ্যুতিক সামগ্রীগুলো পরিবর্তন বা সংস্কার হয়েছে কিনা তা মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করুন।

৬. ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি এবং এম্বুলেন্স জরুরি প্রয়োজনে যেদিকেই যাবে সবাই রাস্তা ছেড়ে দিতে হবে। যদি সেখানে কোনো ভিআইপি থাকে তাকেও। এমন আইন প্রণয়ন করুন।

৭. ফায়ার সার্ভিসের সক্ষমতা বৃদ্ধি করুন। দেশের সর্বোচ্চ বহুতল ভবনের উচ্চতাকে বিবেচনায় নিয়ে ফায়ার সামগ্রী বিশেষ করে মইয়ের ব্যবস্থা করুন।

৮. ফায়ার সার্ভিস-সেনা-নৌ-বিমান বাহিনী সমন্বয়ে একটা বিশেষ রেসকিউ টিম গঠন করুন। জরুরি প্রয়োজনে অত্যন্ত দ্রুততম সময়ে তারা যেন ঘটনাস্থলে এসে কার্যক্রম শুরু করতে পারে।

লেখক: চাকরিজীবী, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান 

সিটিজেন জার্নালিজম বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর