ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১১ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১৭৭৭

বিশ্বকে তাক লাগিয়ে জয় ছিনিয়ে আনলো ক্ষুদে জিনিয়াসরা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:০৮ ৬ জানুয়ারি ২০১৯  

বিশ্বকে তাক লাগালো বাংলাদেশের ক্ষুদে জিনিয়াসরা। এই মেধাবীরা দেশে নিয়ে এলো অবাক করা সাফল্যের মুকুট। ইউসিমাস-এর উদ্যোগে ‘ইউসিমাস এ্যাবাকাস ও মেন্টাল এ্যারিথমেটিক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় তারা দেখিয়ে দিল লাল-সবুজ দেশের শিশুরা পারে বিশ্বজয় করতে। ইউসিমাস গেল ৯ ও ১০ ডিসেম্বর মালয়েশিয়ার ‘ইউনির্ভাসিটি তেনাঙ্গা ন্যাশনাল (ইউটেন) - এ আয়োজন করে ২৩তম ইউসিমাস আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। এবার এ প্রতিযোগিতায় বিশ্বের ৪১টি দেশ থেকে বিভিন্ন লেভেলে অংশ নেয় ৩ হাজারের বেশি ছাত্রছাত্রী।

ইউসিমাসের এই প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন লেভেল থেকে অংশ নেয় মোট ১২ জন ছাত্র-ছাত্রী। এই প্রতিযোগিতায় ক্ষুদে শিক্ষার্থীরা মাত্র ৮ মিনিটের মধ্যে ২০০ অংকের সমাধান করে। হাজার হাজার ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে বাংলাদেশ থেকে ১ম রানার আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে ২ জন। তারা হলো - এস.কে ইসতিয়াক আহমেদ ও ভিবেক দেবনাথ। দ্বিতীয় রানার আপ হয় ৩ জন - মেহেজাবিন রাইসা জান্নাত, বিরিশ দেবনাথ ও কে.এম. ইরফানুল আলম। তৃতীয় রানার আপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে ৬জন। এরা হলো - শেখ রাইয়ান আহমেদ, শেখ সুমাইয়া রহমান, জারিন তাহিয়া নওশিন, আহনাফ শাহারিয়ার, আবরার জামান ও চিরনতন সাহা।  এছাড়া মেরিট পুরষ্কার পায় ইবনুল আদিব।

এই ক্ষুদে ছাত্র-ছাত্রীরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে তীব্র প্রতিযোগিতা করে বাংলাদেশের মুখ উজ্জল করে। প্রতিযোগিতায় উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়া গ্লোবাল ইউসিমাস-এর প্রতিষ্ঠাতা প্রফেসর ড. ডিনো ওয়াং। বিশেষ অতিথি হিসেবে মালশিয়ার শিক্ষা ক্যারিকুলার উন্নয়ন পরিচালক এবং বিভিন্ন দেশের সম্মানিত রাষ্ট্রদূতসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিরা উপস্থিত ছিলেন। ইউসিমাস বাংলাদেশ লিঃ এর পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান ও ন্যাশনাল ফ্রানচাইজি মোঃ আহসান কবির এবং পরিচালক ও প্রধান প্রশিক্ষক জান্নাতুল ফেরদৌসী উপস্থিত ছিলেন।

ছাত্র-ছাত্রীরা এই প্রতিযোগিতায় সরাসরি এ্যাবাকাসের মাধ্যমে বা শুনে বা দেখে অনেক বড় বড় জটিল অংকের সমাধান করে মাত্র কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে। বিশ্বের সর্ববৃহৎ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আন্তর্জাতিক বিজ্ঞানভিত্তিক শিশু মেধা বিকাশ প্রশিক্ষণ পদ্ধতি মালয়েশিয়ান প্রতিষ্ঠান “ইউসিমাস” বর্তমানে ৫টি মহাদেশের ৮০টির ও অধিক দেশে সফলভাবে পরিচালিত হচ্ছে। এই প্রতিষ্ঠানটির আন্তর্জাতিক প্রধান কার্যালয় মালয়েশিয়াতে। প্রতি বছর লাখ লাখ ছাত্রছাত্রী যেখানে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হয়ে জিনিয়াস হয়ে গড়ে উঠছে, সেখানে বাংলাদেশ কেন পিছিয়ে থাকবে? 

এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ২০০৮ সাল থেকে আহসান কবিরের উদ্যোগে বাংলাদেশে “ইউসিমাস” এর কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৩ সালে তিনি মালয়েশিয়া কর্তৃক “ইউসিমাস” কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য বাংলাদেশে “ন্যাশনাল ফ্রানচাইজী” হিসেবে নির্বাচিত হন। আহসান কবিরের দায়িত্বে বর্তমানে ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় “ইউসিমাস” কার্যক্রম পরিচালিত
হচ্ছে। বিজ্ঞানীদের মতে, জন্মের পর থেকে শুরু করে ৪-১৩ বছর বয়সের মধ্যে শিশু মস্তিষ্কের ৮০-৯০ শতাংশ মেধা বিকাশিত করা সম্ভব।  তাদের মতে মানুষের মস্তিষ্ক দু’টি অংশে বিভক্ত। দু’টি অংশের আকার ও আয়তন একই রকম হলেও কার্যক্রম ভিন্ন। ইউসিমাসের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে শিশুদের মস্তিষ্কের উভয় অংশকে সমানভাবে বিকাশিত করে। যার ফলে প্রতিটি শিশু মেধাবী ও প্রতিভাবান অর্থাৎ জিনিয়াস হয়ে গড়ে ওঠে।

“ইউসিমাস” প্রশিক্ষণটির মূল উপকরণ হচ্ছে একটি অতি প্রাচীন গণন যন্ত্র।  এটি এমন একটি গণন যন্ত্র যার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা স্বল্প সময়ে অতি দ্রুত যে কোন ধরনের গণিতের সমাধান করে দিতে সক্ষম হয়। গণিতের পাশাপাশি একটি শিশুর স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে মস্তিষ্কের অন্যান্য গুণাবলীকে বিকশিত করে তোলে “ইউসিমাস”। “ইউসিমাস” এর প্রশিক্ষণ পদ্ধতির মধ্যে আরেকটি প্রতিশব্দ হলো “মানসঙ্ক পদ্ধতি” অর্থাৎ মনে মনে অক্সক করার পদ্ধতি। ইউসিমাস প্রশিক্ষণে ব্যবহারের মাধ্যমে প্রতিটি শিশুর সুপ্ত প্রতিভাকে বিকাশিত করে।  যেমন - মনোযোগ, স্মরণশক্তি, উপস্থিত বুদ্ধি, গতি ও নির্ভুলতা, আত্নবিশ্বাস, কল্পনাশক্তি, অংকে পারদর্শিতা, প্রতিভা ও অন্যান্য গুণাবলী।

“ইউসিমাস একটি শিক্ষামূলক, দক্ষতা উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ। যার প্রশিক্ষণ পদ্ধতিতে ব্যবহার করা হয় - ভিজ্যুয়াল, লিসেনিং, ফ্লাস কার্ড, দ্রুত লিখন এবং ম্যাজিক বার।  প্রোগামটি হিউম্যান এ্যানটোমি ডেভেলমেন্টে সহায়তা করে।  বর্তমানে বাংলাদেশের অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি পরিক্ষার নিয়ম রয়েছে। যেখানে খুব অল্প সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের অনেক প্রশ্নের সমাধন করতে হয়। সেখানে কোন ধরনের ইলেকট্রনিকস যন্ত্র বা ক্যালকুলেটর ব্যবহার সম্পর্ণভাবে নিষিদ্ধ।  ইউসিমাসের এই প্রশিক্ষণে শিশুরা যতটা মেধাবী হয়ে উঠছে তার সঙ্গে সঙ্গে তাদের অংকের পারদর্শিতা আরো বাড়ছে।

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ভর্তি পরীক্ষায় কোন ক্যালকুলেটর ব্যবহার হয় না।  সেক্ষেত্রে ইউসিমাসের মেধাবী শিক্ষার্থীরা এই
ধরনের সমাধান করে ফেলে অতি সহজেই।  গণিত বিষয়টি নিয়ে বর্তমানে অনেক প্রতিষ্ঠান অনেক ধরনের প্রতিযোগিতার আয়োজন করে।  এর মধ্যে গণিত অলিপিয়ার্ড প্রতিযোগিতায় ইউসিমাসের শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করে চ্যাম্পিয়ান, চ্যাম্পিয়ন অব দ্য চ্যাম্পিয়ান রেকর্ড অর্জন করেছে।  সম্প্রতি রোমানিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় আন্তর্জাতিক গণিত প্রতিযোগিতা। যেখানে বাংলাদেশ থেকে শিক্ষার্থীরা অংশ নেয়।  এর মধ্যে ইউসিমাসের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী বাংলাদেশ থেকে এই প্রথম স্বর্ণপদক পেয়েছে।

 এছাড়াও জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ধরনের প্রতিযোগিতায় ইউসিমাসের ছাত্রছাত্রীরা কৃতীত্ব অর্জন করে। আহসান কবির জানান, ইউসিমাসের প্রশিক্ষণ শিশুদের মধ্যে আস্থা গড়ে তুলতে, দূরদর্শিতা এবং কল্পনাশক্তি বাড়াতে এবং গণিতের প্রতি ভীতি দূর করে সফলতা আনতে সহায়তা করে।  শিশুরা যেন নিজেদের প্রকৃত মেধার সঠিক ব্যবহার করতে পারে- এই উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে একনিষ্ঠভাবে ইউসিমাস বাংলাদেশ কাজ করে যাচ্ছে সারা দেশব্যাপী।