ঢাকা, ২৪ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪ || ১১ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১৩৫২

বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা সোমবারই : আন্দোলন ২ দিন শিথিল

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:৫৪ ১২ অক্টোবর ২০১৯  

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা হতে না দেয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। 
পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে আগামী দু’দিন (১৩ ও ১৪ অক্টোবর) বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করতে আন্দোলন শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। ভর্তি পরীক্ষার পর আবারও তারা সমবেত হয়ে নতুন কর্মসূচি নিয়ে আন্দোলনে নামবেন। ১০ দফা দাবির পূর্ণ বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে বলে জানিয়েছেন বিক্ষুব্ধছাত্র-ছাত্রীরা। 

শনিবার দুপুরে বুয়েট ক্যাম্পাস ক্যাফেটেরিয়ার সামনে আন্দোলনকারীরা আলোচনা করে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণায় জানানো হয়।

এর আগে স্বল্প সময়ে বাস্তবায়নযোগ্য পাঁচ দফা দাবি না মানলে আন্দোলন থেকে সরে না দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার (১২ অক্টোবর) তারা নিজেদের মধ্যে আলোচনা করে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন।

 

শিক্ষার্থীদের ৫ দাবি মেনে নোটিশ প্রকাশ

 

এদিকে, আবরার হত্যার প্রতিবাদে দাবিতে শিক্ষার্থীদের ৫ দাবি মেনে নিয়ে নোটিশ প্রকাশ করেছে বুয়েট প্রশাসন। শনিবার বুয়েট প্রশাসন থেকে এ তথ্য জানানো হয়। 


শুক্রবার (১১ অক্টোবর) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অডিটোরিয়ামে উপাচার্যের সঙ্গে দীর্ঘ বৈঠকের পর শিক্ষার্থীরা এখনই বাস্তবায়নের জন্য পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন। দাবি না মানা হলে বুয়েটের ভর্তি পরীক্ষা স্থগিত করার কথাও জানানো হয়। 

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বলেন, ১০ দফা দাবির বাস্তবায়ন না হওয়া পর্যন্ত প্রতিবাদ অব্যাহত থাকবে। ভিসি স্যারের অনুরোধ ও সারা দেশের ভর্তিচ্ছুদের কথা চিন্তা করে পাঁচ দফা দাবি বাস্তবায়নের শর্ত দেয়া হয়েছে।

তাদের দেয়া পাঁচ দফা দাবি  - 

১. আবরার ফাহাদ হত্যাকাণ্ডে জড়িত সবাইকে এখনই সাময়িক বহিষ্কার করতে হবে। যাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট হবে, তাদের স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হবে মর্মে বুয়েট প্রশাসন থেকে নোটিস জারি করতে হবে।

২. আবরার হত্যা মামলার সব খরচ বুয়েট প্রশাসন বহন করবে এবং তার পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দিতে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বাধ্য থাকবে, সেটাও নোটিসে লেখা থাকবে।
 

৩. বুয়েটে সাংগঠনিক রাজনীতি নিষিদ্ধ করে সকল হল থেকে অবৈধ ছাত্র উৎখাত করতে হবে। অবৈধভাবে হলের সিট দখলকারীদের উৎখাত করতে হবে। সাংগঠনিক ছাত্র সংগঠনগুলোর অফিস রুম সিলগালা করতে হবে। সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধের পর ভবিষ্যতে কেউ যদি এ রকম সাংগঠনিক কার্যক্রমে জড়িত হয় কিংবা কোনো রকম ছাত্র নির্যাতনে জড়িত হয়, তাহলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ কী ব্যবস্থা নেবে- তা বিস্তারিত জানিয়ে নোটিস জারি করতে হবে। পরবর্তীতে এটি যে অর্ডিন্যান্সে অন্তর্ভুক্ত থাকবে, তা নোটিসে উল্লেখ থাকতে হবে। পাশাপাশি, এ ধরনের কার্যক্রম তদারকির জন্য একটি কমিটি করতে হবে এবং কমিটি গঠনের বিষয়টিও নোটিসে উল্লেখ করতে হবে।

৪. বুয়েটে পূর্বে ঘটে যাওয়া সকল ছাত্র নির্যাতন, হয়রানি, র্যাগিংয়ের ঘটনা এবং ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা প্রকাশের জন্য বিআইআইএস অ্যাকাউন্টে একটি কমন প্ল্যাটফর্ম থাকতে হবে। বিষয়টি মনিটরিংয়ের মাধ্যমে শাস্তি বিধানের জন্য একটি কমিটি থাকতে হবে। বিষয়টি নোটিসের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।


৫. প্রত্যেক হলের সকল ফ্লোরের দুই পাশে সিসি ক্যামেরা যুক্ত করতে হবে এবং এই সিসিটিভি ফুটেজ সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের ব্যবস্থা করা হবে- এই মর্মে নোটিস আসতে হবে।

 

এই পাঁচ শর্ত তুলে ধরে শিক্ষার্থী প্রতিনিধি বলেন, আমরা চাই না ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে বুয়েটে ১৯ ব্যাচের যে শিক্ষার্থীরা আসবে, তারা একটি অসুস্থ অ্যাক্যাডেমিক কালচারের অংশ হোক।

 

গত রোববার (৬ অক্টোবর) দিবাগত মধ্যরাতে বুয়েটের সাধারণ ছাত্র ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আবরার ফাহাদকে শেরে-ই-বাংলা হলের দ্বিতীয় তলা থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে যান। সোমবার (৭ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। তার শরীরে অসংখ্য আঘাতের চিহ্ন ছিল।

আবরার ফাহাদ বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের (ইইই) বিভাগের লেভেল-২ এর টার্ম ১ এর ছাত্র ছিলেন। তিনি শের-ই-বাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার বাড়ি কুষ্টিয়া শহরে। কুষ্টিয়া জেলা স্কুলে তিনি স্কুলজীবন শেষ করে নটরডেম কলেজ থেকে এইচএসসি পাস করেন।