ঢাকা, ১৬ আগস্ট শনিবার, ২০২৫ || ১ ভাদ্র ১৪৩২
good-food
১০৩৭

ভয়াবহ হচ্ছে ফণি

মোংলা-পায়রা বন্দরসহ ৯ জেলায় ৭ নম্বর বিপদ সংকেত

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১১:৪৯ ২ মে ২০১৯  

ক্রমেই শক্তিশালী হচ্ছে ঘূর্ণিঝড় ফণি। ভয়াবহতা বাড়ার শংকায় মোংলা ও পায়রা বন্দরে ৭ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত জারি করা হয়েছে।

উপকূলীয় জেলা ভোলা, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরসমূহ সাত নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরকে ৬ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর এবং নিকটবর্তী দ্বীপ ও চরগুলো ৬ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় থাকবে।

তবে এখনও এর তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি বাগেরহাটের মোংলাসহ আশপাশের উপকূল এলাকায়। সকাল থেকে রৌদ্রজ্জ্বল আবহাওয়া বিরাজ করছে এসব এলাকায়।

 

আবহাওয়া এখনও ভালো থাকায় বন্দরে অবস্থানরত বিদেশি বাণিজ্যিক জাহাজের পণ্য বোঝাই-খালাস স্বাভাবিক রয়েছে। জানিয়েছেন, বন্দরের হারবার মাস্টার কমান্ডার দুরুল হুদা।

 

আজ বৃহস্পতিবার  সকালে আবহাওয়া অধিদফতর থেকে দেয়া আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তি ক্রমিক নম্বর ২৮-এ এসব সতর্ক বার্তা দেয়া হয়েছে।

 

আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৭৪ কিলোমিটারের (কি. মি.) মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ১৬০ কি. মি. যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১৮০ কি. মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটে সাগর খুবই বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

 

মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৪ (চার) নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ৭ (সাত) নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

 

পূর্ব সুন্দরবনের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. মাহমুদুল হাসান জানান, বনবিভাগের সদস্যদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। বনপ্রহরীদেরকে তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র-গুলি নিয়ে নিরাপদে থাকতে বলা হয়েছে।

 

এদিকে ঝড়ের আঘাত হানার আশঙ্কা ও পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবেলায় সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করেছে বন্দর কর্তৃপক্ষ, পৌর কর্তৃপক্ষ ও উপজেলা প্রশাসন।

 

 

আবহাওয়া অফিস বলছে, ঘূর্ণিঝড় ফণী বৃহস্পতিবার সকাল ৯টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১০৬৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১০২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৯১৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্র বন্দর থেকে ৯২৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল।

 

পশ্চিমমধ্য বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত অতি প্রবল এ ঘূর্ণিঝড় আরও ঘণীভূত হয়ে উত্তর উত্তরপূর্ব দিকে অগ্রসর হয়ে শুক্রবার ভারতের ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গ উপকূল অতিক্রম করতে পারে। এরপর ভারতের পশ্চিমবঙ্গ হয়ে ৩ মে সন্ধ্যার দিকে খুলনাসহ বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোতে পৌঁছাতে পারে।

 

তবে বর্তমান গতিপথ ঠিক থাকলে এ ঝড়ের অগ্রবর্তী অংশের প্রভাব বাংলাদেশের খুলনা অঞ্চলে দেখা দিতে পারে শুক্রবার সকাল থেকেই।

 

সামনে অমাবস্যা থাকায় ঘূর্ণিঝড় উপকূল অতিক্রম করার সময় উপকূলীয় জেলা চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, ভোলা, পটুয়াখালী, বরিশাল, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা এবং অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরাঞ্চল স্বাভাবিকের চেয়ে ৪ থেকে ৫ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে।

 

ঘূর্ণিঝড় বাংলাদেশের স্থলভাগ পার হওয়ার সময় চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, বরিশাল, ভোলা, পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট, খুলনা, সাতক্ষীরা জেলায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণ এবং সেই সঙ্গে ঘণ্টায় ৯০ থেকে ১১০ কিলোমিটার বেগে তমকা অথবা ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।

 

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের কাছে সাগর খুবই উত্তাল থাকায় উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরা ট্রলার ও নৌকাকে দ্রুত নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যেতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত তাদের নিরাপদ আশ্রয়েই থাকতে বলেছে আবহাওয়া অধিদপ্তর।

 

ঘূর্ণিঝড়ে যেকোনো ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় দেশের উপকূলীয় ১৯ জেলায় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। নেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় সব প্রস্তুতি। এছাড়া উপকূলীয় সব জেলায় সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। ২৪ এপ্রিল সৃষ্ট নিম্নচাপটি ঘূর্ণিঝড় ফণীতে রূপ নেয় ২৭ এপ্রিল।

 

এদিকে, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত অতিপ্রবল ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানার আশঙ্কা দেখা দেয়ায় দুর্যোগ মোকাবিলায় সব পূর্বপ্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে সরকার। খোলা রাখা হয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীন সব অফিস।

উপকূলীয় ১৯ জেলায় প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেয়া হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে ঘূর্ণিঝড় আশ্রয় কেন্দ্রগুলোও।

 

ঘূর্ণিঝড়টি পর্যবেক্ষণ করে তা মোকাবিলায় ছুটির দিনেও সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ডা. মো. এনামুর রহমান ও মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ্ কামাল এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগ ও দপ্তরের কর্মকর্তারা দুর্যোগ প্রস্তুতি সভা করছেন।

এছাড়াও জেলা-উপজেলায় দুর্যোগ প্রস্তুতি সভা করেন সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তারা।

 

ত্রাণ ও দুর্যোগ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় ফণী বাংলাদেশের খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, যশোর, রাজশাহী, দিনাজপুরের ওপর দিয়ে ৪ মে সকালে বাংলাদেশ অতিক্রম করতে পারে।

প্রতিমন্ত্রী বলেন,  ১৯ জেলা ও তার প্রতিটি উপজেলায় কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। ফণীপ্রবণ এলাকায় সব সরকারি ছুটি বাতিল করা হয়েছে। প্রস্তুত রাখা হয়েছে সেনাবাহিনী,  কোস্টগার্ড, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী, ফায়ার সার্ভিস, রেডক্রিসেন্ট,  পুলিশ, আনসারসহ সব স্বেচ্ছাসেবকদের। 

প্রস্তুতি সম্পর্কে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। এনডিআরসি প্রতিনিয়ত সংবাদ দিয়ে যাচ্ছে। সিপিসির হেড কোয়ার্টার ও উপকূলীয় ১৯টি জেলায় কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। এসব জেলার উপজেলা পর্যায়েও কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। রেডক্রিসেন্টের কন্ট্রোলরুমও খোলা হয়েছে। উপকূলীয় আর্মি স্টেশনগুলোতেও ঢাকা থেকে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন তারা প্রস্তুতি রেখেছেন। 

সিপিপির ৫৬ হাজার ভলান্টিয়ারকে মেসেজ পাঠানো হয়েছে। তারা প্রস্তুত আছে। তারা এরইমধ্যে মাইকিং করে প্রস্তুতিমূলক কাজ শুরু করেছেন। মানুষের অন্ন-বস্ত্র চিকিৎসার জন্য প্রস্তুতি নেয়া হয়েছে। স্যালাইনের সুপেয় পানির জন্য পানির ট্রাক পৌঁছে দেয়া হয়েছে। আমরা আশা করি হতাহতের ঘটনা আমরা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে পারবো।

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক সামছুদ্দিন আহমেদ বলেন,  শক্তিশালী ফণী যদি গভীর সমুদ্র থেকে সরাসরি মোংলা হয়ে বাংলাদেশে আঘাত হানে তাহলে ভয়াবহ ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। আর যদি এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যা হয়ে আমাদের দেশে আসে তাহলে তা অনেকটাই হালকা হয়ে যাবে। ফলে ক্ষতির আশঙ্কা কম থাকবে। 

তিনি জানান, ইতোমধ্যে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও উড়িষ্যায় রেড অ্যালার্ট জারি করেছে ভারত সরকার। 

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক আরও বলেন, এই মহূর্তে এর গতিপথ যেভাবে রয়েছে তাতে প্রথমে এটি ভারতের উড়িষ্যায় আঘাত করবে, এরপর পশ্চিমবঙ্গে। কিন্তু এর গতিপথ যদি পরিবর্তন হয়ে সমুদ্রের কোল ঘেষে সরাসরি বাংলাদেশে আঘাত হানে তাহলে এটি খুলনা, মোংলা, সাতক্ষীরা, চট্টগ্রাম হয়ে ভয়াবহ আকারে কক্সবাজার পর্যন্ত বিস্তৃত হবে। 

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মো. শাহ্ কামাল  বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় আমাদের অফিস সব খোলা রয়েছে। মাঠ পর্যায়ে সিপিপি, স্কাউট ভলান্টিয়ার, আনসার-ভিডিপি, রেড ক্রিসেন্টসহ সব ভলান্টিয়ার রেডি আছে। জেলায় জেলায় ডিসিরা সভা করেছেন। আমরা শুকনো খাবার ও প্রয়োজনীয় ত্রাণসামগ্রী পাঠিয়ে দিয়েছি। এরইমধ্যে সব জেলায় তা পৌঁছে গেছে। এখন আমরা পর্যবেক্ষণ করছি।

এছাড়া ২ মে বিকেল ৫টায় ডাকা হয়েছে আন্ত:মন্ত্রণালয় বৈঠক। জেলা প্রশাসকদের বরাবর প্রাথমিকভাবে নগদ ৫ লাখ টাকা, ২০০ মেট্রিক টন চাল দেয়া হয়েছে। পূর্বপ্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। সাইক্লোন সেল্টারগুলো ঠিক করে রাখা হয়েছে। উপকূলীয় ১৯টি জেলাকে অ্যালার্ট করা হয়েছে। পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করবে পরবর্তী করণীয়।

ঘূর্ণিঝড়ের কারণে উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলেছে আবহাওয়া অফিস।

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপটি প্রায় এক সপ্তাহ আগে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নেয়। নাম দেয়া হয়  ‘ফণী’।

পরিবেশ বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর