ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
১৩৭৩

কুমেক-এ স্ত্রীর চিকিৎসা

ম্যাজিস্ট্রেটের ফেসবুক স্ট্যাটাস, তোলপাড়

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৫৩ ১৭ আগস্ট ২০১৯  

গভীর রাতে মেডিক্যালে স্ত্রীর চিকিৎসা সেবা নিতে গিয়ে বিড়ম্বনার শিকার হলেন ম্যাজিষ্ট্রেট। এ ঘটনা নিয়ে চলছে তোলপাড়।

ঘটনা কুমিল্লা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের (কুমেক)। ভুক্তভোগীর নাম ইমদাদুল হক তালুকদার। কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের সহকারি কমিশনার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তিনি। এ নিয়ে ভূক্তভোগী ওই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট শুক্রবার সকালে ও বিকেলে তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বিড়ম্বনার নানা তথ্য তুলে ধরেন।

 

এরপর থেকে বেশ তোলপাড় শুরু হয় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মহলে।  স্ট্যাটাসের একাংশে ম্যাজিস্ট্রেট তার উপলব্ধিতে বলেছেন, ‘ইমারজেন্সি তখন ঘুমাচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা ২৪ ঘণ্টার নয়, বরং ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের (সরকারি-বেসরকারি) মর্জি মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে।’

শনিবার দুপুর ১টা পর্যন্ত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের ওই স্ট্যাটাসে লাইক ক্লিক করেছেন ৪৫৫ জন, এতে কমেন্টস করেছেন ৬৪১ জন এবং স্ট্যাটাসটি শেয়ার করেন ৫৩ জন।

 

কুমিল্লা জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক তালুকদার শুক্রবার সকাল ৬টা ৫৮ মিনিটে  ‘plaban imdad’  নামে তার ফেসবুক পেজে কুমেক হাসপাতালে তার স্ত্রীর চিকিৎসায় বিড়ম্বনা নিয়ে স্ট্যাটাস দেন।

‘কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল’ শিরোনামে ওই স্ট্যাটাসে তিনি লেখেন (হুবহু তুলে ধরা হলো) :

Plaban Imdad is https://static.xx.fbcdn.net/rsrc.php/v3/yV/r/sgooXhYdZL8.png?_nc_x=z42AkkJYHV5feeling disappointed with Drsharmin Akterand 2 others at Comilla Medical College.    Yesterday at 6:58 AM · Comilla · 

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালঃ ভোর ৪ঃ৩০
.............……..…….....................................................
রাত ৩ঃ৩০। আমার স্ত্রীর হঠাৎ তীব্র পেট ব্যাথা। চিতকার করছিলো। খুব ঘাবড়ে গেলাম। ইমাজেন্সি এম্বুলেন্সের অনেকগুলো নম্বর নিয়ে কল করতে থাকলাম। কেউ কল ধরলনা। বড় বড় হাসপাতালের নম্বরে কল দিলাম। কেউ ধরলোনা। একজন দয়া করে এম্বুলেন্সের কল ধরে জানালেন তার এম্বুলেন্স ঢাকায়। পাওয়া গেলোনা। আমার মোটামুটি সব ড্রাইভারকে কল দিলাম। ধরলোনা।

অসহায় অবস্থায় বাচ্চাকে ঘুম থেকে তুলে আমার স্ত্রীকে নিয়ে হাটা দিলাম ফাকা রাস্তায়। কিছুদূর গিয়ে একটা সিএনজি পেলাম। উনি যেতে রাজী হলেন। গেলাম কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ইমাজেন্সি তখন ঘুমোচ্ছে। অনেক কষ্ট করে ডিউটি ডাক্তার সাহেবের ঘুম ভাঙানো হলো। উনি কাগজে লিখে দিয়ে তলায় ৪১৭ নম্বর ওয়ারডে যেতে বললেন। গেলাম। ওখানে ১৫ মিনিট কাওকে পেলাম না। অবশেষে এক সিস্টার বা আয়া এমন কেউ এলেন। জানলাম ডাক্তার সাহেব ঘুমোচ্ছেন। পাক্কা আধা ঘন্টা ধরে দরজা নক করার পর উনি এলেন। দেখলেন। তারপর ব্যাবস্থাপত্র লিখতে গিয়ে দুটো কলমই কালি-শুন্য পেলেন। আবার গেলেন তার কক্ষে। গিয়ে ফিরলেন আরো ১০/১২ মিনিট পর।

এদিকে বেশ কয়েকজন রোগী জমে গেছে। অবশেষে আমার স্ত্রীর ব্যাবস্থাপত্রে ওষুধ লিখলেন - এলজিন ইঞ্জেকশন, নরমাল স্যালাইন আর খাবার স্যালাইন। মজার বিষয় হলো ডাক্তার সাহেব সাথে অতিরিক্ত দুটো স্লিপ ধরিয়ে দিলেন। (ছবি সংযুক্ত)
স্লিপ-০১ঃ ৭টি টেস্টের নাম
স্লিপ-০২ঃ বাদুরতলার শেফা আজাদ ক্লিনিকের নাম।
মুখে বলে দিলেন এই টেস্টগুলো যেন ওখান থেকেই করাই। অনেকটা আদেশের মতো। আমি ভেজা বিড়ালের মতো বললাম, জি আচ্ছা।
এর মাঝে কথা হলো দেবিদার থেকে আসা এর ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সজনের সাথে। তার মহিলা রোগীর প্লাটিলেট কমেই চলছে। নিয়ে উদবিগ্ন। কিন্তু মজার বিষয় হলো রোগীর ওয়াডে কোন ডাক্তার নেই। ডাক্তার আসবেন সকালে অথবা আরো পরে।

(সেই লোকের ভিডিও ইন্টারভিউ সংযুক্ত)

পরে আমার স্ত্রীকে নিয়ে চলে এলাম। ইঞ্জেকশন্টা একটা বেসরকারী ক্লিনিকে গিয়ে পুশ করালাম।

উপলব্ধি-০১ঃ গরীবের জন্য কোন চিকিৎসা নেই

উপলব্ধি-০২ঃ ডেঙ্গু নিয়ে প্রান্তিক লেভেলে সরকারের নির্দেশনা কতটা ফলো করা হচ্ছে তা ভেবে দেখার আছে।

উপলব্ধি-০৩ঃ আমাদের স্বাস্থ্য সেবা ২৪ ঘন্টার নয়, বরং ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের (সরকারী/ বেসরকারী) দায়িত্বশীলদের মর্জি মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে।

উপলব্ধি-০৪ঃ অধিকাংশ বেসরকারী ক্লিনিক কেবল সকাল সন্ধ্যা দোকান খোলে। ব্যাবসা শেষে দোকান বন্ধ। রোগী জাহান্নামে যাক। যা আইনত দন্ডনীয়। ক্লিনিকে অবশ্যই ইমার্জেন্সি ডাক্তার থাকা বাধ্যতামূলক।

উপলব্ধি-০৫ঃ যত দায় আমাদের। 
# রমজানে ভেজাল খাদ্য প্রতিরোধ কর সকাল সন্ধ্যা 
# রাত জেগে পাবলিক পরীক্ষার ব্যাবস্থাপনা কর
# ঘুম হারাম করে দূর্যোগ মোকাবেলা কর
# ইলেকশানে টানা রাত জেগে কাজ কর
# ঈদে নির্বিঘ্নে জনসাধারণের বাড়ী যাওয়া নিশ্চিত কর
# জাতীয় দিবসের প্রস্তুতিতে অঘুম রাত কাটাও
# বিশেষ সংকটে জেগে থাকো রাতের পর রাত আর খেটে যাও সংকট মোকাবেলায়।

মেডিকেল সেক্টরের জন্য করুণা। স্রষ্টা হেদায়েত দানব করুন। আমিন।

 

এদিকে বিকেলে আরও একটি স্ট্যাটাস দেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক তালুকদার।

এতে তিনি লিখেন, বিনা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় একজন এফসিপিএস ডাক্তারের মাধ্যমে স্ত্রীর চিকিৎসার ব্যবস্থাপত্র করে নিয়েছেন। রাতের ভয়াবহ অভিজ্ঞতার কথা লিখেন সেখানে।

দুটি স্ট্যাটাসই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে পড়ে। এ নিয়ে শুরু হয় তোলপাড়। চিকিৎসা সেবা নিয়ে বিভিন্ন পক্ষ থেকে ফেসবুকে মন্তব্যের ঝড় বয়ে যায়।

একজন মন্তব্য করেন - ‘আপনার উপলব্ধি এ হাসপাতালের প্রতিদিনের চিত্র’।

একজন লিখেছেন, ‘কেউ যেন রাতে অসুস্থ না হয়’।

 

ভূক্তভোগী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ইমদাদুল হক তালুকদার বলেন, ‘পরিচয় দেইনি, সাধারণ মানুষের মতোই চিকিৎসা সেবা পেতে চেয়েছি। এটা কারও বিরুদ্ধে আমার কোনো অভিযোগ নয়। গভীর রাতে আমার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়ায় কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে গিয়ে যে অনাকাংখিত অবহেলা আর দুর্ভোগের শিকার হয়েছি কেবলমাত্র তা-ই আমার উপলব্ধি থেকে তুলে ধরেছি।’

 

শনিবার কুমেক হাসপাতালের পরিচালক ডা. স্বপন কুমার অধিকারী বলেন, শুক্রবার একাধিক সাংবাদিকের মাধ্যমে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের স্ত্রীর চিকিৎসা নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাসের বিষয়টি শুনেছি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।