ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১১ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৫৭৮

যে কারণে লবণ কিনতে মরিয়া হলেন ক্রেতারা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:২৩ ২১ নভেম্বর ২০১৯  

বাংলাদেশে লবণের কোনও সংকট নেই। এ নিয়ে গুজব ছড়ানো হয়েছে এমন সতর্কবার্তা দিয়েছে সরকার। তবুও গেল মঙ্গলবার লবণ কিনতে বাজারে ব্যাপক ভিড় হয়েছে। আতংকে সারাদেশে মানুষজনের তা কেনার খবর পাওয়া গেছে। লবণের দাম বাড়ানোর জন্য কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়েছে।
কেন আতংক
ঢাকার একটি বাজারে মুদি দোকানের মালিক বেল্লাল হোসেন বলেন, এক সপ্তাহে যে লবণ বিক্রি করতাম তা একদিনেই বিক্রি হচ্ছে। সবাই অতিরিক্ত নিচ্ছে। যে এক কেজি নিত সে পাঁচ কেজি নিচ্ছে। যে পরিমাণ লবণ আমি এক সপ্তাহে বিক্রি করতাম, তা একদিনে বিক্রি করছি।
সরকার বলছে, লবণ উৎপাদনকারী মূল এলাকা কক্সবাজার ও চট্টগ্রামে পর্যাপ্ত মজুদ রয়েছে। বাংলাদেশ নিজেই লবণ উৎপাদন করে এবং তা পরিমাণে যথেষ্ট। এক্ষেত্রে দেশ আমদানির উপর নির্ভরশীল নয়।
বাংলাদেশের বড় বড় কোম্পানিগুলোও যথেষ্ট মজুদ থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। তবুও কেন বাজারে ছুটে গেলেন ক্রেতারা? লবণ কিনতে বাজারে এসেছিলেন রাজিয়া আক্তার। তিনি বলেন, এ যে টিভিতে দেখতেছি। এরপর আত্মীয়-স্বজনরা ফোন করে বলছে লবণ কিনে রাখতে। এ যে এখানে আসার আগেও আমার জা ফোন দিয়ে বলছে লবণ কিনে রাখেন। নিত্যপণ্যটি পাওয়া যাবে না।
দেখা যাচ্ছে লবণের ক্ষেত্রে অন্যদের কথা শুনেই সবাই বাজারে গেছেন বলে মনে হচ্ছে। সরকারও বলছে গুজব ছড়ানো হয়েছে। ঢাকার বনানী এলাকার গৃহকর্মী ফরিদা আক্তার বলছেন, পেঁয়াজ ছাড়া খাবার খাওয়া গেলেও লবণ ব্যতীত কিভাবে খাবেন? অনেক কিছু ছাড়া ভাত-তরকারি খাওয়া যায়। কিন্তু লবণ ছাড়া তো খাওয়া যাবে না। পেঁয়াজের দাম এত বেশি! এখন যদি এর দামও বাড়ে অথবা বাজারে না পাওয়া যায়?
পেয়াজ ও লবণ
মাত্র দুই দিন আগেও বাজারের সবচাইতে আলোচিত বিষয় ছিল পেঁয়াজ। কয়েক সপ্তাহ জুড়ে বাজারে এর অতিরিক্ত দাম নিয়ে ক্রেতারা হিমশিম খেয়েছেন। সেপ্টেম্বরে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এ সংকটের শুরু। এখন পেঁয়াজের সরবরাহ আসতে শুরু করেছে এবং দামও কমতে শুরু করেছে। কিন্তু এর প্রভাব বাজারে এখনো রয়ে গেছে।
ভোক্তা অধিকার বিষয়ক সংগঠন কনজিউমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সাধারণ সম্পাদক হুমায়ুন কবির ভুঁইয়া বলছেন, পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধি সঠিকভাবে সামাল দিতে পারেনি সরকার। সরকার এর দাম নিয়ে যা বলেছে তা ধরে রাখতে পারেনি। বিষয়টা ক্রেতাদের মাথায় কাজ করেছে। সেজন্য মানুষ এভাবে লবণ কিনেছে।
তিনি বলেন, দেখেন বাজারে সবজির দাম বেশি। বলতে গেলে অনেকের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। এরপর চালের দাম, পেঁয়াজের দাম, রসুনের দাম ও মশলার ক্ষেত্রেও একই অবস্থা। এসব কারণে বাজারে একটা অস্থিরতা চলছে। সেটারই প্রভাব মানুষের মনে পড়েছে।
গুজব যেভাবে কাজ করে
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অর্থনীতির শিক্ষক সায়মা হক বিদিশা বলছেন, গুজবের প্রভাব আরও বেশি কাজ করে যখন বাজার ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থাহীনতা তৈরি হয়। তিনি বলছেন, সাধারণ মানুষ দেখছে বাজার ব্যবস্থা সঠিকভাবে কাজ করছে না। বাজার ব্যবস্থার উপর তাদের আস্থাহীনতার কারণে দেখা যায়, যখন কেউ কোনও অসৎ উদ্দেশ্যে গুজব ছড়িয়ে দেয়, মানুষ সেটি গ্রহণ করে। কারণ তারা আগেই দেখেছে পেঁয়াজের ক্ষেত্রে এরকম হয়েছে।
সায়মা হক বলেন, ফলস্বরূপ যেটা হয়, আমার এককেজি কেনার কথা কিন্তু আমি তিন কেজি কিনছি। আর বেশিরভাগ মানুষ আমার মতো আচরণ করলে বাজারে সংকট না থাকলেও একটা কৃত্রিম সংকট তৈরি হয়। আমরা নিজেরাই সেটা তৈরি করে ফেলি।