ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৪৩২৮

ভাতা পেত কত?

রাজাকার বাহিনী গঠন হয় যেভাবে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৫১ ১৮ ডিসেম্বর ২০১৯  

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যে শব্দটি গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে ক্ষোভ ও ঘৃণা ছড়িয়েছে এবং এখনও ছড়াচ্ছে, সেটি হলো 'রাজাকার'। এ শব্দটির সঙ্গে দেশের মানুষের পরিচয় ঘটে ১৯৭১ সালে।
মাত্র কয়েকদিন আগেই বাংলাদেশ সরকার রাজাকারদের একটি তালিকা প্রকাশ করেছে। যেটি নিয়ে চলছে বিতর্ক ও শোরগোল। অভিযোগ উঠেছে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃত ব্যক্তির নাম ঢুকেছে এ তালিকায়। প্রশ্ন হচ্ছে, ’৭১ সালে রাজাকার কারা ছিলেন? আর তাদের ভূমিকাই বা ঠিক কী ছিল?
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক লেখক ও ইতিহাসবিদ মুনতাসীর মামুন বলেন, 'রাজাকার' একটি ফার্সি শব্দ, যার অর্থ হচ্ছে 'স্বেচ্ছাসেবী'। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে সহায়তার জন্য খুলনার খান জাহান আলী রোডের একটি আনসার ক্যাম্পে ৯৬ জন পাকপন্থী ব্যক্তিকে নিয়ে রাজাকার বাহিনী গঠন করা হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন জায়গায় এ বাহিনীর জন্য সদস্য সংগ্রহ করা হয়। তারা প্রত্যন্ত এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
রাজাকার বাহিনী গঠনের পেছনে সবচেয়ে সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন নেতা এ কে এম ইউসুফ। তিনি পরবর্তীতে দলটির নায়েবে আমির হন। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে আটক করা হয়েছিল। পরে কারাগারেই তার মৃত্যু হয়। ওর বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, তিনি রাজাকার বাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। খুলনায় শান্তি কমিটির প্রধানও ছিলেন।
মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বেসরকারি গবেষণা সংস্থা 'ওয়ার ক্রাইমস ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিটি'র আহবায়ক ড. এম এ হাসান বলেন, ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চের পর ইস্ট পাকিস্তান সিভিল আর্মড ফোর্স গঠন করা হয়। এর অধীনে রাজাকার, আল-বদর এবং আল-শামস্ বাহিনী গঠন করা হয়।
এই ফোর্সের অধীনে বাঙালীরা যেমন ছিলেন, তেমনি তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানে বসবাসরত উর্দুভাষীদের অনেকে তাতে যোগ দেন। পাকিস্তান বাহিনী তাদের হাতে অস্ত্রও তুলে দিয়েছিল।
রাজাকারদের ভূমিকা
মুক্তিযুদ্ধের প্রথম দিকে রাজাকার বাহিনী ছিল শান্তি কমিটির আওতাধীন। ড. এম এ হাসান বলেন, ১৯৭১ সালের জুন মাসে জেনারেল টিক্কা খান রাজাকার আইন জারি করেন। রাজাকার বাহিনীতে প্রায় ৫০ হাজার সদস্য ছিলেন। যারা মাসিক ভাতা পেতেন। ওই সময় প্রতি মাসে রাজাকার বাহিনীর একজন সদস্য ১৫০ রুপির মতো ভাতা পেতেন।
তিনি বলেন, যতদূর আমার মনে আছে, একজন রাজাকার সদস্য তখন ১৫০ রুপি ভাতা পেতেন। স্বাধীনতার পরেও ১ ভরি স্বর্ণের দাম ছিল প্রায় ৯০ রুপি। অনেক রাজাকার সদস্য অবশ্য স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতেও কাজ করতেন।
অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন এবং ড. এমএ হাসান - দু'জনই বলেছেন, রাজাকার বাহিনীতে যারা কাজ করতেন, তাদের নাম মুক্তিযুদ্ধের সময় সংশ্লিষ্ট থানায় লিপিবদ্ধ ছিল।
ড. হাসান বলেন, রাজাকার বাহিনীর সদস্যরা পাকিস্তানি সৈন্যদের সঙ্গে যুদ্ধে অংশ নিতেন।, মুক্তিযোদ্ধাদের ধরতেন, হত্যা করতেন কিংবা পাক সেনাবাহিনীর হাতে তুলে দিতেন। যুদ্ধের সময় পাক সেনাবাহিনীকে সহায়তা করার জন্য বাংলাদেশের ভেতরে বেশ কয়েকটি বাহিনী বা সংগঠন গড়ে উঠেছিল। এগুলো হচ্ছে শান্তি কমিটি, রাজাকার, আলবদর ও আল শামস।
গবেষকরা বলছেন, যুদ্ধের সময় শান্তি কমিটি গঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন রাজনৈতিক ব্যক্তিরা। যাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন জামায়াত ইসলামীর নেতা গোলাম আযম এবং মুসলিম লীগ নেতা খাজা খয়েরউদ্দিন। অন্যদিকে আল বদর বাহিনীর তিন থেকে পাঁচ হাজার সদস্য ছিল। 
তারা জানান, জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের নেতা-কর্মীরা এ বাহিনীর সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। বাহিনীটির প্রধান ছিলেন মতিউর রহমান নিজামী। তিনি স্বাধীন বাংলাদেশে পরবর্তীতে জামায়াতে ইসলামীর আমির হন। মানবতবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযুক্ত হওয়ার পরে তাকে ফাঁসি দেয়া হয়। এছাড়া আল শামস বাহিনীর সদস্য সংখ্যা ছিল প্রায় ৩,০০০'র মতো।