ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৯৩১

ধেয়ে আসছে উপকূলে: সতর্কতা ৪

শক্তি সঞ্চয় করেছে বুলবুল, উত্তাল সাগর

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১০:৩৪ ৮ নভেম্বর ২০১৯  

বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিবায়ু ‘বুলবুল’ আরও শক্তি সঞ্চয় করে পরিণত হয়েছে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে। এখন উপকূলের দিকে ধেয়ে আসছে প্রবল এ  ঘূর্ণিঝড়।  ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে উত্তাল হয়ে উঠেছে বঙ্গোপসাগর। অস্থিরমতি এই ঘূর্ণিবায়ু কোন উপকূলে আঘাত হানতে চলেছে সে বিষয়ে এখনও একদম নিশ্চিত নন আবহাওয়াবিদরা। তবে সাগর উত্তাল থাকায় তীরে ভিড়ছে সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার। 
বুলবুল’র প্রভাবে ঝড়ো হাওয়ার শঙ্কায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৪ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখাতে বলেছে বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর।
বৃহস্পতিবার রাতের পর চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৯৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণ পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৩৫ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৭০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে অবস্থান করছিল এ ঝড়।
সে সময় ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের ৬৪ কিলোমিটারের মধ্যে বাতাসের একটানা গতিবেগ ছিল ঘণ্টায় ৯০ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, শুক্রবার ঘূর্ণিঝড়টি আরও ঘনীভূত হতে পারে। রোববার নাগাদ পৌঁছাতে পারে উত্তর বঙ্গোপসাগরে। ঝড়ের শক্তি বাড়লে শুক্রবার সতর্কতার মাত্রাও বাড়ানো হতে পারে। সেক্ষেত্রে ৪ নম্বর স্থানীয় হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে জলীয় বাষ্প বাড়ায় উপকূলীয় এলাকায় হালকা বৃষ্টি হতে পারে।

সুদূর প্রশান্ত মহাসাগরে সৃষ্ট উষ্ণমণ্ডলীয় ঝড় মাতমো গত অক্টোবরের শেষে ভিয়েতনাম হয়ে স্থলভাগে উঠে আসে। সেই ঘূর্ণিবায়ুর অবশিষ্টাংশই ইন্দোনেশিয়া পেরিয়ে ভারত মহাসাগরে এসে আবার নিম্নচাপের রূপ নেয়।
বার বার দিক বদলে নিম্নচাপটি আবার শক্তিশালী হয়ে ওঠে। পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরে এসে  বুধবার রাতে তা ঘূর্ণিঝড়ের রূপ নেয়। তখন এর নাম দেয়া হয় ‘বুলবুল’।
এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সাগর তীরের আট দেশের আবহাওয়া দপ্তরের নির্ধারিত তালিকা থেকে ধারাবাহিকভাবে এই অঞ্চলের ঝড়ের নাম দেয়া হয়। বুলবুল নামটি নেয়া হয় পাকিস্তানের প্রস্তাবিত নামের তালিকা থেকে।  

আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বুলবুলের প্রভাবে বৃষ্টি ঝরবে ভারতের ওড়িশা, পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায়। 
ভারতের আবহাওয়া অফিসের পূর্বাভাস বলছে, প্রবল ঘূর্ণিঝড় বুলবুল আরও শক্তিশালী হয়ে শুক্রবার বিকাল নাগাদ অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে (ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম) পরিণত হতে পারে। তখন বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় ১৪৫ কিলোমিটার।
তবে রোববার ফের শক্তি কমে প্রবল ঘূর্ণিঝড়ের (ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোনিক স্টর্ম) রূপ পেতে পারে বুলবুল। তারপর ধীরে ধীরে আরও শক্তি হারিয়ে ১১ নভেম্বর ফের ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হতে পারে।

তবে জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের বুলেটিন বলছে, বর্তমান অবস্থান থেকে বক্র পথে প্রথমে উত্তর-উত্তর-পশ্চিমে এবং পরে উত্তর-উত্তরপূর্বে অগ্রসর হতে পারে বুলবুল। রোববার সকালে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ হয়ে এ ঘূর্ণিঝড় প্রবেশ করতে পারে বাংলাদেশে।   
আর বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আবদুল মান্নান বলেন, এ ঝড়ের প্রভাব বাংলাদেশের ওপর কতটা পড়বে তা নির্ভর করবে উত্তর বঙ্গোপসাগরে আসার পর বুলবুল কোন দিকে মোড় নেয় তার ওপর। 
এখনও অনেক দূরে থাকায় ঘূর্ণিঝড়ের অবস্থান পর্যালোচনা করে আবহাওয়ার বিশেষ বুলেটিন দেয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এদিকে, শুক্রবার সকালে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার আলীপুর মৎস্য ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আনসার মোল্লা জানান, ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে সাগর উত্তাল থাকায় সব মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলার তীরে ভিড়ছে। এছাড়াও সকাল থেকে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। থেমে থেমে হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি হচ্ছে।
এদিকে শুক্রবার সকাল ১০টায় ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাব মোকাবেলা ও সকল কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থসপনা কমিটির জরুরি সভায় বসে জেলা প্রশাসন। 
সরকারের উচ্চ মহলের নির্দেশনা বাস্তবায়ন ও স্থানীয়ভাবে দুর্যোগ মোকাবেলা ও গণসচেতনতা সৃষ্টিতে সভায় বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনার পরে সিদ্ধান্ত গৃহীত হবে এবং সেগুলো মাঠ পর্যায়ে বাস্তবায়নে কাজ করবে জেলা প্রশাসন।
পটুয়াখালী আবহাওয়া অফিসের পর্যবেক্ষক মো. রাহাত হোসেন জানান, শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সকাল ৯টা পর্যন্ত ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। বর্তমানে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত রয়েছে।