ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৫৬৬

শেখ রাসেলের সঙ্গে কয়েক মিনিট

আহমদ সফিউদ্দিন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:৩০ ১ সেপ্টেম্বর ২০২২  

বঙ্গবন্ধু হেলিকপ্টারে রাসেলকে সাথে করে নিয়ে এসেছিলেন। (জন্মের পর থেকেই বাবা জেলখানায়। রাসেল কাছে পায়নি বাবাকে। তাই স্বাধীনতার পর প্রায়ই তাঁকে সাথে নিতেন বঙ্গবন্ধু)

 

নাটোর উত্তরা গণভবনে মন্ত্রী পরিষদের প্রথম বৈঠক। উদ্দেশ্য অবহেলিত উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন ভাবনা। তিনদিনের সফর। দ্বিতীয় দিনটি ছিল আনন্দঘন। জনসংযোগ এবং আনন্দ অনুষ্ঠান। বঙ্গবন্ধুকে গম্ভীরা গান গেয়ে শোনাচ্ছেন কুতুবুল আলম রকীবুদ্দিন। রাজশাহী থেকে যাওয়া সাংবাদিকদের ছোট দলটিতে সর্বকনিষ্ঠ কৌশিক আহমদ। (বর্তমানে নিউইয়র্ক এর বাঙালী সম্পাদক)

 

একফাঁকে আমি আর কৌশিক অন্দরমহল ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। রাজবাড়ীর দক্ষিণে অন্দরমহল লাগোয়া রোমান স্টাইলে চমৎকার ফুল বাগান। মাঝে ঝরণা। চারিকোণে লাইফ সাইজের সাদা মারবেল পাথরের চার নারীর ভাস্কর্য্য। স্নানান্তে চুল শুকানো, মা শিশু, নারী প্রিয় কুকুর এবং আরেকটি।

 

রাজার আবক্ষ মূর্তিও। পশ্চিমে বিশাল দিঘীর মতো পরিখা। আমি আর কৌশিক রাজবাড়ীর অন্দরমহলের সিঁড়ি বেয়ে বাগানে নেমেই ছোট্ট রাসেলকে দেখতে পেয়ে কৌতুহলী হলাম।

 

রাসেলকে প্রথমে ঝরণার পাশে দাঁড় করিয়ে ছবি তুললেন বঙ্গবন্ধুর ফটোগ্রাফার। এবার ফুলগাছের পাশে দাঁড় করিয়ে বিভিন্ন ভঙ্গিতে ছবি তুলতে থাকলেন মোহম্মদ আলম। অস্থির রাসেল। উশখুশ করছে বলে তেমন জুতসই কমপোজ করতে পারছেন না আলম। শেখ রাসেলের সাথে কথা বলার খুব ইচ্ছে হলো। প্রথমে মোহম্মদ আলমের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তিনি পাত্তা দিলেন না।

 

ছবি তোলা শেষ হতেই কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, রাসেল বাবু, এই বাগানের কোন মূর্তিটা তোমার সবচেয়ে ভালো লাগছে? আমার ধারণা ছিল রাসেল কাছাকাছি থাকা নারী কুকুর অথবা মা শিশুর ভাস্কর্যের কথা বলবে। কিন্তু রাসেল এক দৌড়ে ছুটে গেল পরিখার পানির একবারে কিনারের দিকে।

 

ছিপে মাছ ধরারত কালো মারবেল মূর্তির কাছে গিয়ে সোজা ছিপে হাত। এইবার আলম পেয়ে গেলেন সাবজেক্ট। ক্যামেরা তাক করলেন। মজা পেয়ে ছিপ চেপে ধরে এবার স্থির হয়ে থাকলো রাসেল। আলমের ফিল্ম ক্যামেরায় ক্লিক ক্লিক। প্রথমে ওভার স্মার্ট আলম আমাদের পাত্তা না দিলেও এরপর অনেকক্ষণ কথা বলেছিলেন আমাদের সাথে।

 

এরই মধ্যে সফর একদিন সংক্ষিপ্ত করে হেলিকপ্টারে উঠতে যাচ্ছেন বঙ্গবন্ধু। রাসেলের খোঁজ পড়েছে। সকলে উঠে গেলেও রাসেল নেই। আমি পুলিশকে জানালাম পেছনের বাগানে দেখুন। এরই মধ্যে উপস্থিত সকলের সাথে হাত মেলালেন বঙ্গবন্ধু। সাংবাদিকরাও বাদ গেলেন না।

 

বহু হারানোর মাঝে রাসেলের এই ছবিটিও হয়তো হারিয়ে গেছে। কদিন আগে ফেসবুকে একটি মন্তব্যর সময় কৌশিক এই স্মৃতি মনে করিয়ে দিলে আমি লিখলাম, ধন্যবাদ তোমার মেমোরিকে। তুমি মনে করিয়ে দিলে বলে আমারও মনে পড়েছে। রাসেলের সাথে আমাদের আর কী কথা হয়েছিল, তার পড়নে কী পোশাক ছিল মনে আছে কী?

 

রাসেলের পড়নে ফুলপ্যান্ট আর পায়ে ছিল বাটার সাধারণ সাদা কাপড়ের কেডস জুতা। সম্ভবতঃ স্কুলের কেডস। (সে সময় উন্নত কেডস এর চল হয়নি) বাড়ীতে ফিরে এসে আমার মাকে রাসেলের সাধারণ জুতা সম্পর্কে বলেছিলাম। তিনি অবাক হয়েছিলেন।

 

(বঙ্গবন্ধু জাদুঘর বা আওয়ামী লীগের ফেসবুক কোথাও সেই ছবিটি দেখিনি। রাসেলের শেষ দিকের ভালো কোন ছবিও খুব একটা পাওয়া গেলনা ইন্টারনেট ঘেটে। আলমের কালেকশন কখনও অনুসন্ধান করা হয়েছে কীনা তাও জানিনা।)

 

(ফিশিং উইথ হুইল ছবিটা নেট থেকে দিলাম। এই ভাস্কর্য এর হাতের কাছে হাত নিয়ে ছিপ ধরেছিল শেখ রাসেল)। ১৮ অক্টোবর ১৯৬৪ শেখ রাসেলের জন্মদিন।

 

লেখক: আহমদ সফিউদ্দিন

সংবাদকর্মী, সাবেক কর্মকর্তা (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র)