ঢাকা, ১২ মে সোমবার, ২০২৫ || ২৮ বৈশাখ ১৪৩২
good-food
৮২৭

সবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই দায়িত্ব পালন করব : শেখ হাসিনা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:৪১ ৩১ ডিসেম্বর ২০১৮  

বিরোধীদের বিভ্রান্তি, নেতৃত্বহীনতা, ভুল এবং দুর্বলতাই  রোববারের নির্বাচনে তাদের ভরাডুবির জন্য দায়ী। এ মন্তব্য করলেন আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বললেন, সবার প্রধানমন্ত্রী হিসেবেই আগামী পাঁচ বছরের জন্য দায়িত্ব পালন করবেন তিনি।

‘এটি একটি প্রশংসাযোগ্য এবং স্বচ্ছ নির্বাচন ছিল। কিন্তু বিএনপি’র নিজস্ব ভুল এবং দুর্বলতার কারণেই তাদের ভরাডুবি হয়েছে,’ যোগ করেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা আজ সোমবার বিকেলে গণভবনে নির্বাচন পর্যবেক্ষণে আসা বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে  মতবিনিময় অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন।

তিনি বিএনপি’র নেতৃত্বের শূন্যতার প্রসঙ্গ টেনে বলেন, এটাই ছিল তাদের প্রধানতম দুর্বল দিক। কারণ তাদের দলের চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া একটি দুর্নীতির মামলায় সাজাপ্রাপ্ত হয়ে কারাগারে এবং ভারপ্রাপ্ত প্রধান পলাতক তারেক রহমানও বিদেশে অবস্থান করছেন। কারণ ২০০৪ সালে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলা করে ২৪ জনকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে আদালত তাকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে।

‘জনগণ জানেই না বিরোধী দলের নেতা কে, যদিও বিশিষ্ট আইনজীবী ড. কামাল হোসেন বিরোধী ঐক্য জোট জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতৃত্ব দিয়েছেন, যাদের মূল শরিক বিএনপি,’ বলেন তিনি।

তাছাড়া, তারা প্রতিটি আসনে টাকার বিনিময়ে ৪ থেকে ৫ জন প্রার্থী দিয়েছে যে কারণে দলের আসল প্রার্থী নিয়ে জনগণের মাঝে সন্দেহ দেখা দেয় এবং তাদের অধিকাংশ প্রার্থীই জনগণের কাছে ছিল অপরিচিত।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোটের বিজয়ের আরেকটি প্রধান কারণ ছিল গত ১০ বছরে দেশের ব্যাপক উন্নয়ন। দারিদ্রের হার কমিয়ে আনা এবং জনগণের জীবন-মানের উন্নয়ন এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি করা।

তিনি বলেন, ‘জনগণ সরকারের ধারাবাহিকতা চেয়েছিল, উন্নয়ন চেয়েছিল যে কারণে স্বতঃস্ফূর্তভাবেই আমাদেরকে ভোট দিয়েছে।’

তবে, ‘আমি সবারই প্রধানমন্ত্রী’, যোগ করেন শেখ হাসিনা।

তাঁর আগামী সরকারের পরিকল্পনা সম্পর্কে শেখ হাসিনা বলেন, এরইমধ্যে যেসব উন্নয়ন পরিকল্পনাগুলো গৃহিত হয়েছে সেগুলো সমাপ্ত করা এবং তাঁর সরকারের আরেকটি অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা প্রদান করা।

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রধান দায়িত্ব হবে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকান্ডকে অব্যাহত রাখা, যাতে করে মানুষ উন্নত জীবন পেতে পারে।’

নির্বাচনকালীন সহিংসতার জন্য প্রধানমন্ত্রী বিএনপি এবং তাদের সহযোগীদের দায়ী করে বলেন, নিহতদের অধিকাংশই আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। বিএনপি-জামায়াতের সন্ত্রাসীদের হাতে তারা প্রাণ হারিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিএনপি-জামাতের লোকজন আমাদের লোকজনের ওপর হামলা করেছে, তারা ব্যালট পেপার এবং ব্যালট বা´ ছিনিয়ে নিতে চেষ্টা করেছে এবং নির্বাচনে ভীতির সঞ্চার করতে চেয়েছে। কিন্তু তাদের এই পরিকল্পনা সম্পর্কে জনগণ এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি বাহিনী সজাগ ছিল।’

তিনি বলেন, বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নির্বাচনে অংশ নেয়ার মূল কারণই ছিল বিশ্বকে দেখানো যে, নির্বাচন গ্রহণযোগ্য হয়নি বা তাদের ষড়যন্ত্র ছিল অন্যকিছুর বাস্তবায়ন করা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাঁর দলের নির্বাচনে এই বিজয় দেশের উন্নয়ন-অগ্রযাত্রাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার একটি সুযোগ। যেটি একটি দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির জন্য জরুরি।

সরকার বিগত ১০ বছরে দেশের যে উন্নয়ন করেছে তার সুফল এখন জনগণ পাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, তারা দিনকে দিন উন্নত জীবনের অধিকারী হচ্ছে এবং তিনি আশাবাদী আগামী মেয়াদে এটির আরো উত্তোরণ ঘটবে।

নির্বাচনে বিএনপি’র পরাজয়ের আরেকটি কারণ হিসেবে তাদের অতীত কর্মকান্ড, দুর্নীতি এবং বিএনপি-জামাতের ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচিও দায়ী বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

তিনি বলেন, ‘এখন জনগণ এসব (বিএনপি-জামাত) রাজনৈতিক দলকে সন্ত্রাসি সংগঠন হিসেবে মনে করে এবং তাদের দুর্নীতির কথা সকলেরই জানা, তাই জনগণ মনে করে দেশের কোন উন্নতিই তারা করতে পারবে না।’

অতীতের নির্বাচনকালীন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কথা স্মরণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের খুব বাজে অভিজ্ঞতা ছিল। আমরা এরপর এমন একটি পদ্ধতির প্রবর্তন করেছি যাতে করে জনগণ অবাধে এবং নির্ভয়ে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে।

এবারের নির্বাচনে প্রথম ভোটার হওয়া তরুণ সমাজ এবং নারীরা স্বতস্ফূর্তভাবে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পেরেছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, তিনি সব সময় বিশ্বাস করেন যেকোন অবস্থাতেই দেশে গণতান্ত্রিক ধারাকে অব্যাহত রাখতে হবে।

ভোট জনগণের অধিকার এবং এটা তাঁদের ব্যাপার তাঁরা কাকে ভোট প্রদান করবে কিন্তু যখন নির্বাচিত হয়ে গেলাম তখন আমরা সকল জনগনের জন্যই। কাজেই আমাদের সকল উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণের ক্ষেত্রে কে কোন দলের, আমাদের দলের কিনা, তা বিবেচনা করা হয় না, সকলের জন্যই গ্রহণ করা হয়। সকল মানুষের জন্য, জাতির জন্য, প্রত্যেকটি নাগরিকের জন্য। এটা আমাদের দায়িত্ব এবং আমি সেটাই মনে করি। আমরা সেভাবেই আমাদের উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করি, যে কারণেই আমরা এত ভোট পেয়েছি।

বিবিসি’র এক সাংবাদিকের নির্বাচনের স্বচ্ছতা সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পুরো ব্যাপারটিই সাজানো ছিল।

তিনি বলেন, এই ব্যালট ভর্তি বাক্সের ফুটেজটি ৩০ ডিসেম্বরের ছিল না। এটি ছিল মেয়র নির্বাচনের সময়কার, যে বাক্সটি তখন ভোট গণনার জন্য নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল।

শেখ হাসিনা বলেন, যেখানেই কোন অভিযোগ উঠেছে এবং তাঁদের গোচরে এসেছে নির্বাচন কমিশন সেখানেই তৎক্ষণাৎ ভোট গ্রহণ বন্ধ করে ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

আমরা কোন অনিয়মকে প্রশ্রয় দেই না। কোন কোন জায়গায় কিছু ঘটনা ঘটে থাকেতে পারে, কিন্তু তৎক্ষণাৎ এর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

আওয়ামী লীগের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান এইচ টি ইমামও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন।

দলের জ্যেষ্ঠ নেতা এবং নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব বিপ্লব বড়ুয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।