ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৪১৫

‘সরকারি অনিয়ম, দুর্নীতি ও অযোগ্যতার কারণে করোনা সংকট চরমে’

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৭:৫১ ১৫ জুন ২০২০  

সরকারের কার্যক্রমে অনিয়ম, দুর্নীতি ও অযোগ্যতার কারণে বাংলাদেশে মানবঘাতী করোনাভাইরাস সংকট প্রকট হচ্ছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ’র (টিআইবি) গবেষণায়  এ তথ্য উঠে এসেছে।

সংস্থাটি জানিয়েছে, পরিস্থিতির শুরু থেকে লকডাউনসহ সব পদক্ষেপের ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ মতামত উপেক্ষা করা হয়েছে। এভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণে আমলা নির্ভরতার কারণে অব্যবস্থাপনা বেড়েই চলেছে।

দেশে প্রাণঘাতী করোনা সংক্রমণ শুরুর পর সোমবার ১০০ দিন পূর্ণ হচ্ছে। এ সময়ে সরকারের ব্যস্থাপনা ও সুশাসন নিয়ে গবেষণা করে টিআইবি। এদিন সেই প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে দুর্নীতি বিরোধী এ সংস্থা। এতে সরকারের অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা ও সুশাসনের ঘাটতি নিয়ে ১০টি পর্যবেক্ষণ তুলে ধরেছে তারা।

এ প্রতিবেদনে অনিয়ম ও দুর্নীতির নেতিবাচক প্রভাবের বিষয়কে বিশেষভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। তাতে দেখা যাচ্ছে, সংক্রমণ প্রতিরোধে ব্যবস্থাপনা, চিকিৎসা থেকে শুরু করে অসহায় বা দরিদ্র মানুষকে সহায়তা দেয়ার ক্ষেত্রে দুর্নীতির প্রভাব পড়ছে।

এতে বলা হয়েছে, এ দুর্যোগকালীন পরিস্থিতিতে ৫ থেকে ১০ গুণ বাড়তি দামে মানহীন মাস্ক, পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রী সরকারিভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে। সেজন্য এসব কেনাকাটার নিয়ন্ত্রণ একটি সিন্ডিকেটের হাতে থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে।

টিআইবি অভিযোগ করেছে, একটি সিন্ডিকেট বিভিন্ন ফার্মের নামে সবধরণের কেনাকাটা নিয়ন্ত্রণ করছে।  স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের একাংশ এতে জড়িত রয়েছেন। বিভিন্ন হাসপাতালে এন-৯৫ মাস্ক লেখা মোড়কে সাধারণ সার্জিক্যাল মাস্ক সরবরাহ করার বিষয়কে তুলে ধরা হয়েছে।

কোভিড-১৯ পরীক্ষার রক্ত সংগ্রহের টিউব, সিরিঞ্জ থেকে শুরু করে পিসিআর মেশিন কেনাসহ বিভিন্ন চিকিৎসা সামগ্রীর ক্ষেত্রে নানা ধরণের দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ার কথা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর তীব্র খারাপ প্রভাব দেখতে পেয়েছে তারা। নমুনার দুর্বলতা এবং অদক্ষতার কারণে ৩০ শতাংশ টেস্টের ভুল রিপোর্ট পাওয়া যাচ্ছে।

টিআইবি বলেছে, শুরুতেই দুর্নীতির অভিযোগের ব্যাপারে ব্যবস্থা না নেয়ার কারণে তা বেড়ে গেছে। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে স্বাস্থ্য সর্ম্পকিত কার্যক্রমে। অন্যদিকে বেসরকারি সব হাসপাতালের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে সরকার ব্যর্থ হয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, অসহায় বা দরিদ্র মানুষকে সহায়তা দেয়ার কর্মসূচিগুলোতে অনিয়ম দুর্নীতি হয়েছে। পাশাপাশি তাদের তালিকা তৈরির ক্ষেত্রে রাজনৈতিক বিবেচনাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। 

অভিযোগও আনা হয়েছে, অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে সংকট যেমন বেড়েছে, একইসঙ্গে সক্ষমতা বা যোগ্যতার প্রশ্নও রয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে লকডাউন না বলে সাধারণ ছুটি নিয়ে  সমন্বয়হীনতা ছিল। সেক্ষেত্রে যোগ্যতার প্রশ্ন তোলা হয়েছে।

স্বাস্থ্য ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কর্মকাণ্ডে সমন্বয়হীনতা দেখতে পেয়েছে টিআইবি। এখনও সমন্বয়ের অভাব রয়েছে বলে মনে করছে তারা।

প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, তিন মাস পরও করোনা পরীক্ষা থেকে শুরু করে চিকিৎসার ব্যাপারে ব্যবস্থাপনায় অযোগ্যতার চিত্র রয়েছে। এসব বিষয় নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। সেজন্য তথ্য বা মত প্রকাশের ক্ষেত্রেও বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।

সংস্থাটি তুলে ধরেছে, করোনা সংক্রমণ শুরুর পর দেশে অনিয়ম-দুর্নীতি নিয়ে খবর প্রকাশের কারণে ৩৭ সাংবাদিকের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন এসব মামলা করা হয়েছে।

জবাবদিহি নিশ্চিত করে পরিস্থিতির সামাল দেয়ার জন্য ১৫ দফা সুপারিশও করেছে টিআইবি। সংকট মোকাবেলায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ-এ শিরোনামে গবেষণা প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে অনলাইনে প্রেস ব্রিফিংয়ের মাধ্যমে।

তাতে টিআইবি'র নির্বাহী পরিচালক ড: ইফতেখারুজ্জামান সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব বলেন, এ গবেষণা প্রতিবেদন সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর কাছে পাঠাবেন তারা।

এদিকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা বিভিন্ন অনিয়মের অভিযোগ নাকচ করে আসছেন। তবে প্রতিষ্ঠানটির এ প্রতিবেদনের ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

করোনাভাইরাস বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর