ঢাকা, ২৯ অক্টোবর বুধবার, ২০২৫ || ১৪ কার্তিক ১৪৩২
good-food

ওজন কমবে ভাতের মাড়ে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:৩৮ ২৯ অক্টোবর ২০২৫  

বেশিরভাগ বাড়িতেই ভাত রান্না হলে মাড়টা অবহেলায় ফেলে দেওয়া হয়। অনেকে ভাবেন, ওই পানিতে তো ভাতের সাদা ভাব ছাড়া কিছুই নেই! কিন্তু জানলে অবাক হবেন এই ভাতের মাড়ের মধ্যেই লুকিয়ে আছে অনেক পুষ্টি ও উপকারিতা, এমনকি এটি ওজন কমাতেও সাহায্য করে।

 

ভাতের মাড়ে কী আছে?

মার্কিন স্বাস্থ্য বিষয়ক ওয়েবসাইট হেলথটস-এর এক প্রতিবেদনে পুষ্টিবিদরা জানিয়েছেন, ভাতের মাড় আসলে ভিটামিন, মিনারেল এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। রান্নার সময় চালের অনেক গুরুত্বপূর্ণ উপাদান পানিতে মিশে যায়, যা পরে ভাতের মাড়ে রয়ে যায়।

এর মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি গ্রুপের বিভিন্ন উপাদান- বি১, বি২, বি৬ ও বি৯, যা দেহে শক্তি উৎপন্ন করতে এবং কোষগুলোকে সক্রিয় রাখতে সহায়তা করে।

 

এছাড়াও, ভাতের মাড়ে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাসের মতো অপরিহার্য খনিজ পদার্থ থাকে, যা শরীরের কার্যক্ষমতা বজায় রাখে। তাছাড়া এতে আছে ফেরুলিক অ্যাসিড ও অ্যালানটোইন নামক দুই শক্তিশালী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট, যা কোষকে অক্সিডেটিভ স্ট্রেস থেকে রক্ষা করে এবং ত্বককেও উজ্জ্বল রাখতে সাহায্য করে।

 

কীভাবে মাড় ওজন কমাতে সাহায্য করে?

ভাতের মাড়ের অন্যতম সুবিধা হলো এতে ক্যালরির পরিমাণ কম, কিন্তু পুষ্টিগুণ তুলনামূলক বেশি। অর্থাৎ, মাড় খেলে শরীরে বাড়তি ক্যালরি জমে না, অথচ প্রয়োজনীয় ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায়।

 

এতে থাকা রেজিস্টান্ট স্টার্চ ও অলিগোস্যাকারাইড নামের দ্রবণীয় ফাইবার হজমে সাহায্য করে, অন্ত্রের গতিবিধি ঠিক রাখে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণে রাখে। এর ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়ার প্রবণতা কমে যায়, যা ওজন কমানোর ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখে।

ভাতের মাড়ে পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও ফসফরাসের মতো অপরিহার্য খনিজ পদার্থ থাকে, যা শরীরের কার্যক্ষমতা বজায় রাখে।

 

শরীরে পানির ভারসাম্য বজায় রাখে

ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে যেমন সঠিক খাদ্যাভ্যাস দরকার, তেমনি প্রয়োজন পর্যাপ্ত হাইড্রেশনও। অনেক সময় শরীরে পানির অভাব হলে ক্ষুধা অনুভূত হয়, অথচ সেটা আসলে তৃষ্ণা।

ভাতের মাড় এই হাইড্রেশনের মাত্রা বজায় রাখতে সাহায্য করে। ফলে অপ্রয়োজনীয় নাশতা বা চটজলদি খাবার খাওয়ার অভ্যাস কমে যায়।

 

কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, ভাতের মাড়ে থাকা ইনোসিটল নামের উপাদান শরীরের মেটাবলিজম বা বিপাক প্রক্রিয়া উন্নত করে এবং ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায়। ইনসুলিন সঠিকভাবে কাজ করলে রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে, আর ওজনও বেড়ে যায় না।

 

কিভাবে খাবেন? 

সরাসরি পান করুন: ভাত রান্না শেষে পানি ছেঁকে ঠান্ডা করে নিন। এতে একটু লেবুর রস বা দারুচিনির টুকরা যোগ করে পান করতে পারেন। খাবারের আগে এক গ্লাস মাড় খেলে ক্ষুধা কম লাগবে এবং ক্যালরিও কম গ্রহণ হবে।

কোমল পানীয়র বিকল্প হিসেবে: কোমল পানীয়তে যে পরিমাণ চিনি ও ক্যালরি থাকে, তা শরীরের জন্য ক্ষতিকর। তাই তার পরিবর্তে ভাতের মাড় পান করা যেতে পারে। চাইলে এতে সামান্য পুদিনা বা আদা মিশিয়ে স্মুদি বা ভেষজ চায়ের মতোও খাওয়া যায়।

 

রান্নায় ব্যবহার করুন: স্যুপ বা স্ট্যু রান্নার সময় তরল হিসেবে ভাতের মাড় ব্যবহার করলে খাবারে বাড়ে স্বাদ ও পুষ্টি।

রাইস স্যুপ হিসেবে: একে হালকা স্যুপ হিসেবেও খাওয়া যায়, যা শরীরে শক্তি জোগায় এবং পেটও ভরায়।

 

কেন এখনই খাওয়া শুরু করবেন?

আমরা প্রায়ই ‘ডিটক্স ওয়াটার’ বা ‘সুপ ডায়ে’ এর দিকে ঝুঁকি। অথচ ভাতের মাড়, যা প্রতিদিনই আমাদের রান্নাঘরে তৈরি হয়, সেটাই হতে পারে সবচেয়ে সহজ, সাশ্রয়ী ও প্রাকৃতিক বিকল্প। শুধু সঠিকভাবে ব্যবহার করতে জানলেই এটি ওজন কমানো থেকে শুরু করে ত্বক ও হজমের যত্নে ভূমিকা রাখতে পারে।

তাই পরেরবার ভাতের মাড় ফেলে দেওয়ার আগে একটু ভেবে দেখুন- এই সামান্য সাদা তরলটাই হয়তো আপনার সুস্থ শরীরের অন্যতম গোপন রহস্য।

গুড ফুড বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর