ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৭৪৫

৫, ১০, ২৫ ও ৫০ পয়সা কী এখন অচল?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:৪২ ৩ সেপ্টেম্বর ২০২২  

দেশে ১ পয়সার ব্যবহার স্মরণে নাও হতে পারে। তবে ১ টাকায় ৪টি লজেন্স এবং ৮ আনা বা ৫০ পয়সায় আইসক্রিম কেনার কথা অনেকেই মনে করতে পারেন। এখন এসব ধাতব মুদ্রার ব্যবহার চোখে পড়ে না বললেই চলে।

 

১৯৭৩ সালে প্রথম ৪টি ধাতব মুদ্রা প্রচলন করা হয়। সেগুলো হচ্ছে ৫ পয়সা, ১০ পয়সা, ২৫ পয়সা ও ৫০ পয়সা। পরের বছর আরেকটি নতুন মুদ্রা সংযোজিত হয়, যার মূল্যমান ছিল ১ পয়সা।

 

বর্তমানে ধাতব মুদ্রাগুলো মানুষের সংগ্রহে নেই বললেই চলে। এসবের ব্যবহারও কমেছে। আগে এসব দিয়ে পণ্য কেনা যেতো। এখন সবচেয়ে কম দামের পণ্যটি কিনতে দাম পরিশোধ করতে যে পরিমাণ ধাতব মুদ্রা ব্যবহার করা হয় তা ওজনে বেশ ভারী।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের কমিউনিকেশনস অ্যান্ড পাবলিকেশন্স বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক তানভীর আহমেদ বলেন, শখের বসে অনেকেই ছোট ছোট ধাতব মুদ্রা সংগ্রহ করেন। কিন্তু এগুলোর আসলে তেমন কোনো ব্যবহার নেই।

 

বাংলাদেশ কয়েনেজ অ্যাক্ট ১৯৭২ অনুযায়ী, এ ধাতব মুদ্রাগুলো বাতিল বা অচল করা হয়নি। এখনো চাহিদা অনুযায়ী সেগুলো বিনিময়ের সুযোগ রয়েছে। এছাড়া কেন্দ্রীয় ব্যাংকও ধাতব মুদ্রা ব্যবহারে জনগণকে উৎসাহিত করে।

 

১৯৭৩ সালে প্রচলিত হওয়া মুদ্রাগুলো মূলত অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি। আর ২৫ ও ৫০ পয়সা ছিল ইস্পাতের তৈরি। সেসময় প্রচলিত ১ পয়সায় একদিকে জাতীয় প্রতীক এবং অন্যদিকে লাঙল ও শিল্প চাকার প্রতিকৃতি ছিল।

 

১০ পয়সার একদিকে জাতীয় প্রতীক এবং অন্যদিকে পানপাতা, ২৫ পয়সার একদিকে জাতীয় প্রতীক এবং অন্যদিকে রুই মাছ, ৫০ পয়সার একদিকে জাতীয় প্রতীক আর অন্যদিকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের প্রতিকৃতি ছিল।

 

১৯৭৪ সালে ১, ৫, ১০ ও ২৫ পয়সার মুদ্রা আবারো বাজারে ছাড়া হয়। সেসময় ১ পয়সার নকশায় আগের তুলনায় পরিবর্তন আসে। এর একদিকে জাতীয় প্রতীক থাকলেও অন্যদিকে অলঙ্কারসমৃদ্ধ নকশা, পুষ্পশোভিত নিদর্শন যুক্ত করা হয়।

 

১৯৭৭ সালে ১ পয়সা বাদে বাকি ৪টি ধাতব মুদ্রা বাজারে আসে। সেগুলোর মধ্যে ৫ পয়সার মুদ্রার নকশা অপরিবর্তিত থাকে। পরিবর্তন আসে অন্য ৩টি মুদ্রার নকশায়।

 

১০ পয়সার মুদ্রার একপাশে জাতীয় প্রতীক, অন্যপাশে একজন পুরুষ ও নারী কোলে বাচ্চাসহ একে অপরের অভিমুখে একই আসনে বসা, ২৫ পয়সার একদিকে জাতীয় প্রতীক এবং অন্যদিকে রয়েল বেঙ্গল টাইগার আর ৫০ পয়সায় জাতীয় প্রতীক ছাড়া ইলিশ, মুরগি, আনারস ও কলার প্রতিকৃতি যুক্ত করা হয়।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, মুদ্রার চাহিদা কতটা আছে সেটার ওপর নির্ভর করে সেই মুদ্রা বানানো হবে কি না। কারণ, এর উৎপাদনও বেশ ব্যয়বহুল।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, গত অর্থবছরে টাকা ছাপানোর জন্য খরচ হয়েছে ৩৮৪ কোটি টাকা। দেশে যেসব কাগজের তৈরি ব্যাংক নোট রয়েছে, সেগুলো বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশন থেকে ছাপানো হয়। কিন্তু ধাতব মুদ্রা দেশে নয়, অন্য দেশ থেকে তৈরি করে আনতে হয়।

 

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ কর্মকর্তা জানান, দেশে সবশেষ ২০১১-১২ অর্থবছরে ৩টি ধাতব মুদ্রা বিদেশ থেকে মিন্ট বা তৈরি করে আনা হয়েছে। সেগুলো হচ্ছে ১ টাকা, ২ টাকা এবং ৫ টাকার ধাতব মুদ্রা। এর মধ্যে ১ টাকার মুদ্রা স্লোভাকিয়া, ২ টাকার মুদ্রা জাপান এবং ৫ টাকার মুদ্রা ফিনল্যান্ড থেকে তৈরি করে আনা হয়। এছাড়া ১ টাকার চেয়ে কম মূল্যের যেসব ধাতব মুদ্রা রয়েছে, যেমন ১ পয়সা, ৫ পয়সা, ১০ পয়সা, ২৫ পয়সা এবং ৫০ পয়সা- সেগুলো তৈরি করা আপাতত বন্ধ রয়েছে।

 

কারণ হিসেবে তানভীর আহমেদ জানান, বাজারে এসব মুদ্রার যে চাহিদা রয়েছে, এর চেয়ে বেশি পরিমাণ মুদ্রা মজুত রয়েছে। ধাতব মুদ্রা ব্যবহারের ক্ষেত্র বাড়ানো গেলে সেগুলোর ব্যবহার বাড়তে পারে। ১ টাকার চেয়ে কম মূল্যমানের পয়সার কোনো ব্যবহার নেই। এমনকি ১ টাকার কয়েনের ব্যবহারও তেমন নেই। তবে ২ টাকা এবং ৫ টাকার ধাতব মুদ্রার ব্যবহার এখনো আছে। মূলত ব্যবহার না থাকার কারণেই ছোট পয়সা চোখে পড়ে না।

 

তিনি বলেন, কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে জনগণকে কয়েন বা ধাতব মুদ্রা ব্যবহারে উৎসাহিত করা হয়। এছাড়া প্রতিটা ব্যাংকের শাখায় ধাতব মুদ্রা মজুতের জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা রয়েছে। যাতে এসব মুদ্রা জনগণের কাছে বিতরণ বা লেনদেনের করা যায়। যেকোনো ব্যক্তি যেকোনো পরিমাণ ধাতব মুদ্রা ব্যাংক থেকে নিতে পারবেন। এতে কোনো বাধ্যবাধকতা নেই।

 

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ কর্মকর্তা জানান, যেহেতু ধাতব মুদ্রা জনগণ এবং অন্যান্য ব্যাংক থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকে যায়। তাই চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে যথেষ্ট পরিমাণ মুদ্রা কেন্দ্রীয় ব্যাংকে মজুত রয়েছে। যেকোনো ব্যক্তি চাহিদা অনুযায়ী, যেকোনো ধরনের ধাতব মুদ্রা এখান থেকে সংগ্রহ করতে পারবেন। তবে বিভিন্ন কারণে জনগণ ধাতব মুদ্রা বা পয়সার ব্যবহারে আগ্রহ হারিয়েছে।

 

তিনি বলেন, বর্তমানে বাজার ব্যবস্থায় পণ্য বা সেবার দাম পরিশোধের ক্ষেত্রেও পয়সার ব্যবহার নেই। সাধারণত দাম একটি পূর্ণ অঙ্কে পরিশোধ করতে হয়। যে কারণে পয়সার ব্যবহার কমে গেছে। আবার ধাতব মুদ্রা ওজনে ভারী হওয়ার কারণেও অনেকে এসব কয়েন ব্যবহার করতে চান না।