‘নবাব, আপনি হামাদের যাহা বলিবেন হামরা তাহাই করিবে‘
লাইফ টিভি 24
প্রকাশিত: ১৪:৫৬ ১০ জুলাই ২০২৩

নবাব, আপনি হামাদের যাহা বলিবেন হামরা তাহাই করিবে,
হামরা বৃটিশদের ধ্বংস করিবে -
স্মরণ -
অভিনেতা ঘোষক
মডি কোহেন
--------------------------------------------------
১৯৬৭ সালে খান আতাউর রহমান নির্মিত 'নবাব সিরাজউদ্দৌলা' চলচ্চিত্রটি যারা দেখেছেন তাদের নিশ্চয়ই মনে আছে ইষ্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির জঘন্য ব্যক্তি লর্ড ক্লাইভের বিরুদ্ধে পলাশীর আম্রকাননে নবাব সিরাজউদ্দৌলা যখন যুদ্ধে লিপ্ত ২৩ বছরের টগবগে ফরাসি সেনাপতি মিঃ সিনফ্রে তখন নবাবের দূর্গে প্রবেশ করে বলেছিলেন 'নবাব আপনি হামাদের যাহা বলিবেন হামরা তাহাই করিবে, হামরা বৃটিশদের ধ্বংস করিবে'।
সিনফ্রে চরিত্রে রূপদানকারী সেই ইহুদি সন্তান মডি কোহেনকে নিয়েই আজ আপনাদের সমীপে সামান্য কিছু লেখার প্রয়াস -
তার পুরো নাম মর্ডিকাই হাইম কোহেন। জন্ম ১৯৪৪ সালের ৩০ জুন বরেন্দ্রভূমি রাজশাহীতে। রাজশাহীর ইহুদি পরিবারের এই সন্তান মর্ডিকাই কোহেন 'মডি' নামেই ছিলেন অধিক পরিচিত।
১৫০ বছর আগে ইরানের ইস্পাহান থেকে আগত তাদের পূর্বপুরুষ ঢাকা হয়ে পরবর্তীতে রাজশাহীতে গিয়ে থিতু হন।
রাজশাহীতে কোহেন পরিবারকে এক নামে সবাই চিনতো। মর্ডির বাবা রাহেমিয কোহেনের সাইকেলের দোকান, সারাইয়ের গ্যারাজ ছিল নগরীর গণকপাড়া ও রানীবাজারে সাধনা ঔষধালয়ের মোড়ে।
সেসময় রাজশাহীতে যাতায়াতের জন্য প্রধান যানবাহন ছিল সাইকেল প্যাডেল দেয়া রিকশা। মর্ডিরও একটা মোটরসাইকেল ছিল। বাইক চালিয়ে টো টো করে ঘুরতেন সর্বনাশা পদ্মাপাড়ে। গান গেয়ে আর ঘোড়ামারা ড্রামাটিক ক্লাবে পার্টি করে দারুণ আনন্দের সাথেই ছেলেবেলাটা পার করেছেন মডি।
মর্ডিকাই কোহেন ১৯৫০ সালে কলেজিয়েট স্কুলে ভর্তি হয়েছিলেন। স্কুলজীবনে বাৎসরিক স্পোর্টস এ তার সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও উত্তেজনাপূর্ণ ছিল সাইক্লিং প্রতিযোগিতা। অবশ্যম্ভাবীভাবে দীর্ঘকায় ও সুদর্শন মডি কোহেন প্রতিযোগিতায় বরাবর প্রথম স্থান অর্জন করতেন।
পিতার সাইকেল গ্যারেজ থাকায় শৈশবেই সাইকেল চালনায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন তিনি। স্কুলে ক্যাডেট কোর ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেও তার সপ্রতিভ পদচারণ ছিল। তার সঙ্গে কোথাও বেরুলে পৌঁছতে অবধারিত দেরি হয়ে যেত! সকলেই মডির চেনা যে!
ক্লাস টেনে রাজশাহী কলেজিয়েট স্কুলের ‘নীলদর্পণ’ এ মডিই ছিলেন ডিরেক্টর। শহরের মেয়েরা ছিল তার জন্য পাগল। নানা কাজকর্ম সেরে পড়াশোনার সময়টা একটু কমই পেতেন মডি। মডি কোহেন ১৯৬২ সালে মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে রাজশাহী কলেজে নৈশ বিভাগে ভর্তি হন। ছাত্রজীবনে মডি ক্রিকেট খেলতেন, তবে সাইকেল খেলায় পারদর্শী ছিলেন।
১৯৬২ সাল থেকে তিনি রেডিও বাংলাদেশ রাজশাহীর নিয়মিত ঘোষক হিসেবে কাজ করেছেন।
মডির স্কুলের বোর্ড পরীক্ষার গল্প ছিল আরও চমৎকার! খাতায় লিখতে বসে বুঝলেন, একটা প্রশ্নও কমন পড়েনি। তাতে কী! মডি ছিলেন অকুতোভয়। সে যুগের জনপ্রিয় বাংলা গানের লিরিক লিখেই খাতা ভরিয়ে দিতেন। তরুণ বয়সে মডি অত্যন্ত সুদর্শন ছিলেন। সে সুবাদেই তিনি ঢাকায় উর্দু ও বাংলা মিলিয়ে বেশ কয়েকটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন ষাটের দশকে।
অভিনীত ছবিগুলো হলো - নবাব সিরাজউদ্দৌলা, মানুষ অমানুষ, তুম মেরে হো এবং কলকাতায় তিনটি চলচ্চিত্র সাগিনা মাহাতো, সাগিনা, এক যে ছিল দেশ।
মডি কোহেন ছিলেন তৎকালীন সময়ে উপস্থাপনা ও বাচিক শিল্পের একজন পথিকৃত। অত্যন্ত সাংস্কৃতিক ও প্রগতিশীল পরিবার ছিল তাদের। সবার সঙ্গে চমৎকার সম্পর্ক ছিল। তাদের সঙ্গে রাজশাহীর স্থানীয় মানুষদের ধর্মীয় কারণে কোনো রকম দূরত্ব ছিল না। বরং সবার কাছেই পরিবারটি ছিল খুবই গ্রহণযোগ্য আর জনপ্রিয়।
১৯৬৪ সালের ২৫ ডিসেম্বর তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান টেলিভিশনের যাত্রা শুরু হলে এর প্রথম ঘোষক ও সংবাদ পাঠক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন মডি কোহেন। তার দৃপ্ত কন্ঠে বাংলা ও ইংরেজি উচ্চারণে পূর্ব বাংলার সমাজ রাজনীতির খবর বাঙালির ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতেন তিনি।
রাজশাহীতে থাকা অবস্থায়ই ঢাকার সংস্কৃতি জগতের সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। যেহেতু তিনি ছিলেন অত্যন্ত সুদর্শন, বাংলা ও ইংরেজিতে দক্ষ তাই তাকেই দেওয়া হয় টেলিভিশনের ঘোষক ও সংবাদ পাঠকের দায়িত্ব। ১৯৬৭ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় তাদের পরিবার রাজশাহীতেই ছিল।
যুদ্ধের কারণে অবশ্য সামান্য টেনশন তৈরি হয়। তাদের রাজশাহীর বাড়িতে ঢিল ছোঁড়ার মতো ছোটখাটো উত্তেজনাও সৃষ্টি হয়েছিল। যদিও সেটা ছিল বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সেই সময় তাদের পরিবার রাজশাহী থেকে ঢাকায় চলে আসে। সম্ভবত সেই সময়েই তারা এই দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
১৯৬৮-৬৯ সালে পাকাপাকিভাবে কলকাতায় চলে যান। এরপর মুক্তিযুদ্ধের সময় কলকাতা থেকেই নানাভাবে তারা সহযোগিতা করেছেন মুক্তিকামী বাঙালিদের। রাজশাহী আর ঢাকা মিলিয়ে মডি কোহেনের বন্ধুবলয় ছিল অত্যন্ত বিস্তৃত।
মুক্তিযুদ্ধের সময় তাদের কলকাতার বাড়িতে অনেকেরই আশ্রয় হয়েছিল। তাদের বাড়ি ছাড়াও অন্যান্য জায়গায় থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছেন তারা অসহায় বাঙালিদের।
নির্ভেজাল ও নিরীহ এই পরিবার যদিও বাংলাদেশ ছেড়েছেন ১৯৬৮-৬৯ সালে। কিন্তু মাতৃভূমি বাংলাদেশের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল প্রতিনিয়ত। ১৯৭১ থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি বাংলাদেশে প্রায় ৫/৬ বার এসেছিলেন। রাজশাহী বা ঢাকা থেকে কোনো বন্ধু কলকাতায় গেলে তার বাসায় যেতেন। এমন যদি কোনো সুযোগ থাকতো এ দেশে ফিরে আসার, উনি আসতেন।
ওনার স্মৃতিতে রাজশাহী ছিল চির উজ্জ্বল।
২০১৪ সালে শেষবার বাংলাদেশে আসেন তিনি বিটিভি'র সুবর্ণজয়ন্তীর অনুষ্ঠানে। সেদিন টের পেয়েছিলেন বাংলাদেশ তাকে মোটেও ভুলে যায়নি। উষ্ণ সংবর্ধনা দেওয়া হয়েছিল তাকে। ২০১৫ সালের ১৬ ডিসেম্বর মডি কোহেন মৃত্যুবরণ করেন।
কলকাতার নারকেলডাঙায় ইহুদি সমাধিক্ষেত্রে মর্ডিকে সমাহিত করা হয়।
নারকেলডাঙার ইহুদি সমাধিক্ষেত্রে এতদিন যাবত শুধু হিব্রু, ইংরেজি ভাষার স্মৃতিফলক ব্যবহৃত হত। কিন্তু এই ‘বারেন্দ্র ইহুদি’ খ্যাত মর্ডিকাই কোহেনের সৌজন্যেই সমাধি-সৌধে প্রথম বাংলার ছোঁয়া পায়। মডির কবরের ফলকে বাংলায় লেখা আছে - ''সকলের প্রিয় পাত্র মর্ডিকাই একজন দয়ালু ও প্রশংসনীয় ব্যক্তি। ভালোবাসতেন বাংলাকে এবং তার ভাষা, কবিতা ও গানকে"।
লেখক: জাফর ওয়াজেদ
মহাপরিচালক, প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি) ও একুশে পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক
- হানিফসহ ৪ জনকে হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ
- সাকিবের ঝোড়ো ইনিংসের পরও স্বপ্নভঙ্গ হলো মন্ট্রিয়েলের
- নিরাপত্তাহীনতায় সালমানের প্রেমিকা
- আপনার নামে কয়টি সিম রেজিস্ট্রেশন করা? জানুন সহজ উপায়ে
- আসছে শীত, এসির যত্ন না নিলে বিপদ
- ফেরেশতাদের মধ্যে কি নারী-পুরুষ আছে ?
- সেনানিবাসের একটি ভবনকে ‘কারাগার’ ঘোষণা
- এইচএসসি ও সমমান পরীক্ষার ফল প্রকাশের তারিখ ঘোষণা
- বিপিএলে বিদেশি ক্রিকেটার পাওয়া নিয়ে বিসিবির শঙ্কা
- নতুন ইতিহাস গড়লেন আলিয়া
- এবার টিভিতেও আসছে ইনস্টাগ্রাম
- অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কার পেলেন তিনজন
- ‘কলিজা ছিঁড়ে ফেলার’ হুমকি নিয়ে মুখ খুললেন সারজিস
- ১০ হাজার ডলার ছাড়াবে সোনার দাম!
- পাকিস্তান সীমান্তে ট্যাংক মোতায়েন তালেবানের, বাড়ছে সংঘাতের তীব্রত
- আটক বললে ১৫ সেনা কর্মকর্তাকে আদালতে আনতে হবে: চিফ প্রসিকিউটর
- বয়স অনুযায়ী কতটুকু ভাত খাওয়া উচিত?
- বিশ্বকাপ টিকিট পেতে বাংলাদেশকে মেলাতে হবে কঠিন অঙ্ক
- সারজিসকে ঘুমের ওষুধ খাওয়ার পরামর্শ প্রিন্স মাহমুদের
- আবু ত্বহার ‘শোধরানোর’ আশা না থাকায় ফেসবুকে আক্ষেপ স্ত্রীর
- ইসরায়েলি সেনারা আমাদের কপালে লেজার তাক করেছিল: শহিদুল আলম
- জুলাই সনদ স্বাক্ষর অনুষ্ঠান পিছিয়ে গেল
- গুমে অভিযুক্ত ১৫ সেনা কর্মকর্তা হেফাজতে
- বিপিএলের সম্ভাব্য তালিকায় নোয়াখালী
- মমতার রাজনীতির স্মৃতিতে অমিতাভ
- ইলেকট্রিক গাড়ি কেনার আগে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন
- দেশে ফিরছেন শহিদুল আলম
- শেখ মুজিবের ছবি প্রদর্শন অনুচ্ছেদ বিলুপ্তি চায় ঐকমত্য কমিশন
- চুল কেন পাকে? এর প্রতিকার কী?
- ঐশ্বরিয়ার ব্রেকআপ: দেবদাস থেকে আউট সালমান, ইন শাহরুখ
- ফিল্মি স্টাইলে ‘বিএনপি কর্মীকে’ গুলি করে হত্যা, আটক ৪
- কম দামের বড় পর্দার স্মার্টফোন এল বাজারে
- চুল কেন পাকে? এর প্রতিকার কী?
- ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে আটক শহিদুল আলম ও তার সহযোগীরা
- রাতে ‘সাপ হয়ে দংশনের’ চেষ্টা স্ত্রীর,ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে স্বামীর
- রসায়নে নোবেল পেলেন তিন বিজ্ঞানী
- দেশে ফিরছেন শহিদুল আলম
- আবু ত্বহার ‘শোধরানোর’ আশা না থাকায় ফেসবুকে আক্ষেপ স্ত্রীর
- পদার্থে নোবেল জয় তিন বিজ্ঞানীর
- ‘হিজাব’ পরায় তুমুল কটাক্ষের শিকার দীপিকা
- শাকিবমুখী ছোটপর্দার নায়িকারা
- ১০ হাজার ডলার ছাড়াবে সোনার দাম!
- ভারতের সঙ্গে সম্পর্কে নীতিগত অবস্থান জানালেন তারেক রহমান
- সব ধরনের ক্রিকেট বয়কট ক্লাব সংগঠকদের
- বয়স অনুযায়ী কতটুকু ভাত খাওয়া উচিত?
- শেখ মুজিবের ছবি প্রদর্শন অনুচ্ছেদ বিলুপ্তি চায় ঐকমত্য কমিশন
- দল হিসেবে আওয়ামী লীগের বিচারের তদন্ত শুরু
- ক্লান্তি দূর করবে তরমুজ-লেবু পানি
- ইলেকট্রিক গাড়ি কেনার আগে যেসব বিষয় খেয়াল রাখবেন
- ‘শাপলা’ চেয়ে ফের চিঠি দিলো এনসিপি