ঢাকা, ১২ মে সোমবার, ২০২৫ || ২৯ বৈশাখ ১৪৩২
good-food
২৩৭

শিক্ষাবিদ অধ্যাপক এলতাস স্যার এখন কেবলই স্মৃতি

আনোয়ার হক

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৬:০৪ ১১ মে ২০২৫  

কলটা আসতো ল্যাণ্ডফোন থেকে। 
আর আসবে না ফোন টা। 
জানতে চাইবেন না - কিরে বাবা, ক্যামন আছো? তোমাদের সব খবর ভালো তো! তুমি তো আর আসোই না! ফোনও করো না! নতুন আরেকটা বই লিখছি। তুমি বাসায় আসিও। তোমার সাথে আলাপ করবো। 


এলতাস স্যার। আমার পরম শ্রদ্ধেয়, গুরুজন। 
চলেই গেলেন চিরতরে! পাড়ি জমালেন পরপারে। 
দেশের প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ, গবেষক, লেখক প্রফেসর মুহম্মদ এলতাসউদ্দিন। 


আজ ১১ মে রোববার বেলা ১২ টা ৫ মিনিটে ইন্তেকাল করলেন তিনি। ইন্না লিল্লাহে ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৯৪ বছর।  


ফোনে কথা হলো তাঁর ছেলে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্তকর্তা আকবর ভাইয়ের সঙ্গে। জানালেন, রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় দুপুরে মারা যান তিনি। স্যারের ইচ্ছে অনুযায়ী দাফন করা হবে গ্রামে মরহুমের মায়ের কবরের পাশে। রাতেই মরদেহ নিয়ে গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হবেন তারা।   

 

এর আগে বনানী চেয়ারম্যানবাড়ী জামে মসজিদে আজ বাদ এশা ও সোমবার সকাল ৯ টায় রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজে নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হবে।


১৯৩১ সালে চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের চাঁদলাই গ্রামে সম্ভ্রান্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন এলতাস উদ্দিন। তাঁর পিতা এসাহাক মন্ডল ও মা আফরোজা বেগম। ১৯৪৮ সালে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় ১ম বিভাগে প্রথম হন তিনি। 


অত্যন্ত মেধাবী প্রফেসর এলতাসউদ্দিন ১৯৭০ সালে সরকারি কর্ম কমিশনে ইন্টারভিউ দিয়ে সরাসরি উপাধ্যক্ষ নিযুক্ত হন এবং রাজশাহী টিচার্স ট্রেনিং কলেজে যোগদান করেন। এক বছরের মাথায় তিনি অধ্যক্ষ হয়ে দীর্ঘ ১১ বছর অতিবাহিত করেন।

 

তিনি ১৯৮২ হতে ১৯৮৩ পর্যন্ত প্রায় দেড় বছর যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ছিলেন। সেখান থেকে বদলি হয়ে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড, ঢাকায় চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন। সেখানে তিনি দীর্ঘ পৌনে পাঁচ বছর চাকরি করেন। ১৯৮৮ সালে অবসর গ্রহণ করেন সেখান থেকেই।


বর্ণাঢ্য কর্মজীবনে প্রফেসর মুহম্মদ এলতাসউদ্দিন এছাড়াও ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা অনুষদের ডীন, বাংলাদেশ বিজ্ঞান শিক্ষা সমিতির সভাপতি, বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিল, সিন্ডিকেট ও সিনেট সদস্য, খান বাহাদুর আহছানউল্লাহ টিচার্স ট্রেনিং কলেজের গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান, শিক্ষা প্রকল্প ও উন্নয়ন গবেষণা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী বোর্ডের ভাইস প্রেসিডেন্ট, ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট, বাংলা একাডেমির সদস্যসহ অনেক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে।  


বিশিষ্ট এ শিক্ষাবিদ - গবেষক - লেখক শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ  হিসেবে কাজ করেছেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের বিভিন্ন বই রচনাসহ অনেক পাঠ্যপুস্তক সম্পাদনা করেছেন। 


তিনি সি-ইন-এড, বি. এড. শ্রেণীর বেশ কিছু পাঠ্যপুস্তক রচনা ও সম্পাদনাও করেছেন। কয়েকটি বই অনুবাদও করেছেন তিনি। 


এলতাস উদ্দিনের রচিত উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলোর মধ্যে রয়েছে - উচ্চশিক্ষা ব্যবস্থাপনা (২০০২), শিক্ষা-সংস্কৃতি ও অন্যান্য প্রসঙ্গ (২০০৭), যাঁদের সান্নিধ্যে ধন্য হয়েছি (২০০৮), আমার দেখা মুক্তিযুদ্ধ (২০০৯), দাদীর আমলের কথা (২০১০), বাবার আমলের কথা (২০১২), চাঁপাইনবাবগঞ্জ পরিচিতি ও লোক সংস্কৃতি (২০১২), নির্বাচিত প্রবন্ধ (২০১৩) এবং বিংশ শতাব্দির চিকিৎসা বিজ্ঞান (২০১৪)। এছাড়াও রয়েছে অপ্রকাশিত অনেক লেখা।


অনেক স্মৃতি এলতাস স্যারের সঙ্গে। বাসায় কিংবা বাইরে। আমাকে পেলেই মেতে উঠতেন দারুন আড্ডায়। কথা চলতো দীর্ঘ সময় ধরে। হতো নানা বিষয়ে আলোচনা। ব্যক্তিগত আলাপ ছাপিয়ে চলতো এলাকা, তাঁর কর্মজীবনের নানা স্মৃতি, দেশ, রাজনীতি, সমাজনীতি, অর্থনীতি, ইতিহাস, সাহিত্য-সংস্কৃতি সহ নানান বিষয়ে আলোচনা। 


স্যার চলে গেলেন চিরতরে। রেখে গেলেন কতশত স্মৃতি। ভালো থাকুন ওপারে, অনেক ভালো, প্রিয় শ্রদ্ধেয় বরেণ্য এলতাস স্যার।