ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
২১৬

বিকল্প ৫ একরে বাবরি মসজিদ

অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতেই হবে রামমন্দির

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১২:৫৫ ৯ নভেম্বর ২০১৯  

ভারতের অযোধ্যার বিতর্কিত জমিতেই হবে রামমন্দির। বিকল্প পাঁচ একর জমি পাবে মুসলিমদের পক্ষের ‘সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড’। 
বিতর্কিত অযোধ্যা মামলায় এ রায় দিলেন দেশটির সুপ্রিম কোর্ট। 
প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ-এর নেতৃত্বে শীর্ষ আদালতের পাঁচ বিচারপতির সাংবিধানিক বেঞ্চ শনিবার এই রায় দিয়েছেন। সর্বসম্মতিক্রমে এই রায় বলে আদালত সূত্রের খবর দিয়েছে আনন্দবাজার।
সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের  আইনজীবী জাফরায়েব জিলানি বলেন, ‘‘আমরা সুপ্রিম কোর্টের রায়কে সম্মান জানাই। তবে এই রায়ে আমরা সন্তুষ্ট নই। পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আমরা চিন্তাভাবনা করব।’’ 
অন্যদিকে হিন্দু মহাসভার আইনজীবী বরুণ কুমার সিংহ বলেছেন, ‘‘এটা ঐতিহাসিক রায়। এই রায়ের মধ্যে দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট বৈচিত্রের মধ্যে ঐক্যের বার্তা দিয়েছে।’’
প্রধান বিচারপতি ছাড়াও বেঞ্চে রয়েছেন - বিচারপতি এসএ বোবদে, ডিওয়াই চন্দ্রচূড়, অশোক ভূষণ এবং এস আব্দুল নাজির। রায় পড়ে শোনান প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ। 
রায়ে শীর্ষ আদালত জানিয়েছেন, বিতর্কিত মূল বিতর্কিত জমি পাবে ‘রাম জন্মভূমি ন্যাস’। এই জমিতে মন্দির তৈরিতে কোনও বাধা নেই। তবে কেন্দ্রকে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ তিন মাসের মধ্যে একটি ট্রাস্ট গঠন করতে হবে। ওই ট্রাস্টের তত্ত্বাবধানেই থাকবে বিতর্কিত মূল জমি। কী ভাবে, কোন পদ্ধতিতে মন্দির তৈরি হবে, তারও পরিকল্পনা করবে ট্রাস্ট। 
অন্য দিকে সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডকে বিকল্প ৫ একর জমি দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ। নির্দেশে বলা হয়েছে, গুরুত্বপূর্ণ কোনও জায়গায় ওই জমির বন্দোবস্ত করতে হবে সরকারকে। 
রায়ে উল্লেখ করা হয়েছে, বাবরের সেনাপতি মির বাকিই যে মসজিদ তৈরি করেছিলেন, তার প্রমাণ রয়েছে। তবে সেটা কোন সালে, তা নির্ধারিত নয় এবং তারিখ গুরুত্বপূর্ণও নয়। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণের খননে অন্য কাঠামোর প্রমাণ মিলেছে। তবে সেই কাঠামো থেকে এমনও দাবি করা যায় না যে, সেগুলি মন্দিরেরই কাঠামো। 
আবার সুন্নি ওয়াকফ বোর্ডের দাবি খারিজ করে শীর্ষ আদালত বলেছেন, শুধুমাত্র বিশ্বাসের ভিত্তিতে কোনও অধিকার দাবি করা যায় না। জমির মালিকানা আইনি ভিত্তিতেই ঠিক করা উচিত। 

হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে গত কয়েক দশকে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দু ছিল এই বিরোধপূর্ণ জমি।

সেখানে হিন্দুদের দেবতা রামের জন্মভূমি বলে দাবি করা হয়েছে। ১৯৯২ সালে মসজিদটি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেয় কট্টর হিন্দুত্ববাদীরা। তখন দাঙ্গায় দুই হাজারের বেশি লোক নিহত হন।

আগামী ১৭ নভেম্বর অবসরের আগে কয়েক দশকের এই আইনিবিরোধীদের নিষ্পত্তি করলেন রঞ্জন গগৈ।

ভারতের রাজনীতিতে সব থেকে স্পর্শকাতর এ মামলার রায়কে কেন্দ্র করে গোটা উত্তরপ্রদেশকে নিরাপত্তার চাদরে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে সেখানে চার হাজার আধাসামরিক বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে। ৭৮টি রেল স্টেশনের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।

আগামী সোমবার পর্যন্ত উত্তর প্রদেশের সমস্ত স্কুল, কলেজ ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখা হয়েছে।

লক্ষ্ণৌ এবং অযোধ্যায় দুটি হেলিকপ্টার মোতায়েন রাখা হয়েছে। গতকাল রাত থেকেই গোটা উত্তর প্রদেশে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি আজ একাধিক টুইটবার্তায় লিখেছেন, “অযোধ্যা মামলার রায়ে কারও জয় বা পরাজয় হবে না।”

তিনি আরও লিখেন, “সম্প্রীতি রক্ষা করা দেশবাসীর সবার আগে কর্তব্য।”

এছাড়াও, কোনোরকম গুজবে কান না দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথ। রায়কে ঘিরে তিনি শান্তি ও সম্প্রীতি রক্ষার আবেদন জানিয়েছেন বলে সরকারি বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।

এর আগে, টানা ৪০ দিন শুনানির পর গত ১৬ অক্টোবর রায় স্থগিত করে দিয়েছিলেন প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ।

অযোধ্যায় ২ দশমিক ৭৭ একর বিতর্কিত জমির মালিকানা দাবি করে আসছিলো হিন্দু ও মুসলিম দুপক্ষই। ১৯৮০ সাল থেকে এই মামলাটি রাজনৈতিক ক্ষেত্রে গুরুত্ব পেয়েছে। ওই জায়গায় রামমন্দির তৈরি করতে চায় হিন্দু সংগঠন। মুসলিমদের পক্ষে বলা হয়েছে, সেই জায়গায় মন্দির থাকার কোনো প্রমাণ নেই। ১৯৯২ সালে বাবরি মসজিদ ভেঙে দেয় দক্ষিণপন্থী আন্দোলনকারীরা। তাদের বিশ্বাস, পুরানো মন্দির ভেঙে দিয়ে সেই জায়গায় মসজিদ গড়ে তোলা হয়েছে, যে জায়গাটি ছিলো ভগবান রামচন্দ্রের জন্মভূমি।

২০১০ সালের সেপ্টেম্বরে এলাহাবাদ হাইকোর্ট বিতর্কিত জমিটিকে তিনভাগে ভাগ করে দেয় সুন্নি ওয়াকফ বোর্ড, নির্মোহী আখড়া এবং রাম লালার মধ্যে। তবে এই রায়ে অসন্তুষ্ট হয়ে সুপ্রিম কোর্টে যায় তিনপক্ষই।

বিশ্ব বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর