ঢাকা, ০২ মে বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১৮ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৯১৮

উচ্চশিক্ষা নিতে আমেরিকা যাচ্ছেন বস্তির ছেলে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:২১ ২ আগস্ট ২০১৯  

‘যখন থেকে আমি বুঝি পড়াশুনা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, আমাকে অনেক দূর যেতে হবে, তখন থেকেই আমার স্বপ্ন ছিল, একদিন বাইরে যাব, বিদেশে গিয়ে পড়াশুনা করব, মানুষের সঙ্গে মিশবো। এভাবেই নিজের স্বপ্নের কথা বলছিলেন সিয়াম হোসেন।
তিনি থাকেন রাজধানী ঢাকার রায়েরবাজার বস্তিতে। তবে সেখানেই আটকে থাকেননি। বস্তির সংকীর্ণতা ছাড়িয়ে উচ্চশিক্ষা নিতে যাচ্ছেন আমেরিকায়। ডেয়ার টু ড্রিম (স্বপ্ন দেখার সাহস) বৃত্তি পেয়েছেন। তার আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে বৃত্তিটি দিয়েছে আমেরিকার ইউনাইটেড ওয়ার্ল্ড কলেজ (ইউডব্লিউসি)।
ইউডব্লিউসিতে ২০১৯-২০ শিক্ষাবছরে ৮০ হাজার ডলার মূল্যের পূর্ণ বৃত্তি পেয়েছেন সিয়াম। চলতি মাসেই নিউ মেক্সিকো যাচ্ছেন তিনি। তবে তার স্বপ্নপূরণের যাত্রাটি সহজ ছিল না। কিভাবে বস্তি থেকে আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন পূরণ করলেন?
সিয়াম বলেন, আমার এ অর্জনের পেছনে অবদান রয়েছে জাগো ফাউন্ডেশনের। ২০০৭ সালে এর স্কুলটি প্রতিষ্ঠিত হয়। এর প্রথম ব্যাচের শিক্ষার্থী ছিলাম আমি। ১৭ জন শিক্ষার্থী নিয়ে স্কুলের যাত্রা শুরু। তবে আসতো দুই তিন জন করে।
তিনি বলেন, বস্তির মানুষ বাচ্চাদের স্কুলে পাঠাতে চাইতো না। কারণ এক ধরনের গুজব ছিল। এখান থেকে বাচ্চাদের পাচার করা হবে। তবুও আমার মা-বাবা আমাকে ভর্তি করে। এমনকি বাড়ি বাড়ি গিয়ে অন্য বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করাতে বলতো তারা।
সিয়াম জানান, ছোটবেলা থেকেই স্কুলে যাওয়া খুব পছন্দ ছিল আমার। আশেপাশে দেখতাম স্কুলগামী কম বাচ্চাদের মুখে হাসি থাকতো। তবে আমাদের মুখে সেটা বেশি থাকতো। সেই স্কুল পরিদর্শনে বিভিন্ন দেশের নাগরিক আসতেন। তাদের সঙ্গে কথা বলে বা মিশে সেরকম হতে চাইতাম।
জাগো ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা করবি রাকসান্দ ছিলেন সিয়ামের আদর্শ একজন মানুষ। তিনি বলেন, আমার জীবনের প্রথম স্কাইপ অ্যাকাউন্ট করে দেন স্যার। এতে আমি বিদেশি নাগরিকদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারি।
আগে বড় হয়ে একজন ভালো চিকিৎসক হতে চাইতেন সিয়াম। তবে এখন জীবনের লক্ষ্য বদলে গেছে। হতে চান একজন যোগাযোগ কর্মী। তিনি বলেন, আমি অনেক ভালো কথা বলতে পারি। এটা আমার আত্মবিশ্বাস। আমার মনে হয়, এ সেক্টরে আমি অনেক ভালো করব।
এ অর্জনে শুধু সিয়ামের পরিবার নয়, প্রতিবেশীরাও অনেক খুশি। তাকে দেখেই নিজেদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ গড়ার ক্ষেত্রে অনুপ্রেরণা পান তারা। তিনি বলেন, আমাকে দিয়েই শুরু। তারা চায় আমাকে দিয়েই যেন শেষ হয়ে না যায়। ওরা আমাকে নিয়ে অনেক আশাবাদী।
অন্যদের উদ্দেশ্যে সিয়াম বলেন, আমি উদাহরণ সৃষ্টি করেছি। যেখান থেকে আজ আমি যে পর্যায়ে এসেছি, ইনশাল্লাহ আরো অনেক দূর যাবো। আমি মনে করি, তারাও পারবে। বাধা-বিপত্তি থাকে জীবনে। কিন্তু সেগুলো পার করে সাফল্যের দিকে যাওয়া সম্ভব। সেটাই হচ্ছে মূল বিষয়।

সাকসেস স্টোরি বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর