ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৩৯৮

করোনা: বদলে যাচ্ছে ক্লিনিং প্রযুক্তি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:২২ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২০  

বিশ্বব্যাপী মানুষের মধ্যে বহু নতুন অভ্যাস তৈরি করেছে করোনা। এর মধ্যে অন্যতম ২০ সেকেন্ড ধরে হাত ধোয়া, মুখে মাস্ক পরা, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি। এছাড়া ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক স্বাস্থ্যবিধির ক্ষেত্রে ঘটে গেছে বড় পরিবর্তন। সেটি হলো মানুষের সমাগম স্থলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা রক্ষা এবং জীবাণুনাশক ব্যবহারের কর্মকাণ্ড দেখা যাচ্ছে। হোটেল, বিমানবন্দর, অফিস, দোকানপাট, রেস্তোরাঁ-এমনকি রেল বা টিউব স্টেশনেও দেখা যাচ্ছে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের।

 

স্টোরেজ কোম্পানি স্ট্যাশারের প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রধান নির্বাহী জ্যাকব ওয়েডারবার্ন-ডে। হোটেলে লাগেজ রুমের মতো জায়গা ব্যবহার করে লোকজনের ব্যাগ জমা রাখেন তারা। গত এক বছরে ৩ লাখ ব্যাগ জমা রেখেছেন। তিনি বলছেন, এর আগে মালপত্র নাড়াচাড়ার সময় আমরা প্রাথমিক পরিষ্কার-পরিচ্ছনতার মানদণ্ড অনুসরণ করতাম। কিন্তু স্যানিটেশনের দিকে অগ্রাধিকার দেইনি। কোভিড-১৯ এর টিকা বের হওয়ার আগে পর্যন্ত কাস্টমারদের আশ্বস্ত করতে ক্লিনিং এর নানারকম আইডিয়া নিয়ে ভাবছি।

 

অ্যান্টি-ভাইরাস স্প্রে

বাস্তবিক হোটেল-দোকান-রেস্তোরাঁর মতো ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্ট সবাই চাইছেন নিজেদের ক্রেতারা যেন জায়গাটার পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার ওপর আস্থা রাখতে পারেন। নেদারল্যান্ডসের স্বাস্থ্য গবেষণা প্রতিষ্ঠান আর্টেমিস ওয়ান’র ভাইরোলজিস্ট বায়রন মারটিনা বলছেন, করোনা আরো বহুদিন থাকবে। তবে একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে একটা ভাইরাস যত বেশি দিন থাকে, ততই সেটার তীব্রতা কমতে থাকে। যদিও সেটা কয়েক বছরের ব্যাপার।

 

তিনি বলছেন, ভাইরাস জিনিসটা হচ্ছে একটা আবরণ দিয়ে ঢাকা ক্রোমোজোম। করোনাভাইরাসের বেলা ওই আবরণটার ওপর একটা বাড়তি স্তর আছে–যা সাধারণ সাবান লাগলেই ধ্বংস হয়ে যায়। কিন্তু সংক্রমণের ভয়ে থাকা ক্রেতা বা মক্কেলরা হয়তো আরেকটু বেশি আশ্বস্ত হতে চান।

ড্যানিশ কোম্পানি এসিটি ডট গ্লোবাল একটি স্প্রে বিক্রি করছে। যেটি ছিটিয়ে দিলে যেকোনও সারফেসের ওপর একটা স্বচ্ছ আবরণ তৈরি হয়। মাইক্রোবকে যা ভেঙে ফেলতে পারে। এ আবরণটা এক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

এটা কাজ করে আলোকিত অবস্থায়। দিনের বেলা ঘরের মধ্যে যতটুকু আলো থাকে সেটাও এর কার্যকারিতার জন্য যথেষ্ট। একটা পারিবারিক ড্রইং রুমে যতটা আলো থাকে, তেমন আট ঘণ্টার আলো এজন্য দরকার হয়। কিন্তু সমস্যা হলো, অন্ধকার জায়গায় ভালোভাবে কাজ করে না। এসিটি ডট গ্লোবালের প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা ক্রিস্টোফার লুশার বলছেন, মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য রোগ বিস্তারের ঝুঁকি থেকে মানুষকে রক্ষার পদক্ষেপ নিতে হবে।

 

অতিবেগুনি রশ্মি দিয়ে ভাইরাস ধ্বংস

বেশ কিছু কোম্পানি মনে করছে, অতিবেগুনি রশ্মি (আলট্রা-ভায়োলেট) প্রাণঘাতী ভাইরাস ধ্বংস করতে কার্যকর ভুমিকা রাখতে পারে। বিশেষ করে সবচেয়ে কম তরঙ্গ-দৈর্ঘ্যের অতিবেগুনি রশ্মি ক্ষুদ্র কোনও প্রাণীর ডিএনএ ছিন্নভিন্ন করে এবং তাকে মেরে ফেলতে পারে।

 

সোলারিস লাইটবট একটি রোবট যা অতিবেগুনি রশ্মি দিয়ে রোগসৃষ্টিকারী ভাইরাস মেরে ফেলতে পারে। এ লাইটবট স্বল্প তরঙ্গদৈর্ঘ্য ব্যবহার করে যা মানবদেহের জন্য কম ক্ষতিকর। অন্য অতিবেগুনি রশ্মির সঙ্গে সমন্বিত হয়ে এটি তাপ এবং শৈত্য সৃষ্টি করে রোগসৃষ্টিকারী অণুজীবকে বিভ্রান্ত করে। এরকম অবস্থায় অণুজীবের বেশিক্ষণ বেঁচে থাকা কঠিন হয়ে পড়ে।

 

এ লাইটবট একটা জায়গায় বসানো থাকে এবং বিভিন্ন সারফেস লক্ষ্য করে একেকবারে তিন থেকে পাঁচ মিনিট করে রশ্মি নিক্ষেপ করতে থাকে। কিন্তু অনেক বড় জায়গা-যেমন একটা স্টেডিয়াম জীবাণুমুক্ত করাটা অনেক বড় চ্যালেঞ্জ।

 

তবে লুসিড ড্রোন টেকনোলজি একটি ড্রোন তৈরি করেছে যা এক ঘণ্টায় ২৩ হাজার বর্গফুট এলাকা পরিষ্কার করতে পারে। এটা দিয়ে স্টেডিয়াম জীবাণুমুক্ত করা যাবে। কোম্পানিটি ইতোমধ্যে আমেরিকান ফুটবল লিগ এনএফএলের সঙ্গে কথা বলেছে। এরকম স্যানিটেশন ড্রোন তৈরি করার জন্য এরই মধ্যে ৬টি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি করেছে তারা।

 

তবে এসব অভিনব পদ্ধতি ব্যবহারকারীরা বলছেন, পেশাদার ক্লিনিং এর জন্য এখনো মানুষের হাতের ওপরে আর কিছু হয় না। অপরাধস্থল বা বিপজ্জনক তরল পদার্থ ছড়িয়ে পড়েছে-এমন জায়গা পরিষ্কার করার কাজ করে এনভিপিওর ফার্স্ট রেসপন্স কোম্পানি। এর মালিক হচ্ছেন রিচার্ড স্টিকলি।

 

তিনি বলছেন, বড় জায়গা পরিষ্কারের ক্ষেত্রে ড্রোন বা হাই-টেক স্প্রে সহায়ক হতে পারে। কিন্তু কিভাবে জীবাণুমুক্ত করবে সেই ব্যাপারে প্রশিক্ষণ, জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা খুবই প্রয়োজন হবে। তবে সাবান ও গরম পানিই হচ্ছে এখন পর্যন্ত করোনাভাইরাস ধ্বংস করার সবচেয়ে ভালো উপায়।