ঢাকা, ২১ ডিসেম্বর রোববার, ২০২৫ || ৭ পৌষ ১৪৩২
good-food

গলা ব্যথা হয় যেসব কারণে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৮:০০ ২১ ডিসেম্বর ২০২৫  

সকালে ঘুম ভাঙার পর অনেকেরই গলায় অস্বস্তি হয়। ঢোক গিলতে গেলে ব্যথা লাগে বা গলার ভেতরটা খসখসে মনে হয়। আমরা সাধারণত ধরে নেই এটি নিশ্চিতভাবেই সর্দি বা কাশির লক্ষণ। কিন্তু সব সময় কি ঠান্ডার কারণেই গলা ব্যথা হয় চিকিৎসাবিজ্ঞান বলছে ভিন্ন কথা। কেবল সর্দি বা কাশি নয় বরং আরও নানা কারণে আমাদের গলায় ব্যথা বা জ্বালাপোড়া হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের চিকিৎসক ডক্টর কুনাল সুদ সম্প্রতি এই বিষয়ে বিভিন্ন তথ্য ও পরামর্শ দিয়েছেন। তিনি এমন কিছু সাধারণ কারণের কথা উল্লেখ করেছেন যা হয়তো আমাদের অনেকেরই অজানা।

আমরা সচরাচর ভাবি যে ঋতু পরিবর্তন বা ঠান্ডা লাগলেই গলায় সমস্যা হবে। কিন্তু ডক্টর কুনাল সুদ বলছেন যে, এর পেছনে আরও বেশ কিছু কারণ লুকিয়ে থাকতে পারে। আসুন জেনে নিই সেই কারণগুলো সম্পর্কে।

ভাইরাস ও ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ

ডক্টর সুদের মতে গলা ব্যথার অন্যতম প্রধান কারণ হলো ভাইরাস বা হালকা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ। শরীরে জ্বর বা সর্দি কাশি দেখা দেওয়ার আগেই এই জীবাণুগুলো গলায় বাসা বাঁধতে শুরু করে। এটি অসুস্থতার একদম প্রাথমিক ধাপ। জ্বর বা নাক বন্ধ হওয়ার আগেই গলার ভেতরটা চুলকায় বা খসখসে হয়ে যায়। অর্থাৎ আপনার শরীর আপনাকে আগেই জানান দেয় যে আপনি অসুস্থ হতে চলেছেন। তাই হঠাৎ গলা ব্যথা হলে বুঝতে হবে শরীরে কোনো জীবাণুর সংক্রমণ ঘটছে।

অ্যালার্জি ও পোস্টনাসাল ড্রিপ

অনেক সময় নাকের পেছনের অংশ দিয়ে অতিরিক্ত সর্দি বা মিউকাস গলার দিকে গড়িয়ে পড়ে। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় একে বলা হয় পোস্টনাসাল ড্রিপ। সাইনাসের সমস্যা বা অ্যালার্জি থাকলে এমনটা বেশি হয়। ডক্টর সুদ জানান যে এটি গলা ব্যথার একটি বড় কারণ। বিশেষ করে রাতে ঘুমানোর সময় বা শুয়ে থাকলে নাকের সর্দি গলার পেছনে গিয়ে জমা হয়। এর ফলে সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর গলায় প্রচণ্ড অস্বস্তি ও ব্যথা অনুভূত হয়।

অ্যাসিড রিফ্লাক্স বা সাইলেন্ট রিফ্লাক্স

গলা ব্যথার আরেকটি উল্লেখযোগ্য অথচ কম পরিচিত কারণ হলো অ্যাসিড রিফ্লাক্স। আমাদের পাকস্থলী বা স্টমাক থেকে অ্যাসিড ওপরের দিকে উঠে এলে তাকে অ্যাসিড রিফ্লাক্স বলা হয়। ডক্টর সুদ ব্যাখ্যা করেছেন যে এমনকি খুব সামান্য পরিমাণ পাকস্থলীর অ্যাসিড বা পেপসিন যদি গলায় উঠে আসে তবে তা গলার নরম টিস্যুর ক্ষতি করে। এর ফলে গলায় প্রদাহ বা জ্বালাপোড়া সৃষ্টি হয়। একে অনেকে সাইলেন্ট রিফ্লাক্সও বলে থাকেন কারণ অনেক সময় বুক জ্বালাপোড়া না হলেও শুধু গলা ব্যথার মাধ্যমে এটি প্রকাশ পায়।

শুষ্ক বাতাস ও গলার ওপর চাপ

অনেক সময় কারণটা খুব সাধারণ হতে পারে। আমাদের দৈনন্দিন কিছু অভ্যাস বা পরিবেশের কারণেও গলা ব্যথা হয়। ডক্টর সুদের মতে শুষ্ক বাতাস গলার আর্দ্রতা কমিয়ে দেয়। ফলে গলা শুকিয়ে ব্যথা হতে পারে। এছাড়া যারা খুব জোরে কথা বলেন বা দীর্ঘক্ষণ কথা বলেন তাদের গলার স্বরযন্ত্রের ওপর চাপ পড়ে। একে বলা হয় ভয়েস স্ট্রেইন। এর ফলেও গলা ব্যথা হয়। পাশাপাশি ধোঁয়া ধুলোবালি বা অন্য কোনো উত্তেজক পদার্থের সংস্পর্শে এলেও গলায় অস্বস্তি তৈরি হতে পারে।

কখন চিকিৎসকের পরামর্শ নেবেন

ডক্টর কুনাল সুদ আশ্বস্ত করেছেন যে ওপরে উল্লেখিত কারণগুলোর বেশিরভাগই সাময়িক এবং ঘরোয়াভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। তবে সব গলা ব্যথাকে অবহেলা করা উচিত নয়। তিনি পরামর্শ দিয়েছেন যে যদি গলার ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হয় বা তীব্র আকার ধারণ করে তবে সতর্ক হতে হবে। ব্যথার সাথে যদি জ্বর থাকে বা ঢোক গিলতে খুব কষ্ট হয় তবে দেরি করা ঠিক হবে না। এছাড়া শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে অবশ্যই দ্রুত একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। সঠিক সময়ে সঠিক চিকিৎসা নিলে গলার ইনফেকশন বা অন্য জটিল রোগ থেকে সহজেই মুক্তি পাওয়া সম্ভব।

সুস্থ থাকার জন্য নিজের শরীরের ছোট সংকেতগুলো বোঝার চেষ্টা করা জরুরি। গলার ব্যথাকে কেবল সাধারণ ঠান্ডা লাগা ভেবে এড়িয়ে না গিয়ে এর পেছনের মূল কারণটি খুঁজে বের করা প্রয়োজন। সঠিক সময়ে সচেতন হওয়া এবং প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আপনাকে বড় কোনো শারীরিক জটিলতা থেকে মুক্তি দিতে পারে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাস আমাদের এই ধরণের সাধারণ সমস্যাগুলো থেকে দূরে রাখতে দারুণ সাহায্য করে।