ঢাকা, ১৩ নভেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৫ || ২৯ কার্তিক ১৪৩২
good-food

‘ঝাল’ লাগে, তবু ঝাল খাই কেন?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৮:৪০ ১৩ নভেম্বর ২০২৫  

বাংলাদেশি খাবারে ঝাল যেন এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

ভর্তা কিংবা ভুনা, একটু ঝাল না হলে যেন জমে না!

কিন্তু কখনো ভেবে দেখেছেন, আমরা ঝাল খাই কেন?

ঝাল খাবার খেলে অনেকেরই চোখে মুখে ‘আগুন’ ধরে যায়, তারপরও তারা মহা আনন্দে খেতে থাকে ঝাল যে কোন খাবার।  

ঝালের পেছনের বিজ্ঞান

প্রথমে জানা দরকার, ঝাল কোনো ‘স্বাদ’ নয়। এটা হলো একধরনের অনুভূতি। মরিচে থাকে ক্যাপসাইসিন নামের রাসায়নিক, যা আমাদের জিহ্বা, গলা এবং ত্বকের বিশেষ স্নায়ুতে প্রভাব ফেলে। এই স্নায়ুগুলো সাধারণত শরীরের ব্যথা বা ক্ষতিকর বস্তু শনাক্ত করে।

ক্যাপসাইসিন শরীরে প্রবেশ করলে টিআরপিভিওয়ান নামের রিসেপ্টর সক্রিয় হয়। এই রিসেপ্টর মস্তিষ্কে সংকেত পাঠায় “বিপদ আসছে!”।

তখনই শরীর প্রতিক্রিয়া দেখায়, চোখে পানি আসে, নাক দিয়ে পানি পড়ে, ঘাম হয়। আসলে শরীর ভাবছে, কিছু একটা বিপজ্জনক জিনিস খেয়ে ফেলেছি, তাই সেটি দ্রুত বের করে দিতে হবে!

তারপরও তারা মহা আনন্দে খেতে থাকে ঝাল যে কোন খাবার।  

তবুও মানুষ ঝাল ভালোবাসে কেন?

এখানেই মজাটা!

নিয়মিত ঝাল খেলে শরীর ওই রিসেপ্টরের সংবেদনশীলতা কমিয়ে ফেলে। অর্থাৎ, ধীরে ধীরে ঝাল খাওয়ার সহনশক্তি তৈরি হয়। মস্তিষ্ক বুঝতে শেখে যে, “এই উত্তাপ বিপজ্জনক নয়।”

তখন সেই ‘ঝাল’ অনুভূতি পরিণত হয় আনন্দে।

বিজ্ঞানীরা একে বলেন ‘বিবাইন মেশোইজম’।

অর্থাৎ নিরাপদ ব্যথার আনন্দ। যেমন কেউ ভয়ংকর সিনেমা দেখে মজা পায়, কেউ রোলার কোস্টারে ওঠে রোমাঞ্চের জন্য, ঠিক তেমনই ঝাল খাওয়া আমাদের মস্তিষ্কে একধরনের নিয়ন্ত্রিত চ্যালেঞ্জ তৈরি করে।

ঝাল খাওয়ার সময় শরীরে নিঃসৃত হয় এনডরফিন, যা আমাদের শরীরের অন্যান্য ব্যথা কমিয়ে মন ভালো করে দেয়। তাই অনেকের কাছে মরিচ মানে যেন একটা ছোটখাটো সুখের অনুভূতি!

ঝাল শুধু খাবারের স্বাদ বাড়ায় না, এটি আমাদের শরীর ও মস্তিষ্কে এক বিশেষ রসায়ন ঘটায়। ব্যথার সঙ্গে আনন্দের মিশেলে তৈরি হয় এক অনন্য অভিজ্ঞতা, যা হাজার বছর ধরে মানুষের খাদ্যসংস্কৃতির অংশ হয়ে আছে।

লাইফ কিচেন বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর