ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৩৭৪

রক্তে হিমোগ্লোবিনের ঘাটতি কীভাবে বুঝবেন? যেভাবে দূর করবেন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:১৫ ১৫ জুন ২০২১  

অধিকাংশ নারীই রক্তে হিমোগ্লোবিনের অভাবে ভোগেন। যাকে আমরা অ্যানিমিয়া বলি। হিমোগ্লোবিন এমন একটি প্রোটিন যা লোহিত রক্তকণিকায় থাকে এবং শরীরের নানা অংশে অক্সিজেন বহন করে নিয়ে যায়। 


রক্তক্ষয়, লোহিত রক্তকণিকা উৎপাদন কমে যাওয়া এবং লোহিত রক্তকণিকা নষ্ট হয়ে যাওয়া- এই তিন কারণে রক্তের মধ্যে আয়রনের পরিমাণ কমে যায়। রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা সঠিক রাখতে আয়রন খুবই প্রয়োজনীয় একটি উপাদান।


রক্তে হিমগ্লোবিনের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কম হলেই তাকে বলা হয় অ্যানিমিয়া বা রক্তশূন্যতা। হিমোগ্লোবিনের অভাবে দেখা দেয় দুর্বলতা, শ্বাসকষ্ট, অবসাদের মতো নানাবিধ শারীরিক জটিলতা। ঋতুচক্র, প্রেগন্যান্সির সময়ে এই সমস্যা আরও বাড়ে।


যেভাবে বুঝবেন শরীরে আয়রনের অভাব
ক্লান্তিবোধ
একটু কাজ করেই যদি হাঁপিয়ে যান বা ক্লান্তি বোধ হয়, তবে বুঝতে হবে শরীরে আয়রনের অভাব ঘটেছে। তবে অন্য অনেক কারণেও ক্লান্তিবোধ হতে পারে। তাই এই ধরনের সমস্যা দেখা দিলে চিকিত্সকের পরামর্শ নিন। 


আয়রনের অভাবে দেহে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে যায়। তখন শরীরের টিস্যুগুলিতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে অসুবিধা হয়। যখন পেশি পর্যাপ্ত পরিমাণে অক্সিজেন পায় না তখন হাঁটতে বা অন্য কোনো কাজ করতে ক্লান্ত লাগে।


বেশি চুল পড়া
অনেক কারণেই চুল পড়ে যাওয়ার সমস্যা দেখা যায়। তবে রক্তাল্পতার কারণে খুব বেশি করে চুল উঠে যায়।


ত্বক ফ্যাকাশে হওয়া
রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রা কমে গেলে ত্বক ফ্যাকাশে দেখায়। চোখের ভেতরের অংশ যদি সাদা হয়ে যায়, তাহলে বুঝতে হবে শরীরে আয়রনের ঘাটতি হয়েছে। সেই ক্ষেত্রে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে হবে।


মাথাব্যথা
প্রায়ই মাথাব্যাথায় ভুগলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। মাথায় যখন যথেষ্ট পরিমাণে অক্সিজেন পৌঁছোয় তখনই মাথাব্যথা বা মাইগ্রেনের ব্যথা দেখা দেয়। এই সমস্যাগুলো আয়রনের অভাবের লক্ষণ বা রক্তে হিমোগ্লোবিনের মাত্রার ঘাটতির কারণে হতে পারে।


স্নায়বিক অস্থিরতা
আয়রন ডেফিসিয়েনসি বা রক্তাল্পতাজনিত সমস্যার ক্ষেত্রে স্নায়বিক অস্থিরতা লক্ষ করা যায়।


হিমোগ্লোবিন বাড়াতে যা যা খাবেন
ঋতুকালে মেয়েদের শরীর থেকে প্রচুর পরিমাণ রক্ত বেরিয়ে যায়। ফলে শরীর দুর্বল হয়ে পড়ে। ডায়েটিশিয়ানদের মতে, রক্তে আয়রনের ঘাটতি মেটাতে প্রতি দিনের ডায়েটে ডিম, আপেল, তরমুজ, বেদানা, পালংশাক, ব্রোকোলি, বিট, পনির, কুমড়োর বীজ, আমন্ড, কিসমিসের মতো আয়রনসমৃদ্ধ খাবার রাখতে পারলে দ্রুত উপকার মিলবে।


আপেল
আপেলে আয়রন ছাড়াও রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন আর মিনারেল। ডায়েটিশিয়ানদের মতে, প্রতি দিন অন্তত এক কাপ আপেলের রস খেতে পারলে শরীরে আয়রনের ভারসাম্য বজায় রাখা সহজ হবে।


বেদানা
যাঁরা রক্তাল্পতায় ভুগছেন, তাঁদের জন্য বেদানা খুবই উপকারী। বেদানায় আয়রনের পাশাপাশি রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফাইবার আর প্রোটিন। তাই রক্তাল্পতার সমস্যায় বেদানা খেতে পারলে উপকার পাওয়া যায়।


কমলালেবু
কমলালেবু ভিটামিন সি-র সব চেয়ে ভালো উত্স। আর দেহে আয়রন দ্রুত শুষে নেওয়ার জন্য ভিটামিন সি সব চেয়ে জরুরি। এর ফলে হিমোগ্লোবিন উত্পাদনের গতিও বাড়ে।


মাংস
রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ দ্রুত বাড়াতে প্রয়োজন পর্যাপ্ত প্রাণিজ প্রোটিন। সকল ধরনের লাল মাংস যেমন খাসির মাংস, আয়রনের সব চেয়ে ভালো উত্সগুলোর একটি। আয়রন হিমোগ্লোবিন উত্পাদনের জন্য জরুরি। মুরগির মাংস লাল মাংস না হলেও তা দেহকে বিশাল পরিমাণে আয়রন সরবরাহ করতে পারে।


সামুদ্রিক খাদ্য
সামুদ্রিক খাদ্যে আয়রন এবং অন্যান্য খনিজ পুষ্টিকর উপাদান আছে প্রচুর পরিমাণে। সুতরাং অ্যানিমিয়া বা রক্তশুন্যতার রোগীদের প্রতি দিনের খাদ্যতালিকায় অয়েস্টার, ক্লামস এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যকর সামুদ্রিক খাদ্য রাখতে হবে।


চাল-গম-বার্লি-ওটস
চাল, গম, বার্লি এবং ওটস রক্তশুন্যতায় আক্রান্ত রোগীদের জন্য চমত্কার আয়রনসমৃদ্ধ খাবার। এ সব খাবার প্রয়োজনীয় কার্বোহাইড্রেটসও সরবরাহ করে। লাল চাল বিশেষ করে সব বয়সিদের জন্যই আয়রনের একটি সমৃদ্ধ উৎস বলে গণ্য হয়।


কলাই বা শুঁটি জাতীয় খাদ্য
কলাই বা শুঁটি জাতীয় খাদ্য তথা সয়াবিন, ছোলা এবং বিন জাতীয় খাদ্যে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। সয়াবিন বর্তমানে সবজিভোজীদের জনপ্রিয় একটি খাদ্য। এ থেকে সুস্বাদু সব খাবার তৈরি হয় এবং রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ায় দ্রুত গতিতে।


শুকনো ফল
কিসমিস, অ্যাপ্রিকট বা খুবানি এবং খেজুরে আছে প্রচুর আয়রন, ভিটামিন এবং ফাইবার। এ সব খাবার খেলে রক্তের হিমোগ্লোবিনের মাত্রাও বাড়ে দ্রুত গতিতে।


বাদাম
যেকোনো ধরনের বাদামই মানবদেহের জন্য উপকারী বলে বিবেচিত হয়। যে কারণে তরুণরা কাজুবাদাম, হিজলিবাদাম, চিনাবাদাম এবং আখরোট খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে দ্রুত গতিতে।


ডার্ক চকোলেট
শিশুদের প্রিয় খাবার ডার্ক চকোলেটেও থাকে প্রচুর পরিমাণে আয়রন। আর এ কারণেই এমনকি ডাক্তাররাও ডার্ক চকোলেট খেতে বলেন।