ঢাকা, ১৯ মার্চ মঙ্গলবার, ২০২৪ || ৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
২১৫৯

শিশু ধর্ষণ রোধে এত ঘাটতি কেন বাংলাদেশে?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:৩০ ৯ জুলাই ২০১৯  

বাংলাদেশে ধর্ষণের হাত থেকে শিশুদের রক্ষার জন্যে প্রাতিষ্ঠানিক তেমন কোনও ব্যবস্থা নেই বলে মনে করছেন ঢাকায় জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফের সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ শাবনাজ জাহিরিন। তিনি বলেন, ধর্ষণ রোধ করে শিশুদের নিরাপদ রাখার জন্য যে ধরণের অবকাঠামো, লোকবল বা সেবা দরকার সেগুলো এখনো অনেক কম।

রাজধানীর ওয়ারিতে গত শুক্রবার রাতে সাত বছরের এক শিশুর মরদেহ খুঁজে পাওয়ার পর পুলিশ জানায়, ধর্ষণের পর হত্যা করা হয় তাকে। এঘটনায় মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করার কথা জানান তারা।

মিস জাহিরিনের মতে, সমাজের বিভিন্ন পর্যায়ে বিশেষ করে কমিউনিটি লেভেলে যে ধরণে সুরক্ষা ব্যবস্থা থাকার প্রয়োজন আছে, সেগুলো এখনো কার্যকর নয়। কিছু সার্ভিস আছে বা লোকজন আছে। কিন্তু শিশুদের বিষয় বা এ ধরণের ঘটনাকে কেউই সেভাবে আমলে নেন না।

তিনি বলেন, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সামাজিক কল্যাণ কার্যক্রমের পক্ষ থেকে সোশ্যাল ওয়ার্কারদের থাকার কথা, কমিউনিটি লেভেলে এবং প্রবেশন অফিসার যার একটা বিশেষ দায়িত্ব আছে, অনেক জায়গায়ই তারা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। এরা ভালোভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত না এবং শিশুদের বিষয়গুলো যেভাবে দেখা উচিত বা কেস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম থাকা উচিত, সেগুলো এখনো ওইভাবে আমাদের দেশে গড়ে ওঠেনি।

উন্নত বিশ্বে স্কুলে শিশুদের নিরাপত্তার উদাহরণ দিয়ে বলা হয়ে থাকে যে, সেসব দেশে কোনও স্কুলে কোনও শিশুর সঙ্গে দেখা করতে হলে আগে তার একটা ছবি তোলা হয়, একটা কার্ড দেয়া হয় এবং কেউ সঙ্গে করে স্কুলের ভেতরে নিয়ে যাওয়া হয়। যাতে অন্য শিশুদের সমস্যা না হয়।

বাংলাদেশে ফ্ল্যাট বাসায় বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিশুদের রক্ষায় এ ধরণের কোন ব্যবস্থা রয়েছে কিনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে শাবনাজ বলেন, এ ধরণের সিস্টেম শহরাঞ্চলে কিছুটা দেখা গেলেও গ্রামাঞ্চলে যেসব প্রাইমারি স্কুল রয়েছে, সেখানে একেবারেই নেই। ফ্ল্যাট বাড়ি বা অন্য জায়গাগুলোতে পারিবারিক যে মেকানিজম যেমন, শিশু কোথায় যাবে, কখন যাবে, সঙ্গে কে যাবে - এগুলোর বিষয়ে তেমন কোনও মেকানিজম নেই। আর উন্নত বিশ্বের প্রতিটা দেশে একটা সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার বিভাগ থাকে। যার কর্মীরা নিয়মিত বাড়ি বাড়ি গিয়ে খোঁজ খবর করে। আমাদের দেশেও সেরকম একটা সিস্টেম থাকা উচিত।

তিনি বলেন, এটি আমাদের আইনে থাকলেও এর জন্য কোনও বাজেট বরাদ্দ হয় না, দক্ষ লোকবলও নেই, যারা এগুলো করবে।

ধর্ষণ থেকে রক্ষা করার জন্য কী করা উচিত?

ধর্ষণ থেকে শিশুদের রক্ষা করতে হলে কী করতে হবে -  এ বিষয়ে শিশু সুরক্ষা বিশেষজ্ঞ জাহিরিন স্কুল পর্যায়ে আত্মরক্ষার কৌশল শেখানোর পরামর্শ দেন। মেয়েশিশুর পাশাপাশি ছেলেশিশুকেও ধর্ষণ ও যৌন হয়রানি বিরোধী মূল্যবোধ শেখাতে হবে, যাতে ভবিষ্যতে সে এ ধরণের আচরণ না করে। ধর্ষণ রোধে মনিটরিং বা নজরদারি জোরদারের আহ্বান জানান তিনি। বারবার এ ধরণের ঘটনার পুনরাবৃত্তির জন্য এ ঘটনায় বিচার না হওয়াকে দায়ী করেন এ বিশেষজ্ঞ।

তিনি বলেন, বড় বিষয় হচ্ছে যে, মামলাগুলোর দীর্ঘসূত্রিতার কারণে শাস্তি হচ্ছে না । মামলা হচ্ছে, গ্রেফতার হচ্ছে। কিন্তু সেগুলোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হচ্ছে না। যেটা দেখে আরেক জন ভয় পাবে। তবে ধর্ষণকারীরা ধর্ষণের আগে আইনের চিন্তা করে কিনা বা আইন দিয়ে ধর্ষণ রোধ সম্ভব কিনা এমন প্রশ্নও উঠে আসে বিভিন্ন সময়।

এ বিষয়ে মিস জাহিরিন বলেন, কিছুটা হলেও সম্ভব আমার মতে। কারণ তারা দেখছে যে, তারা পার পেয়ে যাচ্ছে বা কেউ তাকে খুঁজে পাচ্ছে না খুঁজে পাবে না বা তাকে পুলিশে ধরতে পারবে না। এরকম একটা দৃষ্টিভঙ্গি চলে আসছে। এর ফলে এক ধরণের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি চলে আসে। যখন তারা দেখে যে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কোন ইচ্ছা নেই বা তারা ধরাছোঁয়ার বাইরে বা তাদের পেছনে কোনও বড় ভাইয়ের হাত আছে।

শিশু বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর