ঢাকা, ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৭১৬

হুট করে রেগে যান, বিপদ সামলাতে যা যা করবেন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:৩৩ ১৭ অক্টোবর ২০২০  

কথায় কথায় হুট করে যাদের রাগ হয়, তাদের শরীরে স্ট্রেস হরমোন রমরমা। এর প্রভাবে হৃদস্পন্দনের হার অর্থাৎ হার্ট রেট ও রক্তচাপ বাড়ে, বৃদ্ধি পায় প্রদাহের প্রবণতা। সবমিলিয়ে হৃদরোগের আশঙ্কা বাড়ে, কমে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা। করোনাকালে এর কমতি হলে ক্ষতি হতে পারে মারাত্মক।

 

বিপদ আছে আরও। ভারতীয় মনোচিকিৎসক গৌতম বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, রাগ তথা যাবতীয় নেতিবাচক আবেগ যেমন-অ্যাংজাইটি, মানসিক অবসাদ ইত্যাদি যাদের বেশি, তারা সচরাচর খুব একটা স্বাস্থ্যসচেতন নন বলে সমস্যা বাড়ে। রুটিন মেনে চলা, অসুখ–বিসুখে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া তাদের ধাতে থাকে না। বরং ধূমপান, মদ্যপান বা অন্য নেশা করে উল্টো পাল্টা খেয়ে ও শুয়ে-বসে জীবন কাটান। 

 

তিনি বলেন, এর হাত ধরে প্রেসার–সুগার–কোলেস্টেরল ইত্যাদি বেড়ে প্রস্তুত হয় হৃদরোগের ক্ষেত্র। কোভিড-১৯ হলে বাড়ে জটিলতা। প্রাণঘাতী ভাইরাসের আশঙ্কাও বাড়ে। তাই এখন আরও বেশি সংযত থাকতে হবে।

 

ভারতীয় মনোরোগ বিশেষজ্ঞ শিলাদিত্য মুখোপাধ্যায় বলেন, রাগ এমন একটি জিনিস, যা মানুষকে একা করে দেয়। এর হাত ধরে বাড়ে মানসিক চাপ, দুঃশ্চিন্তা। কখনও প্রবল অবসাদ। শরীরের জন্য সবক’টিই ক্ষতিকারক। অতএব যেকোনও মূল্যে রাগ নিয়ন্ত্রণে আনা দরকার। যার পোশাকি নাম অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট।

 

অ্যাঙ্গার ম্যানেজমেন্ট
•  আপনার যে রাগ বেশি সেটা বুঝুন। এর জন্য আপনি ছাড়া আর কেউ দায়ী নয়। যে ঘটনায় রেগে যান, তাতে অনেকেই মাথা ঠাণ্ডা রাখতে পারেন।
•  এবার ঠিক করুন রাগ কমাবেন এবং প্রস্তুতি নিয়ে কাজে নেমে পড়ুন।
• কোন কোন ঘটনায় রেগে যান তা বুঝে নিন। সেরকম পরিস্থিতি যাতে না হয়, চেষ্টা করুন। এর জন্য যদি একটু নত হতে হয় সেও ভালো।

 

• নত হতে হয়েছে বলে যদি খারাপ লাগে, ভেবে দেখুন এর বিনিময়ে আপনার শরীর, মানসিক শান্তি, সম্পর্ক-সবই রক্ষা পেল।
• চেষ্টা করেও পরিস্থিতি এড়াতে না পারলে প্রতিজ্ঞা করুন, যাই ঘটুক আপনি শুধু শুনে বা দেখে যাবেন, রাগবেন না। এমন কথা বলবেন না যাতে পরিস্থিতি জটিল হয়।
•  চেষ্টা বিফলে গেলে অস্থির হবেন না। অন্য আবেগের মতো রাগও খানিক ক্ষণের মধ্যে কমতে শুরু করবে। ধৈর্য ধরুন। মুখ বন্ধ রাখুন। সম্ভব হলে সেই জায়গা থেকে সরে হেঁটে আসুন কিছুক্ষণ। মাথায় পানি ঢালুন, ঘরের কাজ করুন, কারও সঙ্গে কথা বলে মাথা ঠাণ্ডা করে নিন।

 

• এসব সম্ভব না হলে কাজে আসবে সুইচ অফ–অন মেকানিজম এবং ভিজুয়াল ইমেজারি। এ হলো পরিস্থিতির মাঝখানে বসে গভীরভাবে অন্য পছন্দের কিছু ভাবা, যাতে মন চলে যায় অন্য কোনও জগতে। চিকিৎসকের কাছে শিখে ঘরে প্র্যাকটিস করলে বিপদের সময় কাজে লাগবে।
• ডিপ বেলি ব্রিদিং, যোগাসন, মেডিটেশনে শরীর–মন ঠাণ্ডা থাকে। চট করে রাগ হয় না বা হলেও কমে যায়।
•  অতিরিক্ত রাগে কগনিটিভ বিহেভিয়ার থেরাপি চিকিৎসা করালে কাজ হয় ম্যাজিকের মতো। নিজেও চেষ্টা করে দেখতে পারেন। যার প্রথম ধাপ নিজের মনকে বুঝে নেয়া।

 

যেমন–
১. আপনার কি চাহিদা খুব বেশি?
২. আপনার কি ইগো খুব বেশি? হতাশা বা দুঃখ এলে তা মানতে পারেন না? সেটিকে রাগ দিয়ে ঢেকে রাখেন?
৩. জীবনে যা ঘটছে তা সহজভাবে মেনে নিতে পারেন না?
৪. সমস্যা সমাধান করতে না পারলে রাগ হয়ে যায়?

 

এ ৪টি প্রশ্নের মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে রাগের কারণ। চাহিদা বেশি হলে তা না মিটলে রাগ হবে। ইগো বেশি হলে চাহিদা না মেটায় যে হতাশা বা দুঃখ হয় তা প্রকাশ করতে বা স্বীকার করতে লজ্জা হয়। ফলে তা চাপা পড়ে রাগের আড়ালে। প্রতিটি বিষয়কে অতিরিক্ত গুরুত্ব দিলে হতাশা এবং দুঃখ পাওয়ার সম্ভাবনা প্রতি পদে। 

 

হতাশা ও দুঃখ জমতে জমতে তা রাগ হিসেবে দেখা দেয়, নয়তো মানসিক অবসাদ আসে। সমস্যা সামনে, কী করব জানা নেই। এ অবস্থাতেও সঙ্গী হয় রাগ বা মানসিক অবসাদ। এ সমস্যার মধ্যে কোনটা আপনার আছে ভেবে দেখুন। খুঁজে পেলে ভাবনা–চিন্তা করে তাদের সামলাতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের সাহায্য নিন।