ঢাকা, ১৮ নভেম্বর মঙ্গলবার, ২০২৫ || ৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২
good-food
১০

ডিমের সাদা অংশ নাকি কুসুম, কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২০:৩৮ ১৭ নভেম্বর ২০২৫  

ডিম এমন এক খাবার যেটা সারা দুনিয়ার মানুষ পুষ্টির জন্য ভরসা করে। একে আমরা 'পুষ্টির পাওয়ারহাউস' বলে থাকি। কারণ এতে প্রোটিন, ভিটামিন, খনিজ পদার্থ, স্বাস্থ্যকর ফ্যাট এবং আরও অনেক প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান থাকে। ডিমের দুটি অংশ থাকে - সাদা অংশ এবং কুসুম। এই দুটি অংশের মধ্যে কোনটি বেশি স্বাস্থ্যকর, তা নিয়ে সবসময় বিতর্ক চলে।  চলুন, এই দুটি অংশের পুষ্টিগুণ এবং উপকারিতা সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক।

ডিমের সাদা অংশের পুষ্টিগুণ

একটি বড় ডিমের সাদা অংশ থেকে ১৭ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়

একটি বড় ডিমের সাদা অংশ (প্রায় ৩৩-৩৫ গ্রাম) থেকে ১৭ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। এতে আছে ৩.৬ গ্রাম প্রোটিন (সব প্রয়োজনীয় অ্যামিনো অ্যাসিড সহ), ০ চর্বি, ০.২ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ০ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল, ৫৫ মিলিগ্রাম সোডিয়াম, ৫৪ মিলিগ্রাম পটাশিয়াম এবং ০ গ্রাম চিনি।

ডিমের সাদা অংশের উপকারিতা

ডিমের সাদা অংশে এমন কিছু উপাদান আছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে কাজ করে

দ্যা হেল্থ বেনিফিটস অব এজ প্রোটিন নামক এক গবেষণা অনুযায়ী, ডিমের সাদা অংশে এমন কিছু উপাদান আছে যা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিভাইরাল এবং ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধে কাজ করে। সাদা অংশের প্রোটিন শরীরকে শক্তি দেয়, পেশি গঠনে সাহায্য করে, ক্লান্তি কমায় এবং হজমেও ভালো ভূমিকা রাখে।

একটি ডিমের সাদা অংশে মাত্র ১৭ ক্যালরি এবং প্রতি পিসে ০.২ গ্রাম ফ্যাট থাকে, তাই ফ্যাট বা কোলেস্টেরল না থাকায় ওজন কমাতে চাইলে বা কম-ক্যালরির নাস্তা চাইলে এটি একটি ভালো বিকল্প হতে পারে। তবে মনে রাখা দরকার, কাঁচা সাদা অংশ খেলে প্রোটিন সহজে শোষিত হয় না, তাই রান্না করা সাদা অংশ সেরা।

ডিমের সাদা অংশ প্রোটিন সমৃদ্ধ হলেও, এতে ডিমের কুসুমে থাকা ভিটামিন এ, ডি, ই, কে, বি১২, রিবোফ্লাভিন, ফোলেট এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিডের মতো অনেক ভিটামিন, খনিজ এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট নেই।

ডিমের সাদা অংশে ভিটামিন A, D, E, K বা B12-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ ভিটামিন নেই। তবে এতে থাকা পটাশিয়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। রিবোফ্লাভিন ভিটামিন ছানি এবং মাইগ্রেনের মাথাব্যথা প্রতিরোধে সহায়তা করে।

ডিমের কুসুমের পুষ্টিগুণ

একটি বড় ডিমের কুসুম থেকে ৫৫ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়

একটি বড় ডিমের কুসুম (প্রায় ১৭ গ্রাম) থেকে ৫৫ ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়। এতে আছে ২.৭ গ্রাম প্রোটিন, ৪.৫-৫ গ্রাম ফ্যাট, ০.৬ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ১৮৫ মিলিগ্রাম কোলেস্টেরল, ৮ মিলিগ্রাম সোডিয়াম এবং ০ গ্রাম চিনি।

ডিমের কুসুমের উপকারিতা

ডিমের কুসুম কোলিনের অন্যতম সেরা উৎস, যা মস্তিষ্কের বিকাশ, লিভারের কার্যকারিতা এবং বিপাকক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান

একটি ডিমের কুসুমে প্রায় ৫৫ ক্যালরি থাকে এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান যেমন ভিটামিন (এ, ডি, ই, কে, বি ভিটামিন), খনিজ (আয়রন, ফসফরাস, জিঙ্ক) এবং স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, যেমন ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। এছাড়াও, ডিমের কুসুম কোলিনের অন্যতম সেরা উৎস, যা মস্তিষ্কের বিকাশ, লিভারের কার্যকারিতা এবং বিপাকক্রিয়ার জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি পুষ্টি উপাদান।

একটি ডিমের কুসুমে প্রায় ১৪৭ মি.গ্রা. কোলিন পাওয়া যায়।

গবেষণায় দেখা গেছে, কুসুমে নানা ধরনের বায়োঅ্যাকটিভ প্রোটিন রয়েছে, যেগুলো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, ইমিউন সাপোর্ট এবং এমনকি ক্যান্সার প্রতিরোধে ভূমিকা রাখতে পারে। কুসুমে থাকা লুটেইন ও জিয়াজ্যানথিন চোখের জন্য ভালো এবং শরীরের বিভিন্ন কোষকে সুরক্ষা দেয়।

তাহলে কোনটা খাবেন

কুসুমে ক্যালরি এবং কোলেস্টেরল বেশি থাকলেও, এটি এমন প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে যা শুধু সাদা অংশে থাকে না

ডিমের সাদা অংশ এবং কুসুম উভয়েরই নিজস্ব ভালো ও খারাপ দিক আছে, এবং এদের ব্যবহার একজন ব্যক্তির পুষ্টিগত চাহিদার উপর নির্ভর করে। ডিমের সাদা অংশে ক্যালরি কম থাকে এবং এটি প্রায় বিশুদ্ধ প্রোটিন, তাই যারা ওজন কমাতে চান, পেশী তৈরি করতে চান বা কম ফ্যাটযুক্ত নাস্তা পছন্দ করেন, তাদের জন্য এটি আদর্শ। এতে কোলেস্টেরল নেই এবং এটি হজম করা সহজ।

অন্যদিকে, ডিমের কুসুমে পুষ্টি উপাদান বেশি থাকে, যা স্বাস্থ্যকর ফ্যাট, ভিটামিন ডি, কোলিন, বি ভিটামিন এবং লুটেইন ও জিয়াক্সানথিনের মতো অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সরবরাহ করে, যা মস্তিষ্ক, চোখ এবং হরমোনের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। কুসুমে ক্যালরি এবং কোলেস্টেরল বেশি থাকলেও, এটি এমন প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে যা শুধু সাদা অংশে থাকে না।

সুতরাং, যদি আপনি হালকা এবং উচ্চ প্রোটিনের দিকে যেতে চান, তবে সাদা অংশ বেছে নিতে পারেন। আর যদি পুষ্টির সম্পূর্ণ প্যাকেজ চান, তবে কুসুমসহ পুরো ডিম খাওয়াই সবচেয়ে ভালো।