ঢাকা, ১৭ নভেম্বর সোমবার, ২০২৫ || ২ অগ্রাহায়ণ ১৪৩২
good-food

শিশুরা কার বুদ্ধিমত্তা পায়?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:৪৪ ১৬ নভেম্বর ২০২৫  

শিশুরা তাদের বুদ্ধিমত্তা কার কাছ থেকে পায়?

বাবা থেকে নাকি মা?

এ নিয়ে নানাজনের নানা মত।

তবে গবেষকদের দাবি, বুদ্ধিমত্তা মূলত সন্তানের মায়ের জেনেটিক বৈশিষ্ট্য থেকেই আসে, বাবার নয়।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, বুদ্ধিমত্তার জন্য দায়ী জিনগুলো থাকে এক্স ক্রোমোজোমে। যেহেতু নারীদের দুটি এক্স ক্রোমোজোম থাকে, তাই এই জিনটি সন্তানের কাছে পৌঁছানোর সম্ভাবনা বেশি থাকে। অন্যদিকে পুরুষদের একটি এক্স ক্রোমোজোম থাকায় তাদের ভূমিকা তুলনামূলকভাবে কম।

আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বাবার কাছ থেকে পাওয়া কিছু উন্নত মস্তিষ্কজনিত জিন নাকি শরীরে সক্রিয়ই হয় না। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, ‘কন্ডিশন্ড জিন’ নামে পরিচিত কিছু জিন কেবল মা বা কেবল বাবার কাছ থেকে এলে কাজ করে। এর মধ্যে বুদ্ধিমত্তার জিনটি সক্রিয় হতে হলে তা মায়ের কাছ থেকেই আসতে হয়।

বাবার কাছ থেকে পাওয়া কিছু জিন নাকি শরীরে সক্রিয়ই হয় না।

গবেষণা : সেই ইঁদুরে!

জিনগতভাবে পরিবর্তিত ইঁদুর নিয়ে করা এক গবেষণায় দেখা গেছে-

• যে-সব ইঁদুরের শরীরে মাতৃসূত্রে অতিরিক্ত জিন ছিল, তাদের মস্তিষ্ক বড় হয়েছে, কিন্তু দেহ তুলনামূলক ছোট।

• আর যে-সব ইঁদুরে পিতৃ সূত্রের জিন বেশি ছিল, তাদের মস্তিষ্ক ছোট কিন্তু দেহ বড় হয়েছে।

গবেষকরা ইঁদুরের মস্তিষ্কে বিভিন্ন অংশে পর্যবেক্ষণ করে দেখেছেন- উন্নত চিন্তা, ভাষা, পরিকল্পনা ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণকারী সেরিব্রাল কর্টেক্সে পিতৃসূত্রে পাওয়া জিনের কার্যক্রম নেই। বিপরীতে খাবার, যৌন আচরণ ও আক্রমণাত্মক প্রবৃত্তির মতো মৌলিক আচরণ নিয়ন্ত্রণকারী লিম্বিক সিস্টেমে পিতৃগোষ্ঠীর জিন সক্রিয় থাকে।

মানুষের ক্ষেত্রে কী ঘটে?

ইঁদুরের ওপর গবেষণাকে বাস্তবসম্মত করতে স্কটল্যান্ডের গ্লাসগোর গবেষকরা ১৯৯৪ সাল থেকে ১২,৬৮৬ জন কিশোর–কিশোরীকে দীর্ঘমেয়াদে পর্যবেক্ষণ করেন। বয়স ছিল ১৪ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। শিক্ষা, জাতিগত পটভূমি, সামাজিক-অর্থনৈতিক অবস্থাসহ নানা বিষয় বিবেচনা করার পরও দেখা যায়, সন্তানের বুদ্ধিমত্তার সবচেয়ে শক্তিশালী পূর্বাভাস দাতা হলো মায়ের আইকিউ।

সন্তানের বুদ্ধিমত্তার পূর্বাভাস হলো মায়ের আইকিউ।

তবে শুধু জিন নয়, পরিবেশও সমান গুরুত্বপূর্ণ

গবেষণা বলছে, মানুষের ৪০ থেকে ৬০ শতাংশ বুদ্ধিমত্তা জিন থেকে আসে। বাকিটা নির্ভর করে পরিবেশ, অভিজ্ঞতা ও পরিচর্যার ওপর। এখানেও মায়ের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষণায় দেখা গেছে, মা–সন্তানের নিরাপদ আবেগিয় বন্ধন, মস্তিষ্কের কিছু অংশের বিকাশে বড় ভূমিকা রাখে। সাত বছরের দীর্ঘ গবেষণায় দেখা গেছে- যে-সব শিশু আবেগীয়ভাবে মায়ের কাছ থেকে সমর্থন পায় এবং মানসিক উদ্দীপনা পায়, তাদের হিপোক্যাম্পাস গড়ে ১০ শতাংশ পর্যন্ত বড় হয়। হিপোক্যাম্পাস হলো স্মৃতি, শেখা ও চাপ সামলানোর সঙ্গে সম্পর্কিত মস্তিষ্কের একটি প্রধান অংশ।

মায়ের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক শিশুকে নিরাপত্তা দেয়, যা তাকে পৃথিবী আবিষ্কার করতে, সমস্যা সমাধান করতে ও আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে। মনোযোগী ও যত্নশীল মায়েরা শিশুদের সমস্যা সমাধানে সাহায্য করেন, যা ভবিষ্যতে তাদের পূর্ণ সম্ভাবনা অর্জনে সহায়ক হয়।

মায়ের সঙ্গে দৃঢ় সম্পর্ক শিশুকে আত্মবিশ্বাসী হতে সাহায্য করে।

তাহলে বাবার ভূমিকা কী?

বাবারা যে গুরুত্বপূর্ণ নন তা নয়। বিজ্ঞানীরা বলছেন, বাবার কাছ থেকেও এমন অনেক জিন আসে যা আবেগ, আচরণ ও অন্তর্দৃষ্টি গঠনে ভূমিকা রাখে। যা বুদ্ধিমত্তা প্রকাশে সমানভাবে জরুরি। তাই বাবাদের নিরাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। সন্তানের বুদ্ধি বিকাশে মাতৃত্ব ও পিতৃত্ব দুটোই গুরুত্বপূর্ণ, শুধু তাদের ভূমিকা ভিন্ন ভিন্ন। 

শিশু বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর