ঢাকা, ২৫ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার, ২০২৫ || ১১ পৌষ ১৪৩২
good-food

আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান ফর দ্য কান্ট্রি: তারেক রহমান

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:৫৮ ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫  

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান দেশে ফিরে রাজধানীর ৩০০ ফিটে সংবর্ধনা মঞ্চে বক্তৃতা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, আই হ্যাভ এ প্ল্যান ফর মাই পিপলস, ফর দ্য কান্ট্রি।

তারেক রহমান তার বক্তৃতায় বলেন, “আমাদের এই প্রিয় মাতৃভূমি ১৯৭১ সালে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছিল।”

“ঠিক একইভাবে ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মাধ্যমে দেশকে আধিপত্তবাদিদের হাত থেকে রক্ষা করা হয়েছিল। একইভাবে ৯০-এর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে গিয়ে এদেশের জনগণ এদেশের খেটে খাওয়া মানুষ তাদের গণতান্ত্রিক অধিকারকে ফিরিয়ে এনেছিল। কিন্তু তারপরেও ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র থেমে থাকেনি।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “আমরা তারপর দেখেছি, একাত্তরের মতো ২০২৪ সালে এদেশের ছাত্র-জনতাসহ সর্বস্ততের মানুষ কৃষক, শ্রমিক, গৃহবধূ, নারী পুরুষ, মাদ্রাসার ছাত্রসহ দলমত নির্বিশেষে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট এদেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্বকে রক্ষা করেছিল।”

তারেক রহমান বলেন, “আজ বাংলাদেশের মানুষ কথা বলার অধিকার ফিরে পেতে চায়। তারা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার ফিরে পেতে চায়। বাংলাদেশের মানুষ চায় তারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী ন্যায্য অধিকার পাবে। আজ সময় এসেছে সবাই মিলে দেশ গড়ার।”

তিনি বলেন, “এদেশে যেমন পাহাড়ের মানুষ আছে, এদেশে সমতলের মানুষ আছে। এদেশে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিস্টানসহ বিভিন্ন ধর্মের মানুষ বসবাস করে। আমরা চাই সকলে মিলে এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তুলব, যেই বাংলাদেশের স্বপ্ন একজন মা দেখেন। একটি নিরাপদ বাংলাদেশ আমরা গড়ে তুলতে চাই।”

তারেক রহমান বলেন, “আমরা নিরাপদ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে চাই, যে বাংলাদেশে একজন নারী, একজন পুরুষ, একজন শিশু নিরাপদে ঘর থেকে বের হয়ে আবার নিরাপদে ঘরে ফিরে আসতে পারে।”

তারেক রহমান বলেন, “আজ এই বাংলাদেশের মাটিতে দাঁড়িয়ে আপনাদের সবার সামনে আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের একজন সদস্য হিসেবে আপনাদের সামনে আমি বলতে চাই— ‘আই হ্যাভ অ্যা প্ল্যান’ ফর দ্য পিপল অব মাই কান্ট্রি, ফর মাই কান্ট্রি (দেশের মানুষের জন্য, দেশের জন্য আমার একটি পরিকল্পনা আছে)। আজ এই পরিকল্পনা দেশের মানুষের স্বার্থে, দেশের উন্নয়নের জন্য, দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তনের জন্য।”

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, “যদি সেই প্ল্যান, সেই কার্যক্রম, সেই পরিকল্পনাকে বাস্তবায়ন করতে হয়– প্রিয় ভাই-বোনেরা, এই জনসমুদ্রে যত মানুষ উপস্থিত আছেন এবং সারা বাংলাদেশে গণতন্ত্রের পক্ষে যত মানুষ আছেন, প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা আমার লাগবে। প্রত্যেকটি মানুষের সহযোগিতা আমাদের লাগবে। আপনারা যদি আমাদের পাশে থাকেন, আপনারা যদি আমাদেরকে সহযোগিতা করেন, ইনশাআল্লাহ আমরা ‘আই হ্যাভ এ প্ল্যান’ বাস্তবায়ন করতে সক্ষম হব।”

তারেক রহমান বলেন, “আসুন আমরা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের দরবারে হাত তুলে প্রার্থনা করি। হে রাব্বুল আলামিন, হে একমাত্র মালিক, হে একমাত্র পরওয়ারদিগার, হে একমাত্র রহমত দানকারী, হে একমাত্র সাহায্যকারী—আজ আপনি যদি আমাদেরকে রহমত দেন, তাহলে আমরা এই দেশের মানুষ কঠোর পরিশ্রম করার মাধ্যমে আমাদের প্রত্যাশিত বাংলাদেশকে গড়ে তুলতে পারব।”

তিনি বলেন, “প্রিয় ভাই-বোনেরা, আজ আসুন আমরা সকলে মিলে প্রতিজ্ঞা করি– ইনশাআল্লাহ আগামী দিনে দেশ পরিচালনার দায়িত্বে যারা আসবে, আমরা সকলে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে ন্যায়পরায়ণতা, সেই ন্যায়পরায়ণতার আলোকে দেশ পরিচালনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।”

 বৃহস্পতিবার দুপুর ৩টা ৫২ মিনিটে পূর্বাঞ্চলের সংবর্ধনার মঞ্চে ওঠেন তিনি।

এর আগে এদিন বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে তারেক রহমানকে বহনকারী বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। সেখান  তারেক রহমানের গাড়িবহরটি দুপুর ২টা ১০ মিনিটে পূর্বাঞ্চলে ঢোকে। কিন্তু জনারণ্যের মুখে গাড়িটি সংবর্ধনা মঞ্চ পর্যন্ত যেতে পারেনি।

বিকেল ৩.৪৫ মিনিটে তারেক রহমান বাস থেকে নেমে মঞ্চের দিকে এগিয়ে যান। একে একে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ, নজরুল ইসলাম খান, আব্দুল মঈন খান, আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, সেলিমা রহমান,মেজর হাফিজ উদ্দীন খান সহ অন্যান্য নেতারা গাড়ি থেকে নেমে যান।

পরে ৩.৫০ মিনিটে মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বাস থেকে নেমে যান। এরপর ৩টা ৫২ মিনিটে সংবর্ধনা মঞ্চে উপস্থিত হয়ে নেতাকর্মীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান তারেক রহমান।

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসিত জীবন কাটিয়ে বৃহস্পতিবার লন্ডন থেকে তারেক রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-২০২ ফ্লাইট সকাল ৯টা ৫৭ মিনিটে সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। পরে তাদের বহনকারী বিমানটি হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে অবতরণ করে। তারেক রহমানের সঙ্গে ছিলেন তার সহধর্মিণী ডা. জুবাইদা রহমান ও একমাত্র সন্তান ব্যারিস্টার জাইমা রহমান। 

বিমানবন্দরে তাকে ফুলের মালা দিয়ে বরণ করেন শাশুড়ি সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানু। পারিবারিক মিলনের পর বিএনপি নেতাদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন তিনি। এ ছাড়াও বিমানবন্দরে তাকে স্বাগত জানান বিএনপির জ্যেষ্ঠ নেতারা। তিনি নেতাদের সঙ্গে কোলাকুলি ও কুশল বিনিময় করেন এবং উপস্থিত সকলকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান।

এরপর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তিনি লাল-সবুজ রঙের বাসে করে ৩০০ ফিট এলাকার গণসংবর্ধনা মঞ্চের দিকে রওয়ানা হন। তার আগমন উপলক্ষে বিমানবন্দর থেকে মঞ্চ পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে অগণিত নেতাকর্মী ভিড় জমান। বাসে বসে বা পাশে দাঁড়িয়ে তারেক রহমানও উপস্থিত সবাইকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানাচ্ছেন।

পরিবারকে বিদায় জানিয়ে তারেক রহমান লাল-সবুজ গাড়িতে উঠে গণসংবর্ধনা মঞ্চের উদ্দেশ্যে রওনা দেন। আসার পথে গাড়ির সামনে ও পাশে দাঁড়িয়ে নেতা-কর্মীদের হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান তিনি।

দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসন শেষে তার মাতৃভূমিতে ফেরার দিনে নেতাকর্মীদের ভিড়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে বিমানবন্দর থেকে কুড়িল হয়ে ৩৬ জুলাই এক্সপ্রেসওয়ে। তারেক রহমানকে বহন করা বাসটিতে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান, চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের প্রতিকৃতি রয়েছে। বাসের সামনে ‘সবার আগে বাংলাদেশ’ স্লোগান লেখা রয়েছে।

বুধবার রাত সোয়া ১২টার দিকে লন্ডনের হিথ্রো বিমানবন্দর থেকে তারেক রহমানকে বহনকারী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের নিয়মিত ফ্লাইটটি (বিজি-২০২) ঢাকার পথে রওনা হয়।

আগামী ২৭ ডিসেম্বর ভোটার হবেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান।

২০০৭-০৮ সালের সেনা নিয়ন্ত্রিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তারেক রহমান গ্রেপ্তার হয়। মুক্তি পাওয়ার পর তিনি পরিবার নিয়ে লন্ডনে চলে যান, দেশে আর ফেরেননি।

২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়াকে যেদিন জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলায় সাজা দিয়ে কারাগারে পাঠানো হলে, সেদিনই বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তারেককে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়।

এরপর থেকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে গত সাত বছর ধরে লন্ডন থেকে ভিডিও কলেই তিনি দলকে নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন।

গত বছরের ৫ অগাস্ট ক্ষমতার পট পরিবর্তনের পর আওয়ামী লীগের আমলে দেওয়া বিভিন্ন মামলা থেকে আইনি লড়াইয়ের মাধ্যমে একে একে খালাস পান তিনি। তাতে তার দেশে ফেরার ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়।

এ বছর জানুয়ারিতে লন্ডনে গিয়ে চিকিৎসা নেন খালেদা জিয়া। সেখানে দীর্ঘদিন পর ছেলের সঙ্গে তার দেখা হয়। চিকিৎসা শেষে খালেদা জিয়া দেশে ফিরলেও তারেক ফেরেননি। তারেকের ফেরা-না ফেরা নিয়ে নানান জল্পনা-কল্পনা সামনে আসে। দলীয় নেতারা স্পষ্টভাবে না বললেও, দেশে না ফেরার পেছনে তার নিরাপত্তার বিষয়টিই বারবার সামনে আসে।

এর মধ্যে বিএনপি ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের জন্য আংশিক প্রার্থী তালিকা ঘোষণা করে। সেখানে জানানো হয়, বগুড়া-৬ আসনে প্রথমবারের মত ভোট করবেন তিনি। ওই ঘোষণার পর তারেকের দেশে ফেরার সম্ভাবনা জোরালো হয়।

এরই মধ্যে ১২ ডিসেম্বর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঘোষণা দেন, তাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ২৫ ডিসেম্বর দেশে আসবেন।