ঢাকা, ২৮ মার্চ বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১৪ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৩৯০০

রোমা টাইলস এখন জনপ্রিয় ব্র্যান্ড

অর্থনীতি-কর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখছে পা-ওয়াং

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৬:০৬ ১৪ অক্টোবর ২০২০  

অভিজাতের আভিজাত্য - রোমা টাইলস এখন গুণে-মানে প্রসিদ্ধ। জনপ্রিয়তা ও ক্রেতা পছন্দের তালিকায় ক্রমেই বিশেষ জায়গা করে নিচ্ছে দেশি এ পণ্য। দেশের সিরামিক খাতে এখন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে রোমা টাইলস’র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান পা-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেড।

 

দেশের সিরামিক খাতে বিশেষ করে বেকারত্ব দূর, দক্ষ জনশক্তি তৈরি, আমদানি নির্ভরতা কমানো তথা দেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখছে প্রতিষ্ঠানটি। পা-ওয়াং এর রোমা টাইলস এখন বেশ জনপ্রিয় ব্র্যান্ড। ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ড-এর এ টাইলস সৃষ্টিশীলতা, আধুনিকতা এবং রুচি ও আভিজাত্যের প্রতীক। 

 

বগুড়ার বনানীতে প্রতিষ্ঠিত সর্বাধুনিক স্বয়ংক্রিয় মেশিনে প্রস্তুত হয় রোমা টাইলস। সারাদেশে ক্রেতা চাহিদা পূরণ করছে এ ব্র্যান্ড। হাঁটি হাঁটি করে ৬ বছরে পা দিল কোম্পানিটি। এরই মধ্যে সবধরনের ক্রেতার মাঝে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছে পা-ওয়াং এর পণ্য রোমা টাইলস।পা-ওয়াং সিরামিকের বর্তমান অবস্থা, আগামী দিনের পরিকল্পনা এবং সামগ্রিকভাবে এ খাতের সমস্যা-সম্ভাবনা নিয়ে লাইফটিভি’র সঙ্গে কথা বলেছেন, প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, দেশের সিরামিক শিল্পের পুরোধা ব্যক্তিত্ব এস এম মাহবুব আলম।

 

তিনি বলেন, উন্নত গুণগত মান, অত্যাধুনিক ডিজাইন, মনোরম নকশা, দৃষ্টিনন্দন ও শৈল্পিক ছোঁয়া থাকায় আমাদের প্রতিটি টাইলস ক্রেতাদের মাঝে গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। বিশ্বমানের পণ্য তৈরি করছে পা-ওয়াং। উন্নতমানের সঙ্গে দাম হাতের নাগালে থাকায় সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তা কিনতে পারছেন। উন্নত টাইলসের জন্য এখন আর বিদেশের দিকে তাকিয়ে থাকতে হচ্ছে না ক্রেতাদের। এর ফলে দেশের টাকা দেশেই থেকে যাচ্ছে। 

 

এ উদ্যোক্তা জানান, আধুনিকতা ও গুণগত মানের কারণে এ টাইলসের সুনাম এখন দেশের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। দেশজুড়ে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল নেটওয়ার্ক। সামগ্রিক অর্থনীতি ও কর্মসংস্থানে রাখছে ব্যাপক ভূমিকা। তার মতে, শিল্প খাতে নতুন সংযোজন ঘটিয়েছে পা-ওয়াং। বিদেশি সিরামিকের চাহিদা কমিয়ে আমদানি নির্ভরতা কমিয়েছে এটি। স্বল্প সময়ের মধ্যে অর্থনীতিতে বড় অবদান রাখছে প্রতিষ্ঠানটি।

 

মাহবুব আলম বলেন, প্রচুর সংখ্যক তরুণের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে বেকারত্বের মতো অভিশাপের দায়মোচন করছে পা-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাষ্ট্রি লিমিটেড। তিনি জানান, টাইলসের আদিভূমি ইতালি। বিশ্বজুড়ে এ সেক্টরে দেশটির রয়েছে অগাধ সুনাম। সেই মান, ঐতিহ্য  ও আধুনিকতার সমন্বয় ঘটিয়ে এগিয়ে চলেছি আমরা। আমাদের প্রতিটি পণ্য ইউরোপিয়ান স্ট্যান্ডার্ডে তৈরি।পা-ওয়াংয়ের উৎপাদিত পণ্যমানের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, এ ইন্ডাস্ট্রি ভালো অবস্থানের দিকে এগুচ্ছে। আমাদের এখন মূল পণ্য ফ্লোর  টাইলস। শিগগিরই বাজারে আসবে উন্নতমানের ওয়াল টাইলস।

 

সিরামিক সেক্টরের অতীত প্রেক্ষাপট বর্ণনা দিতে গিয়ে পা-ওয়াং এমডি  বলেন, আমাদের দেশের সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি ধীরে ধীরে ভালো অবস্থানের দিকে এগুচ্ছে। এ ইন্ডাস্ট্রির বেশ কয়েকটি সাবসেক্টর রয়েছে। এগুলো হলো বিল্ডিং ম্যাটারিয়ালসের সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি (টাইলস, স্যানিটারিওয়্যার) টেবিল ওয়্যারের সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি, অ্যাডভান্স সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি ইত্যাদি। বিল্ডিং ম্যাটারিয়ালস বলতে আমরা সহজভাবে ফ্লোর বা ওয়াল টাইলস ও স্যানিটারিওয়্যারকে বুঝি। টেবিলওয়্যার সিরামিক ইন্ডাস্ট্রি বলতে থালা-বাসন, কাপ-পিরিচ, ডাইনিংয়ে ব্যবহারযোগ্য সিরামিক পণ্যকে বুঝি। অ্যাডভান্স সিরামিকের মধ্যে রয়েছে টেলিভিশনের পার্টস থেকে কৃত্রিম দাঁতসহ স্পেস ক্রাফট-এর মত কিছু স্পর্শকাতর যন্ত্রাংশ।

 

বাংলাদেশের সিরামিক ইন্ডাস্ট্রির মার্কেট সাইজ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সিরামিক ইন্ডাস্ট্রির মার্কেট সাইজ সারা বিশ্বের হিসাবে আমাদের ইন্ডাস্ট্রি রয়েছে এক শতাংশ। বিশ্বের সবচেয়ে বড় মার্কেট শেয়ার রয়েছে চীনের, প্রায় ৬০%। বিশ্ববাজারে এর পরবর্তী অবস্থানে রয়েছে ইতালি। বাংলাদেশে সিরামিক ইন্ডাস্ট্রির মার্কেট সাইজ হলো পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে আমদানি নির্ভর হচ্ছে টেবিলওয়্যার-১∙১৪%, টাইলস-১৯∙৭৫%, স্যানিটারিওয়্যার-৭∙৯১%। দুই বছর আগে এর পরিমাণ ছিল ১৫ শতাংশ। প্রস্তুতি থাকলেও ৬/৭ টি ইন্ডাস্ট্রি কোভিডজনিত কারণে চালু হতে পারিনি। এ শিল্প খাতে তারা যুক্ত হতে পারে শিগগির।

মাহবুব আলম জানান, একসময় শখের বশে সিরামিক পণ্য ব্যবহার করতেন দেশের মানুষ। তখন সেগুলোর দাম ছিল চড়া। ফলে উচ্চবিত্তরা ছাড়া এগুলো কেউ ব্যবহার করতে পারত না। ওই সময় হাতে গোণা কিছু কোম্পানি সেগুলো সাপ্লাই দিত। তবে গেল ১ দশকে দেশে সিরামিক পণ্যের বাজারে বড় পরিবর্তন এসেছে। এদেশেই গড়ে উঠেছে প্রায় ৭০ টি ফ্যাক্টরি।

 

তিনি বলেন, প্রতিবছর স্থানীয় বাজারেই বিক্রি হচ্ছে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার সিরামিক পণ্য। গত বছর রপ্তানিও হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার পণ্য। তাই সরকার প্রতিনিয়ত চাচ্ছে আমরা যেন উন্নত পণ্য উৎপাদনে বেশি গুরুত্ব দেই। কারণ শিল্পে স্বনির্ভরতা অর্জনের মাধ্যমে বিদেশি পণ্যের ওপর নির্ভরতা পরিহার করতে পারি।

 

সরকারি প্রণোদনার বিষয়ে পা-ওয়াং এমডি বলেন, করোনাকালে এর একটি বরাদ্দ আমরাও পেয়েছি। কেউ এজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নিচ্ছে। আবার অনেকের প্রণোদনার দরকার নেই। প্রাণঘাতী ভাইরাসের কারণে অনেক ইন্ডাস্ট্রি এপ্রিল থেকে জুলাই পর্যন্ত সম্পূর্ণ বন্ধ ছিল। কেউ কেউ ৩ মাস পরই অপারেশন শুরু করেছে। স্বাস্থ্যবিধি পুরোপুরি নিশ্চিত করে গত জুলাই থেকে আমরা উৎপাদন প্রক্রিয়া অব্যাহত রেখেছি।

 

পা-ওয়াংয়ের শুরুর দিনগুলোর স্মৃতিচারণ করে এস এম মাহবুব আলম বলেন, মানুষ দক্ষ হয়ে জন্মায় না। দক্ষতা আসলে অর্জন করে নিতে হয়, দক্ষ লোকবল তৈরি করতে হয়। আমার ২৫ বছরের অভিজ্ঞতা, চিফ টেকনিক্যাল অফিসারের ২০ বছরের অভিজ্ঞতা এবং অপর ২ জনের ১ বছর ও ২ বছরের অভিজ্ঞতা দিয়ে মাত্র ৪ জন নিয়ে এ ইন্ডাস্ট্রি শুরু করেছিলাম। ফ্রেশার ইঞ্জিনিয়ারদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ দিয়ে আমরা দক্ষতা সম্পন্ন লোকবল তৈরি করেছি। এ খাতে সিরামিক ইঞ্জিনিয়ার, ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার, অটোমেশন ইঞ্জিনিয়ার, থার্মাল ইঞ্জিনিয়ারদের চাহিদা রয়েছে।

লোকজনের কাজের আগ্রহের বিষয়ে তিনি বলেন, এ খাতে কারও কাজ করার আগ্রহ অনেক বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। আমাদের কারখানা বগুড়ায়। কর্মীদের বিভিন্ন সমস্যা গুরুত্বসহকারে দেখে থাকি আমরা। আন্তর্জাতিক মান বজায় রেখে তাদের সুবিধা-অসুবিধাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি।

 

দেশের সার্বিক শিক্ষা ব্যবস্থা ও কারিকুলামের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে সিরামিক খাতের এ পুরোধা ব্যক্তিত্ব জানান, তরুণ প্রজন্ম প্রচলিত বা সাধারণ শিক্ষার বাইরে কারিগরি বিষয়ে পড়তে বেশ আগ্রহী হয়ে উঠছে। কারণ, তারা এমন বিশেষ সেক্টর বেছে নিতে চায়, যাতে চাকরির বাজারে তাদের কম প্রতিযোগিতা করতে হয়। কিংবা কাজের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে। এমনই একটি খাত হলো সিরামিক। এ খাতে বর্তমানে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ৫ লাখেরও বেশি দক্ষ লোকবল কাজ করছে। 

 

তিনি দাবি করেন, একটি ইন্ডাস্ট্রিতে ওয়ার্কার থেকে ইঞ্জিনিয়ার – সব মিলিয়ে গড়ে ৪০০’র বেশি লোকবল কাজ করে। কোনো ইন্ডাস্ট্রিতে হাজারখানেকও রয়েছে। ব্যাপকভাবে চিন্তা করলে একটি ইন্ডাস্ট্রিতে ৫ হাজার লোকের কর্মসংস্থান হয়। অদক্ষ লোকবলকে প্রশিক্ষণের মাধ্যমে দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলছি আমরা। তাদের কাজে লাগিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমরা। এটি অব্যাহত থাকলে বিদেশি পণ্যের সঙ্গে টেক্কা দেয়া যাবে। 

 

সিরামিক পণ্য রপ্তানির প্রধান বাধাগুলো চিহ্নিত করে মাহবুব আলম বলেন, এক্ষেত্রে আমরা এখনো পিছিয়ে রয়েছি। অন্য দেশের তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যটি পৌঁছে দিতে আমাদের খরচ অনেক বেশি হয়। কাঁচামাল আমদানিতে ৩২ শতাংশ ট্যাক্স দিতে হয়। বিদেশে সরাসরি ও দ্রুত পণ্য পৌঁছানোর যথাযথ কোনো ব্যবস্থা নেই। এ কারণে আমাদের পণ্য বিশ্ববাজারে পৌঁছতে অনেক বেশি মূল্য পড়ে যায়।

 

তিনি বলেন, চীনসহ অন্যান্য দেশ সরাসরি পণ্যগুলো রপ্তানি করতে পারে বলেই তারা কম মূল্যে পণ্য দিতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে এসব ক্ষেত্রে কার্যকরভাবে ব্যবস্থা নেয়া হলে আমরা দ্রুতগতিতে ধাবমান হবো। বাংলাদেশের সিরামিক খাত তখন নিশ্চয় বিশ্ববাজারে বড় একটি অংশ দখল করে নিতে সক্ষম হবে।

অর্থনীতি বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর