ঢাকা, ২৫ এপ্রিল বৃহস্পতিবার, ২০২৪ || ১২ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৫১৩

আমার বেতন কমে গেলেই তাদের প্রতিষ্ঠান লাভজনক হবে!

জিমি আমির

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৫:১২ ১ মে ২০২১  

যে কাজেই যিনি শ্রম দিচ্ছেন তিনি শ্রমজীবী। তা রাস্তায় ইট ভাঙাই হোক বা এসিরুমে বসে কাজ করাই হোক। প্রত্যেকটি কাজের পরিশ্রম আছে। শ্রমের ধরণ তো আছেই। পুরোপুরি শারীরিক, আবার পুরোপুরি মগজের আবার দুটোই হতে পারে। 


একটু ভেঙে বললে দাঁড়ায়, খেটে খাওয়া মানুষটা মগজ দিয়ে চিন্তা খুব একটা করেন না। যিনি এসিরুমে বসে কাজ করছেন তিনি চেয়ারে বসেই পাগল হয়ে যাচ্ছেন, হতাশায় চুল ছিঁড়ছেন। না, আনন্দে নয়, কাজের চাপে। আর রোদ, বৃষ্টিতে ভিজে এক অংশ কাজের পর এসিরুমে বসে যিনি বাকিটা শেষ করছেন, তাকে সমান তালে শরীর ও মাথা দুটো দিয়েই পরিশ্রম করতে হচ্ছে। (এখানে আমি অবশ্য সাংবাদিকদের বুঝিয়েছি)। কারো শ্রমকেই কি খাটো করে দেখার সুযোগ আছে?


একটা উদাহরণ দেই। ২০০৯ সালে বিডিআর বিদ্রোহের সময় সিটি কলেজ পার হয়ে হোটেল আম্বালা ইনের দিকে আইল্যাল্ডের ওপর দাঁড়িয়ে আমার ক্যামেরাম্যান ফুটেজ নিচ্ছিলেন। গোলাগুলির সেই সময়ে তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে তাকে সঙ্গ দেওয়া, কাজে সহযোগিতা করা আমার অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। ওই একই সময়ে হেলিকপ্টার থেকে লিফলেট ফেলা হচ্ছিল বিদ্রোহী সেনাদের আত্মসমর্পনের আহ্বান জানিয়ে।

 

এরপর সারাদিন ফোনো লাইভ, পরিস্থিতির সঙ্গে থেকে সন্ধ্যায় অফিসে ফিরে স্ক্রিপ্ট করে ভয়েস দিয়ে ফুটেজ কেটে নিউজ অন এয়ার করে বাসায় ফিরতে রাত ১০ টা। (সারাদিন রোদে পোড়ার পাশাপাশি ভাবতে হবে ফুটেজ কি নেবেন, স্ক্রিপ্ট কেমন হবে? টিম লিডার হিসেবে রিপোর্টারকে ভাবতে হয় ক্যামেরাম্যান, ড্রাইভার, ক্যামেরা, গাড়িসহ নিজের নিরাপত্তা নিয়েও। তিনি কি আপাদমস্তকই শ্রম দিচ্ছেন না?)।


আমাদের মায়েরা জীবনভর বিনা পারিশ্রমিকে শ্রম দিয়ে যাচ্ছেন গোটা সংসারের পেছনে। কোন শ্রমকে খাটো করে দেখবেন?


এত কথা কেন বলছি? আমার হতাশা, ক্ষোভ বা কষ্ট যাই বলি না কেন তা হচ্ছে, শ্রমের পারিশ্রমিক নিয়ে, পারিশ্রমিকের বৈষম্য নিয়ে।

 

সারাদিন গায়ে গতরে খেটে খাওয়া মানুষটির কাছে গেলে তার চোখে হতাশা দেখবেন। কারণ তিনি উপযুক্ত পারিশ্রমিক পাননি। এসি রুমে বসেও যারা কাজ করেন তাদের অনেকেই মাসের ২০ তারিখের পর থেকে চিন্তায় পড়ে যান পকেটের অবস্থা ভেবে। 


অথচ উল্টো পিঠে দেখুন, যিনি পরিশ্রম করিয়ে নিচ্ছেন তিনি কখনো নিজের বুদ্ধিতে ঠকাচ্ছেন, কখনো অন্যের বুদ্ধিতে। বুদ্ধিদাতা এই তৃতীয় ব্যক্তি তেলতেলে বুদ্ধি দিয়ে প্রায় বিনা পরিশ্রমে নিজেরটাসহ অন্যের থেকেও কেড়ে নেওয়া পারিশ্রমিকের অংশ বিশেষও পকেটে ঢোকাচ্ছেন। প্রশ্ন আসতে পারে না, যিনি নিরন্তর ঠকে যাচ্ছেন তিনি কি তার পরিপূর্ণ শ্রমটা দেবেন?

 

জীবনের তাগিদে কাজ করার বিকল্প নেই। কিন্তু সেই কাজের পিঠে যে হতাশার গল্পগুলো সেগুলো নিয়ে বিশ্লেষণ করা গেলে হয়তো একটি প্রতিষ্ঠান, কোনো কোম্পানি বা দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক বা রাজনৈতিক চিত্রটাই বদলে যেত। বাদ দেই, এসব চিন্তার জন্য অনেক বড় বড় লোক আছে। 


তবে, একটা কথা না বললেই নয়, নারী হয়েও বৈষম্যের শিকার কি কম হয়েছি? দিনশেষে বাসায় ফেরার সময় হঠাৎ জরুরী অ্যাসাইনমেন্টে আবার বের হয়েছি। সারাদিন না খেয়ে ওই রাত দুপুরে ফিরে আর খাওয়া মাথায় থাকতো না।

 

ভোর ৪টায় বের হয়ে একই স্পটে পুরুষ সহকর্মীর সঙ্গেই সমানতালে কাজ করেছি। কিন্তু হিসেবের খাতা নিয়ে বসলেই ঠিক আমার নামের জায়গায় এলেই যেন সেই মালিকরা এলোমেলো হয়ে যেতেন। অন্যতম বড় কারণ আমি নারী। আমার কম প্রাপ্তিটাই যেন নিয়ম! অন্য খরচের হিসেব মাথায় নিয়ে আমার বেতন কাঁটছাট করতেন। বিষয়টি ঠিক এরকম আমার বেতন কমে গেলেই তাদের প্রতিষ্ঠান লাভজনক হবে।


আমি শুধু বলতে চাই, কাজ করতে গেলে পরিশ্রমের বিষয় আসবেই। আর পরিশ্রম কে, কিভাবে, কোথায় করছে সেটাও বড় কথা নয়। বড় কথা হচ্ছে ন্যায্য পারিশ্রমিক। আমি আমার ন্যায্য প্রাপ্যটা পেলেই খুশি। বিশ্ব শ্রম দিবসে এটাই আমার চাওয়া।


বি:দ্র: এর মধ্যে অনেকেই ভাল আছেন, মালিক হিসেবেও। অনেক সহকর্মীও আছেন, তেলতেলে বুদ্ধি না দিয়ে অন্য সহকর্মীকে বরং সাহায্যই করেন। ভাল থাকুন তারা।