ঢাকা, ২৩ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪ || ১০ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৮৯০

আল্লাহ অপচয় পছন্দ করেন না

মুনীরউদ্দিন আহমদ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৮:১৯ ৭ ফেব্রুয়ারি ২০১৯  

আপনি কি জানেন, ছিদ্রযুক্ত কল বা নল দিয়ে প্রতি সেকেন্ডে একটি করে পানির ফোঁটা পড়লে প্রতি বছর ২ হাজার ৭০০ গ্যালন পানির অপচয় হয়?

টয়লেট একবার ফ্লাশ করলে ৩ গ্যালন পানি খরচ হয়।

বাগানে পানি দেয়ার নল দিয়ে ঘণ্টায় যে পরিমাণ পানি ব্যবহার করা হয়, সেই একই পরিমাণ পানি দিয়ে গড়ে চারজনের একটি পরিবারের সারাদিনের পানির সংস্থান হতে পারে।

প্রতিবার দাঁত ব্রাশ করার সময় ছেড়ে দেয়া কল দিয়ে যে পরিমাণ পানির অপচয় হয়, তার পরিমাণ চার গ্যালনের সমান।

বর্তমান বিশ্বে ৩৬০ কোটি মানুষ পানি সংকটে রয়েছে। আমরা এ ধরনের অপচয়ের কথা গুরুত্ব সহকারে উপলব্ধি করি না, সাবধান হই না, লজ্জিতও হই না।

দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রচুর পানি অপচয় করি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় চলাফেরা করার সময় আমি দেখি গাড়ির ড্রাইভাররা গাড়ি ধোয়ার জন্য বিপুল পরিমাণ পানি অপচয় করে। ঘরের কাজের ছেলে/মেয়ে/বুয়ারা হাঁড়িপাতিল ধোয়ার জন্য গ্যালনের পর গ্যালন পানি অপচয় করে। যে পানি ছাড়া আমাদের একদণ্ডও চলে না, সেই পানির অপচয় দেখে ভীষণ মর্মাহত হই।

জাতি হিসেবে আমাদের মিতব্যয়িতা ও সংযমের প্রচণ্ড অভাব রয়েছে। তবে পয়সা দিয়ে কেনা হলে যে কোনো কিছুর অপচয় রোধে আমরা অতিশয় তৎপর ও হুঁশিয়ার। প্রত্যেক ড্রাইভারের কাছে থাকে লম্বা মোটা পানির নল, যার একপ্রান্ত পানির কলের সঙ্গে সংযোগ দিয়ে অন্য প্রান্তের স্রোতের মতো ধাবমান পানি দিয়ে গাড়ি ধোয়া হয়। ধোয়া বললে হয়তো যথার্থ হবে না। গ্যালনের পর গ্যালন পানি দিয়ে গাড়িকে স্যাম্পু দিয়ে রীতিমতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা ঘষেমেজে গোসল করানো হয়। স্যাম্পু লাগানো ও ঘষামাজার সময় ঘণ্টা ধরে এই চলমান পানি স্রোতের বেগে অনবরত পড়তেই থাকে। পানির কল বন্ধ করা হয় না। গাড়ির মালিকরা ড্রাইভারদের এই অপচয় দেখেন, কিন্তু কিছু বলেন না। আমি প্রায়ই প্রতিবাদ করি, কিন্তু তাতে খুব বেশি কাজ হয় না।

আমি ওদের বোঝাতে চেষ্টা করি - দেশে লাখো মানুষ সামান্য বিশুদ্ধ পানির অভাবে কত কষ্টে আছে! ঢাকার বিভিন্ন অঞ্চলে সামান্য বিশুদ্ধ পানির জন্য হাজার হাজার অসহায় দরিদ্র মানুষকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কলসি বা পাত্র নিয়ে প্রতিদিন লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। কিন্তু আমার কথা কেউ শোনে না, বুঝতেও চেষ্টা করে না।

মানুষ হিসেবে আমরা দ্বিমুখীনীতিতে বিশ্বাসী। রাস্তাঘাট, বাড়িঘর, অফিস-আদালত, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, হোস্টেল, হলগুলোয় কী হারে পানি ও বিদ্যুতের অপচয় হয়, তা অচিন্তনীয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, ইন্সটিটিউট, ল্যাবরেটরি, অফিস, লাইব্রেরি, টয়লেটে পানি ও বিদ্যুতের অপচয় দেখে আমি ভীষণ কষ্ট পাই। প্রায়ই দেখি - ক্লাসরুম, কমনরুম, বারান্দা, টয়লেট, অফিস ও বিশ্রামকক্ষে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপ্রয়োজনে লাইট-ফ্যান ও এসি চলছে, পানি পড়ছে; কারও নজর কাড়ছে না। ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস শেষ করে চলে গেছে, অথচ লাইট জ্বলছে; ফ্যান চলছে ফুলস্পিডে। চোখে পড়লে আমি স্টাফদের ডেকে বন্ধ করতে বলি। অথচ এই আমরাই বাসাবাড়িতে সম্পূর্ণ ভিন্ন রকম আচরণ করি। বিদ্যুৎ ও পানির বিল বাড়ার ভয়ে এক ফোঁটা পানি বা এক সেকেন্ডেরও বেশি লাইট ফ্যান চলতে দিই না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোয়ও বিদ্যুৎ ও পানির অপচয় কম নয়। আমাদের পানির অপচয় বন্ধ করা দরকার। পানি, বিদ্যুৎ বা অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের অপচয় রীতিমতো অপরাধ। মনে রাখা দরকার, কোনো অপচয়ই আল্লাহ পছন্দ করেন না। যে কোনো অপচয়ের জন্য আমাদের আখেরাতে আল্লাহর কাছে জবাবদিহি করতে হবে। ইসলামের দৃষ্টিতে অপচয় বড় ধরনের গুনাহর কাজ।

আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনের সূরাহ বনি ইসরাইলের ২৬ এবং ২৭ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘আত্মীয়স্বজনকে তার হক দান কর এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও। এবং কিছুতেই অপচয় করো না। নিশ্চয় অপচয়কারীরা শয়তানের ভাই। শয়তান স্বীয় পালনকর্তার প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।

লেখক : অধ্যাপক, ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

[email protected]