ঢাকা, ১৯ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ৬ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
২৪০৮

করোনা: ফেসবুক প্রেসক্রিপশন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৭:১৬ ৮ জুন ২০২০  

আপনি কি চিকিৎসক? আপনি কি ফার্মাসিস্ট? রোগ ও ওষুধ বিশেষজ্ঞ? আপনি যদি এ সম্প্রদায়ের কেউ না হয়ে থাকেন, তাহলে অনুগ্রহ করে রোগ ও ওষুধ সম্পর্কে কাউকে কোনো পরামর্শ দেবেন না।

আমি করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকেই দেখছি, এক শ্রেণির অনভিজ্ঞ মানুষ ফেসবুকে নানা পদের ওষুধ সম্বলিত প্রেসক্রিপশন আপলোড করে চলেছেন। একইসঙ্গে করোনা রোগীদের এসব ওষুধ সেবন করার জন্য পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। এসব প্রেসক্রিপশন আপলোড করার সময় কোনো না কোনো চিকিৎসকের রেফারেন্সও যোগ করে দিচ্ছেন।

একজন চিকিৎসক কোনো রোগীকে ফ্রিডম অব জাজমেন্ট প্রয়োগ করে প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রেসক্রাইব করতে পারেন। তবে তার প্রেসক্রাইব করা ভুল ওষুধের কারণে কোনো রোগী ক্ষতিগ্রস্ত হলে বা মারা গেলে উন্নত বিশ্বে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার বিধান প্রচলিত আছে। বিরল হলেও আমাদের দেশেও হয়ত এ বিধান প্রচলিত আছে।

ফেসবুক প্রেসক্রিপশনে এমন সব ওষুধ থাকে যা গ্রহণ করলে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষক্রিয়ার কারণে স্বাস্থ্যহানি, অঙ্গহানি ও এমন কি মৃত্যুও হতে পারে। মনে রাখবেন, একজন চিকিৎসকেরও ফেসবুকে প্রেসক্রিপশন আপলোড করার ক্ষমতা নেই। আর আপনি কোন ক্ষমতা বলে বাচালের মতো আচরণ করার সাহস পাচ্ছেন! আমি একজন ফার্মাসিস্ট হওয়া সত্বেও কোনো ওষুধ গ্রহণ করার পূর্বে ১০বার চিন্তা করি।

ওষুধকে সাধারণত দুই ভাগে ভাগ করা হয়। ওটিসি (ওভার দ্য কাউন্টার) ড্রাগ ও প্রেসক্রিপশন ড্রাগ। ওটিসি ড্রাগ কিনতে প্রেসক্রিপশন লাগে না। কিন্তু অন্য ড্রাগ কিনতে হলে আপনাকে অবশ্যই লাইসেন্সপ্রাপ্ত চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন লাগবে। 

আমাদের দেশ এক বিচিত্র দেশ। এদেশে প্রেসক্রিপশন ছাড়া বিষও কেনা যায়! কড়াকড়ির কোনো বালাই নেই। এখানে সব ওষুধই ওটিসি ড্রাগ, যদিও কর্তৃপক্ষ হালকা পাতলা কিছু বিধিনিষেধ জারি করে রেখেছে, যা আদৌ মানা হয় না।

যা হোক, বলছিলাম ফেসবুক প্রেসক্রিপশন নিয়ে। এ ধরনের প্রেসক্রিপশনে অসংখ্য ওটিসি ও প্রেসক্রিপশন ড্রাগ লিপিবদ্ধ থাকে। প্যারাসিটামল, অ্যাসপিরিন, অ্যান্টিহিস্টামিন, মন্টেলুকাস, বেক্সিট্রল (সালমেট্রল ও ফ্লুটিকাসনের কম্বিনেশন), অ্যাসমাসল, ইভারমেক্টিন, ডক্সিসাইক্লিন, অ্যাজিথ্রোমাইসিন, ক্লোরোকুইন, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইনসহ আরো অসংখ্য জানা অজানা ওষুধের নাম থাকে। 

আপনারা কি জানেন, সাধারণ প্যারাসিটামল খাওয়ার জন্যও সাবধানতা অবলম্বন করতে হয়। ওষুধ চকলেট বা ক্যান্ডি নয়, যা কিনলেন আর তৃপ্তি সহকারে খেলেন। প্রত্যেকটি ওষুধই বিষ। শুধু মাত্রাই (ডোজ) নির্ধারণ করে কোনটি ওষুধ, কোনটি বিষ। প্রত্যেকটি ওষুধের কমবেশি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও বিষক্রিয়া আছে। এসব পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া পারসন টু পারসন ভেরি করে।

কোনো ওষুধ কারো জন্য নিরাপদ মনে হলেও অন্যের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। আপনি ফেসবুকে করোনা রোগীর জন্য ঢালাওভাবে ওপরে বর্ণিত ওষুধগুলো গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে মনে করছেন আপনি মহৎ এক কাজ করছেন। আপনার নির্বুদ্ধিতা, অবৈধ ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য অসংখ্য নিরীহ লোকের অপূরণীয় ক্ষতি হয়ে যেতে পারে। এমন কি মৃত্যুও হয়ে যেতে পারে, যার পরিসংখ্যান এদেশে কেউ রাখে না। এমনও তো হতে পারে, একজন করোনা রোগী তার প্রতিরোধ ক্ষমতা বলে ভালো হয়ে যেত, আপনার বা চিকিৎসক কর্তৃক প্রদত্ত আনটেস্টেট ওষুধগুলো খেয়ে রোগী মারা গেল।

চিকিৎসকরা যে রোগীদের হাওয়াই খবরের ওপর ভিত্তি করে খেয়ালখুশি মতো ঢালাওভাবে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিপ্রোটোজোয়াল, অ্যান্টিম্যালেরিয়াল ড্রাগসহ নানা পদের ওষুধ দিয়ে চলেছেন, করোনা রোগীর ওপর সেটার ক্ষতিকর প্রভাব কি তারা মনিটর করছেন? নিরাপদ ওষুধ বললেই তো ওষুধ নিরাপদ হয়ে যায় না। আমি কয়েকজন সাধারণ ফ্লু'তে আক্রান্ত রোগীর ওপর এসব ওষুধের ভয়ংকর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া সম্পর্কে অবগত আছি। 

চিকিৎসকরা কোনো টেস্ট ছাড়াই সাধারণ ফ্লু'তে আক্রান্ত রোগীদের ঢালাওভাবে ক্লোরোকুইন, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন, ইভারমেক্টিন, ডক্সিসাইক্লিন, অ্যাজিথ্রোমাইসিনের মতো ওষুধ গ্রহণের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। ক্লোরোকুইন ও হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন ভয়ংকর ওষুধ এবং এসব ওষুধ মৃত্যুর কারণ হতে পারে। বাংলাদেশ বলে এসব করার সাহস আপনারা পাচ্ছেন। উন্নত দেশ হলে আপনাদের খবর ছিল।

জবাবদিহি নেই বলে স্বেচ্ছাচারিতার অধিকার কারো নেই। যে কাজই করুন না কেন, নিজের বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ থাকুন। এ দুঃসময়ে ব্যবসায়িক লোভটা না হয় গৌণ করে দেখে নিরীহ রোগীদের কথা ভাবুন। একজন আদর্শ চিকিৎসকের তাই ভাবা উচিত নয় কী?