ঢাকা, ১৬ এপ্রিল মঙ্গলবার, ২০২৪ || ৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
২৭০

করোনাভাইরাস টেস্টের ওপর মানুষের আস্থা কি ফিরবে?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:৫৪ ১৬ জুলাই ২০২০  

করোনাভাইরাস টেস্ট নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের মনে শুরু থেকেই নানা ধরনের প্রশ্ন ছিল। প্রথমদিকে খুবই কম সংখ্যক টেস্ট করা এবং পরবর্তীকালে টেস্টের সংখ্যা বাড়লেও ফলাফল পেতে কয়েক সপ্তাহ অপেক্ষা করা - এসব কারণে অনেকের মধ্যে কোভিড-১৯ টেস্ট নিয়ে আস্থার সংকট তৈরি হয়েছিল।

এক পর্যায়ে অনেকে টেস্টের ওপর থেকে আস্থা হারিয়ে ফেলতে শুরু করে। সবশেষ জেকেজি ও রিজেন্ট হাসপাতালের ভুয়া টেস্ট রিপোর্টের খবরে করোনা টেস্ট নিয়ে মানুষের মনে সন্দেহ আরো জোরালো হয়েছে।

পাবলিক হেলথ ফাউন্ডেশনের চেয়ারপার্সন শারমিন ইয়াসমিন বলেন, মানুষ যখন একবার আস্থা হারিয়ে ফেলে, তখন দুয়েকটি অভিযান পরিচালনার মাধ্যমে সেই আস্থা ফিরিয়ে আনা বেশ কঠিন কাজ। আস্থা ধীরে-ধীরে ফিরে আসে। মানুষ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবে বলে মনে করেন তিনি।

টেস্ট নিয়ে বাংলাদেশের ভেতরে যখন আস্থার সংকট তৈরি হয়েছে, তখন দেশের বাইরেও এ নিয়ে জোরালো সন্দেহ তৈরি হয়েছে। ইতালির বিভিন্ন গণমাধ্যমে বাংলাদেশের করোনা টেস্টের মান নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। এটি এদেশের জন্য রীতিমতো বিব্রতকর।

এর আগে দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান ও  চীন বাংলাদেশ থেকে চার্টার্ড ফ্লাইটের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আন্তর্জাতিকভাবে এদেশের টেস্টের মান যেভাবে প্রশ্নের মুখে পড়েছে, তাতে করে দৃশ্যমান কিছু পদক্ষেপ নেয়া জরুরী হয়ে পড়েছিল।

আন্তর্জাতিক সংস্থা ওয়াটার এইডের আঞ্চলিক পরিচালক খায়রুল ইসলাম বলেন, রিজেন্ট হাসপাতাল এবং জেকেজি'র বিরুদ্ধে যেসব পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে, সেগুলো অপরিহার্য, কিন্তু পর্যাপ্ত নয়।

তিনি বলেন, কিছু না কিছু পদক্ষেপ নিতেই হতো। আন্তর্জাতিক মহলে এবং আমাদের বৈদেশিক শ্রমবাজারের জন্য আস্থা ফিরিয়ে আনা অত্যন্ত জরুরী। এ চাপগুলো অবশ্যই একটা প্রেসার ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করেছে।

খায়রুল ইসলাম মনে করেন, আন্তর্জাতিকভাবে চাপ না থাকলে হয়তো এত দ্রুত পদক্ষেপগুলো নেয়া হতো না।

টেস্ট না করেই প্রাণঘাতী ভাইরাস পজিটিভ এবং নেগেটিভ রিপোর্ট দেয়ার ঘটনা প্রমাণ করেছে, স্বাস্থ্যখাতে কোনও নজরদারি ছিল না, বিশেষজ্ঞরা এমনটাই মনে করেন।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বেনজির আহমেদ বলছেন, করোনা মহামারিকে ঘিরে বাংলাদেশের স্বাস্থ্যখাতে চরম অব্যবস্থাপনা তৈরি হয়েছে। শুধু দুটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে মানুষের আস্থা ফিরে পাওয়া যাবে না।
তাহলে কী করতে হবে?

এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এজন্য কয়েকটি কাজ করতে হবে। প্রথমত, প্রমাণ করতে হবে, টেস্টের মান নিশ্চিত করার জন্য ভালো মনিটরিং ব্যবস্থা রয়েছে। দ্বিতীয়ত, টেস্ট প্রক্রিয়ার সঙ্গে যারা জড়িত আছেন, তাদের দক্ষতা বাড়াতে হবে। তৃতীয়ত, নমুনা দেয়ার পর দ্রুততম সময়ের মধ্যে ফলাফল দিতে হবে।

অধ্যাপক বেনজির আহমেদ বলেন, কোনও রোগীর ক্ষেত্রে যদি সন্দেহ হয়, তার পরীক্ষার ফলাফল যদি নেগেটিভও হয়, তাহলে নেগেটিভ বললেই চলবে না। তাকে আবারো পরীক্ষার ব্যবস্থা করতে হবে। কোনও একটা জায়গায় হয়তো ফল্ট (ভুল) থাকতে পারে। এমন হতে পারে, যেদিন তার নমুনা নেয়া হয়েছে, সেদিন তার নাসারন্ধ্রে পর্যাপ্ত ভাইরাস ছিল না।

এসব প্রক্রিয়া অনুসরণ করলে টেস্ট ব্যবস্থার উপর মানুষের আস্থা ফিরে আসবে বলে মনে করেন তিনি।

বাংলাদেশ স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, শুধু জেকেজি এবং রিজেন্ট হাসপাতাল নয়, এর বাইরে আরো ৫টি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে করোনা টেস্ট করার অনুমোদন স্থগিত করা হয়েছে। বর্তমানে দেশের ৮০টি ল্যাবরেটরিতে মারণঘাতী ভাইরাস পরীক্ষা করা হচ্ছে। এগুলোর মান নিশ্চিত করার পাশাপাশি এখন থেকে নমুনা দেয়ার তিনদিনের মধ্যে টেস্টের ফলাফল দেবার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা।

করোনাভাইরাস বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর