ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৪৯৭

করোনার টিকা কিভাবে পাবে বাংলাদেশ?

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:২৭ ২১ জুলাই ২০২০  

বিশ্বজুড়ে করোনার বিস্তৃতি বাড়ছে। একইসঙ্গে জোরকদমে চলছে প্রাণঘাতী এ ভাইরাস দমনের টিকা আবিষ্কারের চেষ্টা। জাতিসংঘের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে টিকা বানাতে ১৭৩টি উদ্যোগ চলছে। এর মধ্যে কয়েকটির মানবদেহে পরীক্ষা চলছে।

যদিও অধিকাংশ বিশেষজ্ঞের ধারণা, মানবদেহে ব্যবহারের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত হতে এ বছর পার হয়ে যাবে। কার্যকর টিকা আবিষ্কারের সম্ভাবনা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আলোচনায় আসছে, কীভাবে এটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া হবে।

করোনার টিকা কতটা জরুরি

টিকা আবিষ্কৃত হলে সেটা মানুষের শরীরের ভেতরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাকে উজ্জীবিত করে তুলবে। এটি করোনাভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করে অসুস্থ হওয়া থেকে রক্ষা করবে। ফলে লকডাউন, কড়াকড়ি সহজে তুলে নেয়া যাবে এবং সামাজিক দূরত্ব রক্ষার বিধিনিষেধ শিথিল করা সম্ভব হবে।

কতগুলো আবিষ্কারের কাজ চলছে

জাতিসংঘের সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে টিকা বানাতে ১৭৩ উদ্যোগ চলছে। আর ১৪০টির এখনো মানবদেহে পরীক্ষা শুরু হয়নি। একে বলা হয় প্রিক্লিনিক্যাল ট্রায়াল। বিজ্ঞানীরা এখনো এসব টিকা নিয়ে গবেষণা করছেন। পশু বা প্রাণির ওপর প্রয়োগ করে কার্যকারিতা যাচাই করছেন।

১৯টি টিকার কার্যক্রম রয়েছে প্রথম পর্যায়ে অর্থাৎ ক্লিনিক্যাল টেস্টিং শুরু হয়েছে। মানুষের ছোট একটি গ্রুপের ওপর টিকাগুলো প্রয়োগ করে দেখা হয়, এটা নিরাপদ কি-না। সেই সঙ্গে তা শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতায় কতটা প্রভাব ফেলে, তাও যাচাই করা হয়।

১১টি টিকা রয়েছে দ্বিতীয় পর্যায়ে। এসব কতটা নিরাপদ, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে। এ পর্যায়ে কয়েকশ’ মানুষের ওপর পরীক্ষা করে বিজ্ঞানীরা এর নিরাপত্তা ও সঠিক মাত্রা নিরূপণের চেষ্টা করেন।

বিশ্বে এখন ৩টি টিকা তৃতীয় পর্যায়ে পরীক্ষা শুরুর পর্যায়ে রয়েছে। এই ধাপে কয়েক হাজার মানুষের ওপর কার্যকারিতা পরীক্ষা করে দেখা হয়, সেটা কতটা নিরাপদ ও কার্যকর কিংবা বড় ধরনের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া তৈরি হয় কি-না। এখানে সফলতা পেলেই সাধারণত টিকার অনুমোদন হয়ে থাকে। জাতিসংঘের নিয়ম অনুযায়ী, তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা তৃতীয় কোনও দেশে করতে হয়।

আবিষ্কারের দৌড়ে এগিয়ে যারা

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, তিনটি প্রতিষ্ঠান করোনাভাইরাসের টিকা আবিষ্কারের চেষ্টায় তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে। সেগুলো হলো-

সিনোভেক

কোভিড-১৯ এর নিষ্ক্রিয় অংশের ওপর ভিত্তি করে একটি টিকা আবিষ্কারের কাজ করছে চীনের কোম্পানি সিনোভেক। প্রথম দফার পরীক্ষাগুলোয় এটি বেশ সাফল্য দেখিয়েছে। এখন ব্রাজিল ও বাংলাদেশে কয়েক হাজার মানুষের ওপর এর তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু হতে যাচ্ছে।

অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি

শিম্পাঞ্জির শরীরের সাধারণ সর্দি-কাশি তৈরি করে, এমন একটি ভাইরাসের জিনগত পরিবর্তন করে টিকাটি তৈরি করা হচ্ছে। এটি করোনা সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে ওঠে। তখন শরীরের ভেতর রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বুঝতে পারে, কীভাবে ভাইরাসকে আক্রমণ করে পরাস্ত করা যাবে। সম্প্রতি এর গবেষকরা ব্রাজিল ও দক্ষিণ আফ্রিকায় তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা শুরু করেছে। ভারতেও টিকাটির ক্লিনিকাল ট্রায়াল শুরুর প্রক্রিয়া চলছে।

ইউনিভার্সিটি অব মেলবোর্ন/মারডক চিলড্রেনস রিসার্চ ইন্সটিটিউট

প্রায় ১০০ বছরের পুরনো একটি ফুসফুসের টিকা নিয়ে তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষা চালাচ্ছে অস্ট্রেলিয়ার মারডক চিলড্রেনস রিসার্চ ইন্সটিটিউট। এটি সরাসরি করোনা থেকে রক্ষা করে না। কিন্তু টিকাটি শরীরের রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে দিতে পারে।

কখন বাজারে আসতে পারে?

সাধারণত একটি টিকা আবিষ্কারে কয়েক বছর লেগে যায়। কিন্তু করোনাভাইরাসের ক্ষেত্রে কয়েক মাসের মধ্যেই সেটা আবিষ্কার করার চেষ্টা করছেন বিজ্ঞানীরা। বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ২০২১ সালের মাঝামাঝি নাগাদ এটি বাজারে আসতে পারে। তবে সেজন্য বিজ্ঞানীদের ভাগ্যের ওপর নির্ভর করতে হবে। তবুও সেটি কতটা কার্যক্ষম হবে, কেউ নিশ্চয়তা দিতে পারবে না।

কিভাবে পাবে বাংলাদেশ

টিকা আবিষ্কার হলে উন্নত দেশগুলোকে সেটা আবিষ্কারকদের কাছ থেকে কিনে নিতে হবে।
যেমন অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির টিকার জন্য এরই মধ্যে এক কোটির চাহিদা দিয়েছে যুক্তরাজ্য সরকার। চাহিদা জানিয়েছে ব্রাজিলও।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) সাবেক উপদেষ্টা অধ্যাপক মুজাহেরুল হক বলছেন, যেসব দেশের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় ৪ হাজার ডলারের বেশি, তাদের টিকা কিনতে হবে। কিন্তু বাংলোদেশের নাগরিকদের মাথাপিছু আয় যেহেতু এর চেয়ে কম, ফলে এদেশের মতো দেশগুলো বিনামূল্যে টিকা পাবে।

তিনি জানাচ্ছেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ও ইউনিসেফ এবং গাভি-র (টিকা বিষয়ক আন্তর্জাতিক জোট) টিকার অগ্রাধিকার পাওয়া ৯০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশও রয়েছে। এসব সংস্থা নিজেদের অর্থে ভ্যাকসিন সংগ্রহ করে এদেশের চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার স্ট্রাটেজিক অ্যাডভাইজরি গ্রুপ অব এক্সপার্টের সদস্য অধ্যাপক ফেরদৌসী কাদরী নিবন্ধে লিখেছেন, কোভিড-১৯ এর টিকার জন্য বাংলাদেশ অনেক আগ্রহ নিয়ে বহু চেষ্টা চালাচ্ছে। এক বা একাধিক টিকা যেন আমরা পরীক্ষা এবং পেতে পারি, সেই চেষ্টা হচ্ছে। আমি আশাবাদী, যেসব দেশ টিকা প্রথম দিকে পাবে। এর মধ্যে বাংলাদেশ থাকবে।

অধ্যাপক মুজাহেরুল হক বলছেন, টিকা পাওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের একটি কৌশল নির্ধারণ করা জরুরি। অনেক দেশের ভ্যাকসিন ট্রায়ালে ভারত, ফিলিপিন্স, থাইল্যান্ডের মতো অনেক দেশ যুক্ত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সেখানে যুক্ত হতে পারেনি। তবে ডব্লিউএইচও সেটা আমাদের দেবে, এটা নিশ্চিত। '

তিনি বলছেন, টিকা পাওয়ার আগেই বাংলাদেশকে নিজস্ব একটি কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। কারা আগে টিকা পাবেন, সেই জনসংখ্যা কত, দ্বিতীয় দফায় কারা পাবেন তা ভাবতে হবে। এরপর সংগ্রহের কৌশল ঠিক করতে হবে। আমাদের চাহিদা কত, কীভাবে কতটুকু পেতে পারি সেটার। এর ভিত্তিতে বাংলাদেশের কত টিকা দরকার, তা ঠিক করতে হবে। কোনও সোর্স থেকে কতটা পাব ইত্যাদি ঠিক করতে হবে।

বাংলাদেশে দুটি বেসরকারি ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানির টিকা উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। তবে এখনো কোনও টিকা আবিষ্কৃত না হওয়ায় সেগুলো কোনোরকম উৎপাদনের জন্য প্রস্তুতি নেয়নি।

কত মানুষকে দিতে হবে?

এটা বলা কঠিন, এ টিকা কতটা কার্যকর হবে। তবে ধারণা করা হয়, ভাইরাসের বিস্তার বন্ধ করার জন্য 'হার্ড ইমিউনিটি তৈরি করতে' অন্তত ৬০-৭০ শতাংশ মানুষকে টিকা দিতে হবে। কিন্তু টিকাটি সফল হলেও এ সংখ্যা হবে কয়েকশ’ কোটি মানুষ।

কারা আগে পাবে

টিকা যদি আবিষ্কার হয় আর প্রথমদিকে সরবরাহ কম থাকে, তখন অবশ্যই গুরুত্বের বিচারে টিকা প্রদান করতে হবে। এ তালিকার শীর্ষে রয়েছেন স্বাস্থ্যকর্মীরা। বিশেষ করে যাদের করোনা রোগীদের সংস্পর্শে আসতে হচ্ছে।
প্রাণঘাতী এ ভাইরাসে বয়স্ক মানুষজন বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। ফলে টিকাটি সেই বয়সের ওপর কার্যকর হলে বয়সী ব্যক্তিরাও তা পাওয়ার তালিকায় এগিয়ে থাকবেন। যুক্তরাজ্য বলছে, ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীর সদস্যরা, বিশেষ কোনও জাতিগোষ্ঠীর সদস্যদের আগে টিকা প্রাপ্তির ক্ষেত্রে গুরুত্ব দেয়া হবে।

করোনাভাইরাস বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর