ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৯৯৯

ক্যান্সার ছড়িয়ে পড়ছে, প্রতিরোধে করণীয়

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৯:৩৫ ৪ জানুয়ারি ২০২০  

ক্যান্সার ভয়াবহ আকারে ছড়িয়ে পড়ছে। তাই সবাইকে সতর্ক জীবনযাপনের আহ্বান জানাচ্ছি।

মানুষের শরীরে গড়ে প্রায় ৩০ ট্রিলিয়ন (৩০,০০০,০০০,০০০,০০০) সেল বা কোষ রয়েছে। আমাদের শরীরে প্রতি মিনিটে গড়ে ৩০ কোটি সেল মারা যায় এবং সমপরিমাণ সেল নতুনভাবে সৃষ্টি হয়। দেহে কোষের জন্মমৃত্যুর এই প্রক্রিয়া স্বাভাবিকভাবেই ঘটে থাকে। স্বাভাবিক সেলের জন্মমৃত্যুর ভারসাম্য নিয়ন্ত্রণ করে শরীরের কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা। কিন্তু এক বা একাধিক সেল যদি কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার হুকুম অমান্য করে অনিয়ন্ত্রিতভাবে বাড়তে থাকে বা বংশ বিস্তার অব্যাহত রাখে, তাহলে এই অনিয়ন্ত্রিতভাবে অতি দ্রুত বাড়তে থাকা সেলগুলো একটি মাংসপিণ্ডে পরিণত হয়। এই পিণ্ডকে বলা হয় টিউমার। ব্লাড ক্যান্সারের (লিউকেমিয়া) ক্ষেত্রে রক্তে অস্বাভাবিক ক্ষতিকর রক্তকণিকার সৃষ্টি হয়, যা শরীরের স্বাভাবিক কর্মকাণ্ডে বিঘ্ন ঘটায়। তার মধ্যে প্রধান সমস্যা হল শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা ধ্বংস। শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা ভেঙে পড়লে বেঁচে থাকা সম্ভব নয়। এই অস্বাভাবিক ক্ষতিকর রক্তকণিকা সৃষ্টি হয় বোনম্যারো বা অস্থি মজ্জায়। টিউমারের এক বা একাধিক ক্যান্সার সেল যদি শরীরের অন্যান্য অংশে ছড়িয়ে পড়ে এবং বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে আক্রমণ করে বংশবিস্তার করতে থাকে, তখন সেই প্রক্রিয়াকে বলা হয় মেটাস্ট্যাসিস (METASTASIS)। মেটাস্ট্যাসিস একটি ভয়ংকর অবস্থা যার চিকিৎসা অতি ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য। এই অবস্থায় রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হয়ে পড়ে।
ক্যান্সারের কারণ সম্পর্কে আমাদের পরিষ্কার কোনো ধারণা নেই। অনেক বিজ্ঞানী মনে করেন এটি একটি ভাগ্যের ব্যাপার। কার ক্যান্সার হবে, কার হবে না, তা কেউ জোর দিয়ে বলতে পারে না। তবে ধূমপান, মদ্যপান, আর্সেনিক, এসবেস্টস, গামা-রে বা বিকিরণ, এক্স-রে, আলট্রাভায়োলেট লাইট( UV Light), গাড়ি থেকে নির্গত ধোঁয়া, অনেক রাসায়নিক যৌগ হল কার্সিনোজেন, যার কাজ হল শরীরে ফ্রি রেডিক্যাল তৈরি করা। এই কালপ্রিট ফ্রি রেডিক্যাল আরএনএ  (রাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) ও ডিএনএ  ( ডিঅক্সিরাইবোনিউক্লিক অ্যাসিড) এর সাথে বিক্রিয়ার মাধ্যমে ক্ষতিসাধন করে ক্যান্সার সেল তৈরিতে সাহায্য করে।

প্রাথমিক পর্যায়ে ক্যান্সার নির্ণয় করা গেলে ক্যান্সার চিকিৎসা সহজ হয়। যেমন স্তন ক্যান্সার। ক্যান্সার চিকিৎসা মারাত্মক জটিল, ব্যয়বহুল ও কষ্টসাধ্য ব্যাপার। এই চিকিৎসায় সার্জারি, রেডিয়েশন ও কেমোথেরাপির দরকার হতে পারে। ওষুধ প্রয়োগের মাধ্যমে শরীরের ক্যান্সার সেলকে সমূলে বিনাশ করার নাম কেমোথেরাপি।

তাহলে আমাদের কী কিছু করণীয় আছে? কমবেশি তো আছেই। আগে বহুবার বলেছি। আজ আবার বলছি। মনযোগ দিয়ে পড়ুন ও পালন করুন।

লাইফস্টাইল পরিবর্তন প্রথম ও প্রধান শর্ত। নিয়মতান্ত্রিক জীবনযাপন করুন, পরিমিত সুষম খাবার খান, চিনি, মিষ্টি, কোমলপানীয় ও জাঙ্কফুড, পোড়া তেলে ভাজাপোড়া ও অস্বাস্থ্যকর খাবার বর্জন করুন, ঘর থেকে বের হলে মাস্ক পরুন, ধূমপান ছাড়ুন, প্রচুর পানি পান করুন, ট্রান্স ফ্যাট, লাল মাংস(গরু, খাসি, মহিষ), চর্বি ও মাত্রাতিরিক্ত তেল বর্জন করুন।

ফ্রি রেডিক্যাল ধ্বংসকারী প্রাকৃতিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ  (ANTIOXIDANT) খাবার, যেমন প্রচুর ভিটামিন সি, ভিটামিন ই, ভিটামিন এ, পলিফেনলসমৃদ্ধ চা, গ্রিন টি, ব্রকলি, বাদাম, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিডসমৃদ্ধ মাছের তেল, প্রচুর শাকসবজি, ফলমূল খাবেন। শরীরের বাড়তি ওজন কমানো, শরীর ফিট রাখা ও রোগমুক্তির জন্য ব্যায়াম তো করতেই হবে। হাঁটা হলো উৎকৃষ্ট ব্যায়াম।