ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৭০৭

গল্পটা জানা দরকার সবার

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২৩:০৪ ১৩ ডিসেম্বর ২০১৯  

দেশের জনগণ, মিডিয়া এবং হাইকোর্টের এই গল্পটি জানা দরকার!

ভদ্রমহিলার নাম-পরিচয় উহ্য থাকুক। ইনি শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে আমার এডমিশন নাইটে রাত আনুমানিক ১১ টায় আসেন। আগের দুটি সিজারিয়ান সেকশন ছিল, এবার প্রেগন্যান্সির ৩৮ সপ্তাহ। আগের দুটি কণ্যা, একটি পুত্রের আশায় আবার বাচ্চা নেয়া।

 

যখন আসেন তখন তার ডেলিভারির ব্যথা তীব্র। এক্সামিন করে দেখা গেল জরায়ুর মুখ সম্পূর্ণ খুলে গিয়ে বাচ্চার মাথা অনেক নীচে নেমে এসেছে। আগের দুইটি সিজারিয়ান থাকলে নরমাল ডেলিভারি ঝুঁকিপূর্ণ (অসম্ভব নয়)।

 

কিন্তু এই ভদ্রমহিলা এসেছিলেন shock এ, অর্থাৎ পালস অনেক বেশি এবং ব্লাড প্রেসার কম। এক মুহূর্ত অপেক্ষা না করে পেশেন্টকে ওটিতে নিয়ে গেলাম, হাজবেন্ডকে সবকিছু জানানো হল। উনারা স্বামী-স্ত্রী দুটি মানুষ শুধু হাসপাতালে এসেছেন। পেশেন্টের ব্লাড গ্রুপ  AB +ve, one of the rarest.  

 

সবরকম ঝুঁকির কথা বলে রক্তের জন্য তাগাদা দিয়ে অবেদনবিদকে ফোন করা হল, তিনিও মুহূর্তে চলে এলেন। এই সময় পেশেন্টের যোনীপথে তাজা রক্ত আসল, ক্যাথেটার করে দেখা গেল ইউরিনের বদলে ব্লাড আসছে। অর্থাৎ পেশেন্টের জরায়ু ও মুত্রথলি দুটোই rupture হয়েছে (ফেটে গেছে)। জরায়ু ফেটে গেলে বাচ্চা মারা যাবার সমূহ সম্ভাবনা থাকে, কারণ মায়ের জরায়ু থেকেই বাচ্চা নাড়ীর মাধ্যমে অক্সিজেন পায়। 


অবেদনবিদ কালক্ষেপণ না করে পেশেন্টকে অবশ করলেন, আমি ঠিক কিভাবে পেরেছি জানিনা, যথাসম্ভব দ্রুত মায়ের পেট কেটে ভেতরে দেখি জরায়ু ফেটে বিরাট ব্লাড ক্লট জমে আছে, তার নিচ থেকে বাচ্চাকে বের করলাম।
আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ আলহামদুলিল্লাহ, বাচ্চা আমার হাতেই গুঙিয়ে উঠল, রিসাসিটেশন করার পর তার জোর চিৎকার।


এরপর শুরু হল মায়ের জীবন বাঁচানোর যুদ্ধ। গাইনী রেসিডেন্সিয়াল সার্জন ডাঃ আয়েশা পারভীন আপাকে আগেই জানানো হয়েছিল, তিনি এসে পৌছালেন। জরায়ু আর মুত্রথলি এমন করে চিরে গিয়েছিল যে, কোন অঙ্গটা কি বোঝার উপায় নাই। তার সাথে চলছিল অবিরাম রক্তক্ষরণ। এতো বেশি রক্তপাত হচ্ছিল যে, একসময় আমি ভয় পাচ্ছিলাম হয়তো মাকে আমরা হারাতে চলেছি। সার্জারীর রেসিডেন্সিয়াল সার্জন ডাঃ আরমান স্যারকে আনা হল। আমাদের আরেকজন কনসালটেন্ট ডাঃ নাজনীন নাহার আসলেন, ইউনিট হেড প্রফেসর মুনিরা ফেরদৌসী ম্যাডামকে আনার জন্য এম্বুলেন্স ঠিক করা হল। সকলের অক্লান্ত পরিশ্রম, টানা সাড়ে ছয় ঘন্টার চেষ্টায় অবশেষে জরায়ু ফেলে, মুত্রথলি সেলাই করে রক্তপাত বন্ধ করে আসা হল। পুরোটা সময়, রাত সাড়ে এগারোটা থেকে ভোর সাড়ে ছয়টা, আমার সকল ইন্টার্ন যে সাপোর্ট আমাদের দিয়েছে তা ভোলার নয়। ওষুধ-রক্ত-এম্বুল্যান্স-এর জন্য দৌড়ানো থেকে শুরু করে বাচ্চা কোলে নিয়ে কান্না থামানো, কিছুই বাদ দেয়নি। আর অবেদনবিদ ডাঃ নুরুদ্দীন যে সাহসিকতা এবং দ্রুততার সাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে অবশ করে, এরপর সারারাত আমাদের সাথে জেগে থেকে পেশেন্ট ম্যানেজ করেছেন, সেজন্য তার কাছে আমরা কৃতজ্ঞ।

 

এরপর অপেক্ষার পালা। এতো দীর্ঘসময়ের এতো জটিল অপারেশনে পেশেন্টের অনেক সমস্যা দেখা যেতে পারতো। আল্লাহ তা'য়ালার অশেষ রহমতে পেশেন্ট আস্তে আস্তে রিকভারি করে।

 

হাসিমুখের ছবিটি হাসপাতাল থেকে বিদায় নেবার সময়ে তোলা। মন ভাল করা একটা দারুণ ছবি।

 

-  ডাঃ আয়েশা সিদ্দিকা 
ইনডোর মেডিকেল অফিসার, ইউনিট - ৩, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল।