ঢাকা, ২৮ এপ্রিল রোববার, ২০২৪ || ১৫ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৫৫৫

চলে গেলেন টাকার প্রথম ডিজাইনার: জাতীয় পুরস্কার না পাওয়ায় আক্ষেপ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০৯:৪০ ৮ জুলাই ২০২৩  

স্বাধীন বাংলাদেশের অর্থনীতির পথ চলা শুরু হয়েছিল তাঁর নকশা করা টাকা নিয়েই। দেশের প্রথম এক, পাঁচ, দশ ও ১০০ টাকার নোটের নকশা করেছিলেন তিনি। তার পর সুদীর্ঘ কর্মজীবনে একাধিক কয়েনেরও নকশা এঁকেছিলেন। সেই গুণী শিল্পী কেজি মুস্তফা শুক্রবার (৭ জুলাই) ভোররাতে পাড়ি জমালেন চিরঘুমের দেশে। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৮০ বছর।

 

স্ত্রী, দুই ছেলে, এক মেয়ে-সহ অগণিত অনুরাগীকে পিছনে ফেলে রেখে পাড়ি দিলেন সেই দেশে যেখান থেকে মানুষ আর ফেরে না। শিল্পী কে জি মুস্তফার প্রয়াণে শিল্পী মহলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরেই বাবা-মায়ের কবরের পাশে সমাহিত করা হয়েছে বরেণ্য শিল্পীকে।

 

১৯৪৩ সালে জন্ম মাদারীপুরে। ছোটবেলা থেকেই আঁকার ওপরে ছিল বিশেষ টান। মাদারীপুর থেকে মাট্রিক পাশ করে আর্ট কলেজে ভর্তি হতে ঢাকায় এসেছিলেন। কিছুদিনের মধ্যেই শিল্পাচার্য ও কিংবদন্তী শিল্পী জয়নুল আবেদিনের প্রিয় ছাত্র হয়ে ওঠেন। কর্মাশিয়াল আর্টসকে বেছে নিয়েছিলেন কে জি মুস্তফা।

 

আর্ট কলেজের চৌহদ্দি পেরোতে না পেরোতেই ১৯৬৪ সালে চলে গেলেন পাকিস্তানের করাচিতে। যোগ দিলেন পাকিস্তান সিকিউরিটি প্রিন্টিং করপোরেশনে। ১৯৬৭ সালে পাক শাসকদের চাকরিতে ইস্তফা দিয়ে যোগ দিলেন বিখ্যাত বিজ্ঞাপন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এশিয়াটিক অ্যাডভার্টাইজিং লিমিটেডে। করাচি থেকে বদলি হয়ে ফের চলে এলেন ঢাকায়।

 

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে নতুন মুদ্রার নকশার জন্য হন্যে হয়ে নকশা শিল্পী খুঁজছিলেন বাংলাদেশের ত‍ৎকালীন অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ। বিখ্যাত চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান ডেকে পাঠালেন কে জি মুস্তফাকে। জয়নুল আবেদিন ও কামরুল হাসানের পরামর্শে এক টাকার নোটের দুটি নকশা করলেন মোস্তফা।

 

৫ ও ১০ টাকারও দুটি নকশা শেষ করলেন দ্রুতই। তারপর ১০০ টাকার নোট। প্রতিটি নকশাই অনুমোদন পেল ত‍ৎকালীন অর্থমন্ত্রীর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবও নতুন টাকার নকশার প্রশংসা করেছিলেন। কাগজের নোটের পরে ১, ৫, ১০, ২৫ এবং ৫০ পয়সার ধাতব মুদ্রারও নকশাও  করলেন। প্রতিটি নকশায় ফুটে উঠল দেশ। বঙ্গবন্ধুর ছবির পাশাপাশি থাকল ধান, নদী, নৌকা, পাট, শাপলা আর বাংলাদেশের গ্রাম এবং মানুষ।

 

১৯৭২ সালে  স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকিটের নকশাও বেরিয়েছিল তাঁর হাত দিয়ে। পরে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম ডাকটিকিটের নকশা-ও করেন কে জি মুস্‌তাফা। ডাক বিভাগের অনেক ধরনের খাম, পোস্টকার্ডের নকশাও করেন।

 

ডাকটিকিট, খাম, পোস্টকার্ড, অ্যারোগ্রামের নকশাগুলো সদ্য স্বাধীন দেশের জন্য অনেক বড় কাজ। আড়াই শ'রও বেশি ডাকটিকিটের নকশা করেছেন এই গুণী শিল্পী। নন–জুডিশিয়াল, কোর্ট ফি, রাজস্ব ডাকটিকিট, রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাংক এবং প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তা দলিলের নকশার সংখ্যা যে কত, তার হিসাব নেই। 

 

এছাড়া ২০১১ ক্রিকেট বিশ্বকাপে, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ১৫০তম জন্মবার্ষিকী এবং কাজী নজরুল ইসলামের ‘বিদ্রোহী’ কবিতার ৯০ বছর পূর্তিতে নকশা করেছেন একাধিক স্মারক রৌপ্য মুদ্রা। তবু জাতীয় পুরস্কার পাননি তিনি। এতে আক্ষেপ ঝরেছে স্বজনদের কণ্ঠে।

 

তারা বলছেন, রাষ্ট্র কিংবা সরকার অথবা রাজনৈতিক নেতৃত্ব বা আমলাতন্ত্র হয়তো এখনো বুঝতে পারেনি তার কর্মকে। কিন্তু উপকারভোগী দেশের মাটি ও মানুষ ঠিকই তাকে রাখবে উন্নত মর্যাদায়। তবে এতদিনেও তিনি জাতীয় পুরস্কার না পাওয়ায় আক্ষেপটা থাকছেই।