ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৮৪৮

দুর্ঘটনা, এবার তুমি বাংলা ছাড়

মেজর ডা. খোশরোজ সামাদ

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৭:৫৪ ১০ মে ২০১৯  

১. প্রাকৃতিক দূর্যোগ ফণীর ভয়াল থাবা থেকে মুক্ত হতে না হতে আরেকটি দূর্ঘটনার খবর আমাদের শিহরিত করলো, আতংকিত করলো। মিয়ামারের রাজধানী ইয়াংগুনে বাংলাদেশ বিমানের S2-4GQ ফ্লাইটটি সন্ধ্যা ৬'২২ মিনিটে অবতরণের সময় বৈরী আবহাওয়ায় রানওয়ে থেকে ছিটকে পড়ে। প্রাণহানী না হলেও পাইলটসহ ১৫ জনকে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অন্যান্যরা সামান্য আঘাত পেয়েছেন।

 

২. বিমান দুর্ঘটনা সাধারণত মৃত্যুর বিভীষিকা তৈরী করে। সেই বিচারে এই দুর্ঘটনায় মানুষের জীবনের ওপর ক্ষয়ক্ষতি সামান্যই বলা যায়। কিন্তু,সীমিত সম্পদের এই দেশে একটি বিমানের দুর্ঘটনাজনিত ক্ষয়ক্ষতির ধাক্কার জের বেশ কিছুদিন হলেও টানতে হবে।

 

৩. ঐ বিমানের পাইলট, ক্রু, যাত্রীরা যে ভয়াবহ মানসিক ট্রমার মধ্যে দিয়ে গেছেন তার দুঃসহ স্মৃতি তাদেরকে আমৃত্যু বহন করতে হবে। বিমানের আরোহী যাত্রীদের নিকটজনদের ভয়াল মনস্তাত্ত্বিক চাপ এখনও কাটে নি। তাদের স্বজনেরা কতটুকু আঘাতপ্রাপ্ত সেটি ভেবে তারা বিনিদ্র রজনী পার করছেন।

 

৪.  সংগত কারণেই এই বিষয়টি অনেক প্রশ্নের জন্ম  দিয়েছে। এটি কি নিছকই দুর্ঘটনা না এর পেছনে কোনো স্যাবোটেজ লুকানো আছে? জংগীদের হুমকিসহ দেশীয় ও আন্তর্জাতিক নানামুখী অস্থিরতা, আশংকা, হুমকির মধ্যে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মত বাংলাদেশকেও অনিশ্চয়তার মধ্যে রেখেছে। এটি কি যান্ত্রিক ত্রুটি না কারো অবহেলাজনিত দায়িত্ব পালনের খেসারত সেটি নাগরিকরা জানতে চাইতেই পারে।

 

৫. রানা প্লাজার ট্র‍্যাজেডি তামাম দুনিয়ার বিবেককে কাঁপিয়ে দিয়েছিল। চট্রগ্রামে বিমান ছিনতাইয়ের চেষ্টাও আমাদের চৈতন্যের দাঁড়কে নাড়িয়ে গেছে। সম্প্রতি এফ আর টাওয়ারে অগ্নিকান্ডের লেলিহান শিখা আমাদের সাহসের ভিত কাঁপিয়ে দিয়েছিল।

 

৬. বন্যা খরা মহামারী বারবার এই জনপদে আঘাত এনেছে। অর্থলোভী দূর্বৃত্তদের পাহাড় কাটবার ফলে পাহাড় ধবসে লোকক্ষয়ের বেদনা আমাদের হৃদয়ে রক্তক্ষরণ এনেছিল। সড়ক দুর্ঘটনাকে আমরা নক্ষত্র নিয়ন্ত্রিত অখন্ডনীয় দূর্ভাগ্য বলে প্রায় মেনেই নিয়েছি।

 

৬. সৃষ্টির ঊষালগ্ন হতে দূর্ঘটনা থেকে মুক্তি পেতে সূর্য, অগ্নি, পাথরসহ বিভিন্ন দেবদেবীর পূজা করে এসেছে মনুষ্যকুল । বিশাল দরিয়ায় নাও ভাসানোর আগে সারেং গাজী গাজী বলে দিয়েছেন ডাক।

 

৭.  ট্রাফিক জ্যামে নাকাল হয়ে, রোগে শোকে ভুগে আমরা যখন স্বপ্নহীন হয়ে ছা পোষা জীবন যাপন করছি, তখন আর নতুন করে দুর্ঘটনার ভার বহন করা আমাদের জন্য প্রায় অসাধ্য। আলাদিনের প্রদীপ ঘষা দৈত্য সব ইচ্ছেই পূরণ করতে পারে। আচ্ছা, বোতল বন্দী দৈত্যটা আর কিছু পারুক আর না পারুক, অন্তত দুর্ঘটনা নামক অপঘাত থেকে বাংলা নামের জনপদকে অন্তত মুক্তি দিক! দূর্ঘটনা, এবার তুমি বাংলা ছাড়।