ঢাকা, ২৭ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ১৪ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১০০

নৌকায় এসে যেভাবে বিশাল জাহাজ জিম্মি করে জলদস্যুরা

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:০৮ ১৪ মার্চ ২০২৪  

আন্তর্জাতিক নৌরুটে চলাচলকারী পণ্যবাহী জাহাজগুলোর জন্য আতঙ্কের আরেক নাম সোমালিয়া উপকূল। বিভিন্ন সময় এই নৌপথে চলা অনেক জাহাজ পড়ে জলদস্যুদের কবলে। তবে মোটর-চালিত ছোট নৌকায় করে এসে কীভাবে এত বড় সব জাহাজ তারা ছিনতাই করে, সেটিও বিশাল প্রশ্ন।

 

৯৯৫ সালে স্থানীয় জেলেদেরই কয়েকটি দল একটি জাহাজ ভেসে থাকতে দেখে। ঝটপট জাহাজটিকে ঘিরে ফেলে তারা। জেলেদের বিবর্ণ চোখ আর শুকনো চোয়ালের মুখাবয়ব দেখে ঘাবড়ে যান নাবিকরা। পরে মূল্যবান অর্থসামগ্রীর বিনিময়ে প্রাণে বেঁচে যান তারা। সেদিনের সেই ছোট্ট ঘটনাই মোড় নেয় আধুনিক জলদস্যুতায়।

 

২০০৯ সালের এক জরিপে দেখা যায়, সোমালিয়ার প্রায় ৭০ শতাংশের মতো উপকূলবর্তী সম্প্রদায় দেশের জলসীমার মধ্যে বিদেশি জাহাজের প্রবেশ বন্ধে জলদস্যুতাকে শক্তভাবে সমর্থন করে। এমনকি সোমালিয়ার কিছু কিছু সরকারি কর্মকর্তা জলদস্যুদের এমন কুকর্মের সঙ্গে জড়িত বলেও জানা গেছে। 

 

২০১১ সালের শেষ দিকে জলদস্যুরা এডেন অঞ্চল থেকে চারটি জাহাজ সোমালিয়ার উপকূলে জিম্মি করে নেয়। এছাড়া ২০১৩ সালের ১৮ অক্টোবর জলদস্যুরা একটি বড় জাহাজ ছিনতাই করে এবং ৫২ জনকে বন্দি করে রাখে।

 

২০০৫ সালের পর থেকে সোমালিয়ার জলদস্যুরা সংঘবদ্ধ হয়ে বৃহৎ পরিসরে আক্রমণ শুরু করে। সমুদ্র বিষয়ে পর্যাপ্ত জ্ঞান ও দক্ষতার কারণে তারা কেবল ক্ষিপ্র গতিতেই নয় বরং আধুনিক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে হানা দেয়, যা দস্যুবৃত্তিতে তাদের এগিয়ে নিয়েছে। 


আক্রমণের সময় হিসেবে সোমালিয়ার জলদস্যুরা মূলত রাত কিংবা ভোরের দিকের সময়টা বেছে নেয়। বড় জাহাজগুলোর কাছে পৌঁছাতে মোটর-চালিত ছোট নৌকা ব্যবহার করে তারা, যা দ্রুত গতির পাশাপাশি বড় জাহাজের রাডারে সহজে ধরা পড়ে না।

 

অতীতের আক্রমণগুলো বিশ্লেষণ করে জানা যায়, জলদস্যুরা সাধারণত জাহাজগুলোর পেছন দিক থেকে আক্রমণ চালায়। এক মাথায় হুক লাগানো লম্বা দড়িতে চেপে তারা দ্রুত জাহাজে উঠে যায়, যা জাহাজের পেছন দিকে লাগানো হুকের সঙ্গে আটকানো হয়।

 

এই কাজগুলো তারা এত দ্রুত করে যে জাহাজের ক্রুরা কিছু বুঝে ওঠা কিংবা এলার্ম বাজানোর আগেই তারা পরিস্থিতি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। তাছাড়া গভীর সমুদ্রে আক্রমণ সাজানোর সময় দস্যুরা একটি মাদারশিপ থেকে অভিযান পরিচালনা করে।

 

বন্দিদের কাছ থেকে জলদস্যুরা মুক্তিপণ আদায় করে মার্কির ডলারে। মুক্তিপণের অর্থ পরিশোধের জন্য তা বস্তায় ভরে হেলিকপ্টার থেকে ফেলে দেয়া হয় বা ছোট নৌকায় করে ওয়াটার প্রুফ ব্যাগের মাধ্যমে পাঠানো হয়। আবার প্যারাসুটের মাধ্যমেও এই মুক্তিপণের টাকা জলদস্যুদের কাছে পৌঁছানো হয়। 


উল্লেখ্য, ভারত মহাসাগরে এমভি আবদুল্লাহ নামে বাংলাদেশি একটি জাহাজ জলদস্যুদের কবলে পড়ায় দেশজুড়ে এখন আলোচনায় সোমালিয়া। কারণ, ২৩ বাংলাদেশি নাবিককে জিম্মি করে জাহাজটিকে সোমালিয়া উপকূলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত জানা গেছে, জিম্মি ২৩ নাবিককে মুক্তি দিতে ৫০ লাখ ডলার মুক্তিপণ দাবি করেছে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। শিগগিরই তা না দিলে, তাদের মেরে ফেলারও হুমকি দেয়া হয়েছে।

ফিচার বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর