ঢাকা, ২৪ এপ্রিল বুধবার, ২০২৪ || ১১ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৩১৮

বীমা করার আগে যেসব বিষয়ে খেয়াল রাখতে হবে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:২৮ ২ মার্চ ২০২০  

বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে সাধারণ বীমা ও জীবন বীমা কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বীমা খাতের শুরু হয়। তবে ১ মার্চ প্রথমবারের মতো জাতীয় বীমা দিবস হিসেবে পালন করা হয়েছে। দেশের পৌনে ২ কোটি মানুষ বিভিন্ন ধরনের বীমার আওতায় রয়েছেন। যদিও অনেকে এ সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা পোষণ করেন না।
তবে অর্থনীতি বিশ্লেষকেরা বলেন, বীমা একজন বিনিয়োগকারীর ভবিষ্যতের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারে। একই সঙ্গে তার ঝুঁকিও প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ভাগাভাগি করে নেয়া হয়।
বীমা আসলে কী?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের পরিচালক অধ্যাপক হাসিনা শেখ বলেন, বীমা হলো নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে জীবন, সম্পদ বা মালামালের সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কোনও প্রতিষ্ঠানকে স্থানান্তর করা। এর মাধ্যমে ব্যক্তি বা বীমা প্রতিষ্ঠান অর্থের বিনিময়ে মক্কেলের আংশিক বা সব সম্ভাব্য ঝুঁকি গ্রহণ করে থাকে।
তিনি বলেন, বীমা এক ধরনের বিনিয়োগ। এর মানে হচ্ছে আপনি ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার কথা ভেবে এখন নির্দিষ্ট অর্থ জমা রাখছেন। নির্দিষ্ট মেয়াদের পর আপনি আপনার অর্থ হাতে পাবেন। এটা আপনার ঝুঁকি আরেকজনের সঙ্গে ভাগাভাগি করে নেয়ার মতো।
ধরা যাক, হেলথ ইনস্যুরেন্স বা স্বাস্থ্য বীমার কথা, যেখানে নিজের স্বাস্থ্য পরিস্থিতির বিপরীতে আপনি নির্দিষ্ট অংকের অর্থ জমা করছেন। উদ্দেশ্য হচ্ছে যদি আপনার কোনও দুর্ঘটনা ঘটে, তাহলে ওই বীমা প্রতিষ্ঠান আপনার স্বাস্থ্য ব্যয়ের একটি অংশ বা একটি বড় অংশ প্রদান করবে। এ যে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ আপনি জমা রাখছেন, একে বলা হয় প্রিমিয়াম।
অসুস্থ হলে বা দুর্ঘটনা ঘটলে সাধারণত স্বাস্থ্য বীমা তালিকাভুক্ত হাসপাতালগুলোতে 'ক্যাশলেস' সেবা অথবা সেবা গ্রহণ পরবর্তী কালে গ্রাহককে বীমার অর্থ প্রদান করার কথা। অধ্যাপক হাসিনা শেখ বলেন, সহজ কথায় বলতে গেলে, এটি ভবিষ্যতের সম্ভাব্য ক্ষতির হাত থেকে নিজেকে সুরক্ষিত করার জন্য অর্থ প্রদানের মতো।
বাংলাদেশে কী ধরণের বীমা চালু আছে?
বাংলাদেশে সাধারণত দুই ধরনের বীমা হয়-১. জীবন বীমা ও ২. সাধারণ বীমা। একজন ব্যক্তি নিজের বা পরিবারের কোনও সদস্যের জীবন বীমা করাতে পারেন। এতে বীমাকারী ব্যক্তির মৃত্যুর পর পরিবার অথবা নমিনি করা ব্যক্তিকে বীমাকৃত অর্থের পুরোটাই প্রদান করা হবে।

বাংলাদেশের গার্মেন্ট শ্রমিকদের স্বাস্থ্য বীমা
সাধারণ বীমার মধ্যে পড়ে স্বাস্থ্য, বাণিজ্য, শিল্প, কৃষি, যানবাহনসহ সব কিছু। বাংলাদেশে মোট ৭৮টি বীমা প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এর মধ্যে ৩২টি জীবন বীমা, ৪৬টি সাধারণ বীমা কোম্পানি।
তন্মধ্যে একটি জীবন বীমা এবং একটি সাধারণ বীমার রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান আছে। দুটি বিদেশি বীমা কোম্পানিও আছে।
কী কী বিষয় খেয়াল রাখতে হবে?
এ অধ্যাপক বলেন, বাংলাদেশে বীমা প্রতিষ্ঠানগুলোর নেটওয়ার্ক একেবারে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত। ফলে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে এর কাজ করার সুযোগ অনেক বেশি। অ্যাকাউন্ট খোলা, অর্থ জমা করা ও অন্যান্য কাজের জন্য আপনাকে ব্যাংকে যেতে হবে। কিন্তু বীমা করার জন্য ইনস্যুরেন্স এজেন্টরা গ্রাহকের বাড়িতে গিয়ে তাকে বুঝিয়ে রাজি করিয়ে কাজ করান। ফলে কষ্ট বেঁচে যাচ্ছে। আর ব্যাংকে গিয়ে কোনও সেবার জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। এজন্য এখন গ্রামের কৃষকও কৃষি পণ্য ও গবাদি পশুর জন্য বীমা করেন।

কিন্তু বীমার মেয়াদ পূর্তির পর অর্থ হাতে পাওয়া নিয়ে অনেক রকম নেতিবাচক অভিজ্ঞতার অভিযোগ শোনা যায়। যে কারণে হাসিনা শেখ বলেন, বীমা করার আগেই একজন গ্রাহককে কয়েকটি বিষয় খেয়াল করতে হবে।
# বীমা করার আগে সংশ্লিষ্ট বীমার শর্তাদি দেখে, জেনে ও বুঝে নিতে হবে।
# প্রিমিয়াম জমা দেয়ার নিয়মাবলী এবং সময়সীমা পার হয়ে গেলে কী করণীয় ভালো করে জেনে নিতে হবে।
# মেয়াদ পূর্তির পর ঠিক কত টাকা এবং কতদিনের মধ্যে সেই প্রতিশ্রুত অর্থ পাওয়া যাবে, তা নিশ্চিতভাবে জেনে নিতে হবে।
# মেয়াদ পূর্তির পর যথাসময়ে প্রতিশ্রুত অর্থ পাওয়া না গেলে গ্রাহকের কী আইনি সুরক্ষা থাকছে সেটা জেনে নিতে হবে।
অসুবিধা
ঢাবি ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগের পরিচালক বলেন, বাংলাদেশে বীমা খাতের সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে আস্থার সংকট। যদিও বাংলাদেশে গত ৪৭ বছরের বেশি সময় ধরে বীমা চালু রয়েছে। তা সত্ত্বেও বীমা বিষয়টি নিয়েই সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছুটা বিভ্রান্তি এবং পর্যাপ্ত জ্ঞানের অভাব রয়েছে। একই সঙ্গে মেয়াদ পূর্তির পর কিংবা জীবন বীমার ক্ষেত্রে পরিবারের সদস্যের মৃত্যুর পর বীমাকৃত অর্থ পেতে সমস্যার অভিযোগ শোনা যায়।
হাসিনা শেখ বলেন, এক্ষেত্রে দুই পক্ষেই সমস্যা হয়। যেমন গ্রাহক হয়তো বীমা করার সময় শর্তসমূহ ঠিকমত খেয়াল করে না। হয়তো কোথাও কোনও শর্ত যথাযথভাবে পূরণ হয়নি। কিন্তু সেক্ষেত্রে গ্রাহককে কী করতে হবে, সেটা উনি জানেন না। আবার অন্যদিকে গ্রাহককে ঠিকমতো পুরো পরিস্থিতি অবহিত করে বীমা করানো কিংবা মেয়াদ শেষে যথাসময়ে প্রতিশ্রুত অর্থ বুঝিয়ে দেয়া-এসব বিষয়ে অনেক সময় কোম্পানির পক্ষ থেকে ঘাটতি দেখা যায়। 
দেশে বীমা এজেন্টদের যথাযথ প্রশিক্ষণ ও দক্ষতার ঘাটতি এর পেছনে একটি কারণ বলে তিনি মনে করেন। একই সঙ্গে কোনও প্রতিষ্ঠান যদি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করে তা হলে সেজন্য শাস্তির ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।