ঢাকা, ২৯ এপ্রিল সোমবার, ২০২৪ || ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৩৩৮

বেশি ভাত খেলে যা হয়

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৪:১৮ ৩০ অক্টোবর ২০২৩  

বাঙালি হিসেবে আমরা ভাত বেশি খাই। বেশি ভাত খাওয়ার অনেক বিপদ। তাই কম ভাত খাওয়া শ্রেয়। একজন মানুষ প্রতিদিন তার মোট ক্যালরির ৪৫-৬৫ শতাংশ গ্রহণ করে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট থেকে। কোনো মানুষের প্রতিদিন ২০০০ ক্যালরির সুষম খাবার খেতে হলে তার ২২৫-৩২৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট খেতে হবে। তবে দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে এই কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের পরিমাণ ৫০-১৫০ গ্রামের বেশি হওয়া ঠিক নয়।
 
 
বেশি ভাত খেলে যা হয়:
১. ওজন বেড়ে যায়
২. পেট মোটা হয়ে যায়
৩. টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হয়
৪. ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যায়
 
 
৫. কোলেস্টেরল বেড়ে যায়
৬. সাদা ভাতের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স বেশি বলে সাঁই করে সুগার লেভেল বেড়ে যায়
৭. ফাস্টিং সুগার লেভেল বেড়ে যায়
৮. রক্তচাপ বেড়ে যায়
 
 
৯. এইচডিএল- এর মাত্রা কমে যায়
১০. ট্রাইগ্লিসারাইড ও কোলেস্টেরল লেভেল মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলে হ্রদরোগ ও স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়
১১. ভাত বেশি খাওয়ার কারণে শরীরে পুষ্টির অভাব হলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়
 
 
১২. শরীরের ওজন বেড়ে গেলে বা স্থুল হয়ে গেলে কর্মক্ষমতা কমে যায়
১৩. শরীরের ওজন বেড়ে গেলে আর্থ্রাইটিসের সম্ভাবনা বেড়ে যায়
১৪. স্থুল লোকের ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যায়
 
 
১৫. ভাত বা কার্বোহাইড্রেট বেশি খেলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স সৃষ্টি হয়
১৬. নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিসের কারণে কিডনি ফেল করে যেতে পারে
তাই ভাত খাওয়ার ব্যাপারে সংযত হোন।
 
শরীরের ৭২ শতাংশ পানি। পর্যাপ্ত পানি পান করলে শরীর থেকে অতি সহজে বর্জ্য পরিষ্কার হয়ে যায় এবং কোষে পর্যাপ্ত পুষ্টি ঢুকতে পারে। কিডনী সমস্যা না থাকলে প্রতিদিন ৮ থেকে ১০ গ্লাস বিশুদ্ধ পানি পান করুন। তাতে পিঠ ও গিঁটের ব্যথা সেরে যায়, স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধি পায়, মলাশয়, স্তন ও ব্লাডার ক্যান্সারের ঝুঁকি বহুলাংশে কমে যায়।
 
 
সুষম খাবার খাবেন। আগেই বলেছি- ভাত কম খাবেন।কতটুকু খাবেন? এক বা দুকাপ, রুটি বা পাউরুটি দুই পিসের বেশি নয়। প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে খাবার খাবেন। খাবারের ব্যাপারে অনিয়ম করার কারণে পেটে নানাবিধ সমস্যা দেখা দেয়। অতি ভোজন বর্জন করুন। খাওয়ার আগে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। রাস্তার অস্বাস্থ্যকর খাবার খাবেন না।
 
 
রাস্তা-ঘাট, স্কুল-কলেজের সামনে শিশুদের অস্বাস্থ্যকর ঝালমুড়ি, ফুসকা, আচারজাতীয় খাবার খাওয়া থেকে বিরত রাখুন। খাবার হতে হবে কম ক্যালরিযুক্ত এবং বেশি পুষ্টিসমৃদ্ধ। বাচ্চাদের জাংকফুড ও কোমল পানীয় থেকে দূরে রাখুন। ময়লা টাকা আদান-প্রদান করে ভালো করে সাবান দিয়ে হাত না ধুয়ে খাবার খাবেন না।
কারণ ময়লা টাকায় অসংখ্য মারণঘাতী জীবাণু থাকে।
 
 
পর্যাপ্ত শাকসবজি ও ফুলমূল, ভুসিসমৃদ্ধ শস্য, বাদাম, বিভিন্ন ধরনের বিচি খাবেন। তিসির তেল, অলিভ অয়েল ভালো। অন্যান্য তেল যত কম ততো ভালো। সালাদ হতে হবে খাবারের অপরিহার্য অংশ। চিনি হল হোয়াইট পয়জন, সাদা রুটি, ময়দা, পেস্তা, কেক, কুকিজ, পিৎসা ও পেস্ট্রি খাবেন না, সম্পূর্ণ চাল ও আটা খাবেন ( whole grain)।
খাসি ও গরুর গোশত যত কম তত ভালো।
 
 
প্রোটিন হিসেবে মাছ উত্তম, মাংস নয়। চর্বিমুক্ত ছোট দেশি মুরগী খাওয়া যেতে পারে, তবে ফার্মের পোল্ট্রি নয়। ট্রান্সফ্যাট বা পোড়া তেল, ফ্রি রেডিক্যাল ও চিনি হৃদরোগ ও স্ট্রোকের কারণ । ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী। কাঁচা লবণ খাওয়া ছেড়ে দিন। ডিম, দুধ, বাটার, পনির ও দই স্বাস্থ্যকর খাবার। ভিটামিন-সি, বিটা ক্যারোটিন বা ভিটামিন এ, ভিটামিন ই, সেলেনিয়াম ও পলিফেনোল শরীরের জন্য বিশেষ উপকারী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।
 
 
সব অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আঁশ ও খনিজের উৎকৃষ্ট উৎস ফলমূল, শাকসবজি ও সবুজ চা। প্রতিদিন তিনটি খেজুর, পানিতে মিশিয়ে একটি গোটা লেবুর রস, এক বা দুটো আমলকি, এক চায়ের চামচ কালিজিরা, এক চামচ মধু খাবেন ( যদি ডায়াবেটিসের সমস্যা না থাকে)।
 
 
উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, স্থূলতা ও ক্যান্সারজাতীয় প্রাণঘাতী রোগ থেকে বাঁচতে হলে বিয়েশাদি এবং অন্যান্য সামাজিক ও পারিবারিক অনুষ্ঠানে মাত্রাতিরিক্ত ঘি, ডালডা, চর্বি বা প্রচুর তেলসমৃদ্ধ পোলাও, রোস্ট, বিরিয়ানি, খাসি ও গরুর গোশত খাওয়া কমাতে হবে। জাংকফুড খাবেন না। এসব খাবারে পুষ্টি কম, চর্বি বেশি। ম্যাকডোনাল্ড, বার্গার কিং, কেন্টাকি ফ্রায়েড চিকেন, পিৎসা, হ্যামবার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, এনার্জি ড্রিংক, পেপসি, কোকাকোলাতে রয়েছে প্রচুর লবণ, চিনি, মনোসোডিয়াম গ্লুটামেট ও টাট্রাজিনজাতীয় বিতর্কিত খাদ্যোপকরণ।
 
 
কোমল পানীয় ও জাংকফুডে প্রচুর চিনি ও চর্বি থাকে বলে এমন খাবার খেলে ওজন বেড়ে যাওয়াসহ উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, স্ট্রোক, ডায়াবেটিস, আর্থ্রাইটিস, ক্যান্সারের মতো বহু জটিল রোগের উৎপত্তি হয়। চা, কফি পরিমিত। মদ ও মাদক হারাম করুন। ধূমপান ছাড়ুন। ওষুধের প্রতি নির্ভরশীলতা কমিয়ে ফেলুন।
 
 
ব্যায়াম বাধ্যতামূলক। প্রতিদিন দুই মাইল বা তিন কিলোমিটার হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এতে সারাদিনের শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি, অবসাদ ও দুশ্চিন্তা দূর হবে। ব্যায়াম করলে রাতের ঘুম ভালো হবে। সূর্যালোক শরীরে ভিটামিন-ডি তৈরি করে। ভিটামিন-ডি'র ঘাটতি হলে শরীরের ক্যালসিয়াম বিশোষণে বিঘ্ন ঘটে। ক্যালসিয়াম শরীরের জন্য খুব প্রয়োজনীয় একটি উপকরণ। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট সূর্যস্নান করা দরকার।
 
 
পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে মানবদেহে শক্তি উৎপাদন, গ্লুকোজ মেটাবলিজম কমে যায় এবং বয়োবৃদ্ধি বা এইজিং প্রক্রিয়া বেড়ে যায়। শরীরে শক্তি সংরক্ষণ, কোষপুঞ্জ তৈরি ও মেরামত, শরীরের প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পুনর্গঠন, মস্তিষ্ককে কোষের ধ্বংসাবশেষ থেকে পরিষ্কার রাখার জন্য পর্যাপ্ত ও নিরুপদ্রব ঘুমের একান্ত প্রয়োজন।
 
 
দাম্পত্যজীবন সুখকর করুন। আল্লাহর ওপর বিশ্বাস রাখুন। কাম, ক্রোধ, লোভ-লালসা, মোহ, ঈর্ষা ও প্রতিহিংসা আমাদের দুঃখ, কষ্ট, অশান্তি, অসুস্থতা ও ধ্বংসের মূল কারণ। সততা, সৎকর্ম ও অকুণ্ঠ অটল সৃষ্টিকর্তাপ্রীতির মাধ্যমে উল্লিখিত বদগুণ বর্জন করে এই জীবনেই পরম স্বর্গসুখের স্বাদ লাভ করুন। আল্লাহ মানুষকে নিয়মতান্ত্রিক, স্বাস্থ্যসম্মত জীবনযাপনের আদেশ দিয়েছেন। তাঁর সেই আদেশ-নিষেধ মেনে চললে জীবন অনেক শান্তিময় ও নিরাপদ হবে।
 
 
মনে রাখবেন-"শরীরের নাম মহাশয়, যা করে তা সয়"- এ কথাটি ঠিক নয়।
 

লেখক: অধ্যাপক ড. মুনিরুদ্দিন আহমেদ
সাবেক ডিন, ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।