ঢাকা, ২৯ মার্চ শুক্রবার, ২০২৪ || ১৫ চৈত্র ১৪৩০
good-food
৬৮১

ভাত কম খান

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০১:৪৪ ২৯ অক্টোবর ২০২১  

বহুদিন পর বর্তমান সরকারের কৃষিমন্ত্রী একটি মোক্ষম কথা বলেছেন। অনেকদিন ধরে নেতানেত্রীদের বেহুদা বাহুল্য কথাবার্তা শুনতে শুনতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিলাম।

 

কৃষিমন্ত্রী . আব্দুর রাজ্জাক চালের চাহিদা কমানোর জন্য মানুষকে কম ভাত খেতে উপদেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, আমরা বেশি ভাত খাই। আমরা একেকজন দিনে প্রায় ৪০০ গ্রাম চাল খাই, পৃথিবীর অনেক দেশে ২০০ গ্রাম চালও খায় না। ভাতের পরিবর্তে পুষ্টিকর খাবার বেশি করে খেতে বলেছেন তিনি।

 

কথাগুলো আমি আমার প্রায় লেখায় সাধারণত বলে থাকি। তিনি হয়ত বলেছেন রাজনৈতিক কারণে আর আমি বলে থাকি স্বাস্থ্যগত কারণে। তবে প্রশ্ন হলো- ভাত কম খেলে চালের চাহিদা কমবে বলে তাঁর রাজনৈতিক বিশ্বাস। কিন্তু চালের চাহিদা কমলে দাম কমবে, এটা কি তিনি নিশ্চিতভাবে বলতে পারেন?

 

তাঁর মতে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া সত্বেও চাল অন্যান্য জিনিসপত্রের অনিয়ন্ত্রিত মূল্যবৃদ্ধির পেছেনে সুপরিকল্পিতভাবে একটি মদদপুষ্ট শক্তিশালী সিন্ডিকেট কাজ করছে- এটা কি তিনি অস্বীকার করতে পারবেন? আরও একটি কথা। যার চাল ডাল কেনার সামর্থ্য নেই, সে পুষ্টিকর খাবার পাবে কোত্থেকে? পুষ্টিকর খাবার কি সস্তায় বা বিনে পয়সায় পাওয়া যায়? যেদেশে নুন আনতে পান্তা ফুরায়, সেদেশে আবার পুষ্টি!

 

যাক, রাজনৈতিক বিতর্কে আমি যেতে চাই না। কি বলতে গিয়ে আবার কি বলে ফেলি। এদেশে কথাবার্তা বলার সময় দশবার ভাবতে হয়, আতঙ্কে থাকতে হয়। বয়সে বিতর্কিত কথাবার্তা বলে জেলে যাওয়ার সখ আমার আপাততঃ নেই।

 

বলছিলাম- মন্ত্রী মহোদয়ের মতো আমিও বলি, ভাত কম খান। ভাত বা কার্বোহাইড্রেট বেশি খাওয়া মানে শরীরের সর্বনাশ ডেকে আনা।

 

একজন মানুষ প্রতিদিন তার মোট ক্যালরির ৪৫-৬৫ শতাংশ গ্রহণ করে শর্করা বা কার্বোহাইড্রেট থেকে। কোনো মানুষের প্রতিদিন ২০০০ ক্যালরির সুষম খাবার খেতে হলে তার ২২৫-৩২৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট খেতে হবে। তবে দ্রুত ওজন কমাতে চাইলে এই কার্বোহাইড্রেট গ্রহণের পরিমাণ ৫০-১৫০ গ্রামের বেশি হওয়া ঠিক নয়।

 

বেশি ভাত খেলে যা হবেঃ

. ওজন বেড়ে যাবে

. পেট মোটা হয়ে যাবে

. টাইপ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হবে

. ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যাবে

 

. কোলেস্টেরল বেড়ে যাবে

. সাদা ভাতের গ্লাইসেমিক ইন্ডেক্স বেশি বলে সাঁই করে সুগার লেভেল বেড়ে যাবে

. ফাস্টিং সুগার লেভেল বেড়ে যাবে

. রক্তচাপ বেড়ে যাবে

 

. এইচডিএল- এর মাত্রা কমে যাবে

১০. ট্রাইগ্লিসারাইড কোলেস্টেরল লেভেল মাত্রাতিরিক্ত বেড়ে গেলে হ্রদরোগ স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যাবে

১১. ভাত বেশি খাওয়ার কারণে শরীরে পুষ্টির অভাব হলে শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে

১২. শরীরের ওজন বেড়ে গেলে বা স্থুল হয়ে গেলে কর্মক্ষমতা কমে যাবে

 

১৩. শরীরের ওজন বেড়ে গেলে আর্থ্রাইটিসের সম্ভাবনা বেড়ে যাবে

১৪. স্থুল লোকের ক্যানসারের ঝুঁকি বেড়ে যাবে

১৫. ভাত বা কার্বোহাইড্রেট বেশি খেলে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স সৃষ্টি হবে

 

১৬. নিয়ন্ত্রণহীন ডায়াবেটিসের কারণে কিডনি ফেল করে যেতে পারে

১৬. চালে আর্সেনিক থাকলে মহাবিপদ। আর্সেনিক ক্যানসার কার্ডিওভেসকুলার রোগের বড় কারণ।

আরও অনেক আছে। বলব? না, থাক। মাছে-ভাতে বাঙালির জন্য আজ পর্যন্তই। অনেকেই বলেন- ভাত না থাকলে কি খেয়ে বাঁচতাম!

লেখক: অধ্যাপক ড. মুনিরুদ্দিন আহমেদ
সাবেক ডিন, ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।

মুক্তমত বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর