ঢাকা, ২৬ এপ্রিল শুক্রবার, ২০২৪ || ১৩ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৫০৫

ভ্যাকসিন নিয়েও নোংরা রাজনীতি!

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২২:৪৯ ১৮ জানুয়ারি ২০২১  

নরওয়েতে ফাইজারের ভ্যাকসিন প্রয়োগের ফলে শনিবার পর্যন্ত ৭৫ বছর বয়স্ক ২৯ জন করোনা রোগীর মৃত্যু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রেও কিছু রোগীর মধ্যে এর কারণে মারাত্মক অ্যালার্জিক পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। হতে পারে ভ্যাকসিন প্রয়োগে বয়সটাকে গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হিসেবে গণ্য করতে হবে। 


ফাইজার বা পশ্চিমা মূলধারার মিডিয়াগুলো এসব মৃত্যু এবং পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নিয়ে কোনো কথা বলছে না। মুখে কুলুপ এঁটে বসে আছে। কোথায় গেল সেই গোল্ডেন প্রেস ফ্রিডম? 

 

ফাইজার এই মৃত্যুকে আশংকাজনক নয় বলে অবিহিত করেছে। মার্কিন প্রতিষ্ঠানটি বলছে- এসব মৃত্যু প্রত্যাশিত ছিল। বাহ! কী চমৎকার বৈজ্ঞানিক যুক্তি ও উপসংহার! হবেই না বা কেন? এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ ওষুধ কোম্পানি যার অবস্থান ‘দ্য গ্রেট আমেরিকায়’। 


ধারণাটি এরকম- এই ভ্যাকসিনে ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকবে, অকার্যকর হবে কিংবা এই ম্যাজিক বুলেটের কারণে কারো মৃত্যু হবে। এটা অস্বাভাবিক এবং এটা কোনোমতেই মেনে নেয়া যায় না। দোষ স্বীকার করা তো দূরের কথা।

 

ফাইজার বিশ্বের সর্ববৃহৎ কোম্পানি হলেও সেটির অনেক অনৈতিক ও অপকর্মের ইতিহাস আমার জানা আছে। এসব অপকর্ম ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য একে অতীতে বিলিয়ন বিলিয়ন ইউএস ডলার ক্ষতিপূরণ ও জরিমানা দিতে হয়েছে। 

 

যাহোক, এতদিন পশ্চিমা মূলধারার মিডিয়াগুলোতে ফাইজার আর অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিনের জয়গান শুনতে শুনতে কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। চীন যে ইতোমধ্যে কার্যকর ভ্যাকসিন আবিষ্কার করে ফেললো, এর কোনো খবর আমরা এসব মিডিয়ায় শুনলাম না। যত দোষ দেশটি বা রাশিয়ার। ছ্যা, চীনারা ও রুশরা ভ্যাকসিন আবিষ্কার করবে? এর মতো কি যোগ্যতা আছে এদের? 

 

পড়ে আশ্চর্য হলাম- তুরস্ক ৮ কোটি ৩০ লাখ মানুষকে চীনের সিনোভ্যাক ভ্যাকসিন প্রদানের সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে ফেলেছে। গণহারে তা প্রয়োগ শুরু করে দিয়েছে। দেশটিতে এর প্রথম শটটি নিয়েছেন সেদেশের স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এছাড়াও পৃথিবীর আরো ১৭টি দেশ এটি কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। 

 

অথচ চীনের এই ভ্যাকসিন নিয়ে পশ্চিমা মূলধারার মিডিয়াগুলোতে অপপ্রচারের কমতি নেই। পশ্চিমা মিডিয়ার বরাতে বলা হয়েছে - ব্রাজিলের কোনো এক পরীক্ষায় নাকি দেখা গেছে- সিনোভ্যাক মাত্র ৫৪ শতাংশ কার্যকর। অথচ তুরস্ক বলছে- তাদের হাতে অকাট্য প্রমাণ আছে যে এটি ৯১.২৫ শতাংশের বেশি কার্যকর। 


সিনোভ্যাক গ্রহণের কারণে নাকি ব্রাজিলে এক লোকের মৃত্যু হয়েছে। আসল কথা হলো এর সঙ্গে এই মৃত্যুর আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই। সর্বশেষ খবরে প্রকাশ- দেশটির সরকার ব্রাজিলিয়ানদের গণহারে সিনোভ্যাক ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন প্রদান শুরু করেছে।


ভ্যাকসিন নিয়ে আমি এখনো সন্দেহমুক্ত হতে পারছি না। আমার এখনো বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছে - এসব শতভাগ সাফল্য অর্জন করবে। কারণ, এই নটরিয়াস করোনাভাইরাসকে খাটো করে দেখার কোনো অবকাশ নেই। এর ভয়ংকর নতুন নতুন সংস্করণকে এত সহজে পরাস্ত করা যাবে বলে আমি ভাবতে পারছি না। 

 

কোম্পানিগুলো যা-ই বলুক না কেন, আমি কেন জানি আশাবাদী হতে পারছি না। তবে আমি চাই আমার ধারণা মিথ্যা হোক। প্রতিটি ভ্যাকসিন কার্যকর হোক। বিশ্বের প্রতিটি মানুষ এর সুফল ভোগ করুক। আমি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলোর চরিত্র জানি বলে তাদের মনেপ্রাণে বিশ্বাস করতে পারি না। ব্যবসায়িক কারণে হোক বা বিশ্বব্যাপী মৃত্যুহার কমানোর তাগিদে হোক, ভ্যাকসিন আবিষ্কারে এরা পর্যাপ্ত সময় দিয়েছে বলে আমার মনে হয় না। 

 

এসব ভ্যাকসিন গ্রহণের ফলে শেষ পর্যন্ত পরিণতি কি দাঁড়াবে এখনো কেউ তা জানে না। আমাদের আরো কিছুকাল অপেক্ষা করতে হবে এবং চোখ-কান খোলা রাখতে হবে। তবে এটুকু বলে রাখি- যত নামীদামি ভ্যাকসিনই আসুক না কেন, করোনাকে সমূলে নির্মূল করা সহজ হবে বলে মনে হচ্ছে না। 

 

করোনা আরো বহুদিন থাকবে এবং আমাদের বিব্রত করবে। এ ভাইরাস অসুস্থ করবে এবং মৃত্যুর কারণ হবে। বিভিন্ন দেশে কোভিডের যে হারে মিউটেশন হচ্ছে তা রীতিমতো ভয়ংকর। আমার ধারণা - বিভিন্ন দেশে আরো দ্রুতগতিতে েএর মাধ্যমে নতুন নতুন ভয়ংকর করোনা স্ট্রেইনের আবির্ভাব হবে। 

 

এগুলো মানবসভ্যতাকে বিপর্যস্থ করে ছাড়বে। ইতোমধ্যে বিশ্বে ২০ লাখ লোকের মৃত্যু হয়েছে। আরো কত লোকের মৃত্যু আমাদের দেখতে হবে এবং কত শত কোটি লোক আক্রান্ত হবে, তা শুধু আল্লাহই জানেন।

 

লেখক: অধ্যাপক ড. মুনিরুদ্দিন আহমেদ
সাবেক ডিন, ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।