ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৭৩১

মধু-মোম উৎপাদন বেড়েছে

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ১৭:১০ ২২ সেপ্টেম্বর ২০২০  

স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং যাবতীয় রোগ নিরাময়ে মধুর গুণ অপরিসীম। এতে জিংক ও ভিটামিন সিসহ অনেক রোগ-প্রতিরোধের উপাদান রয়েছে। ফলে করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে সুন্দরবনের মধুর কদর বেড়েছে। দর্শনার্থী প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা থাকায় বনের অভ্যন্তরে বৃক্ষরাজিতে মৌমাছির আবাসস্থল বৃদ্ধি পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই চলতি বছর মধু ও মোমের উৎপাদন বেড়েছে। 

 

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগ থেকে এ বছর ১ হাজার ২২০ কুইন্টাল মধু আহরণ করেছেন মৌয়ালরা। এসময় মোম উৎপাদন হয়েছে ৩৬৬ কুইন্টাল। পূর্ব বন বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুন্দরবন থেকে ১ হাজার ২২০ কুইন্টাল মধু আহরণ করেছেন মৌয়ালরা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মধু আহরণ হয়েছিল ৭৪২ কুইন্টাল। অর্থ্যাৎ ২০১৯-২০ অর্থবছরে গেল বছরের চেয়ে ৪৭৮ কুইন্টাল মধু বেশি আহরিত হয়েছে। এর আগে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে মৌয়ালরা ৪৮৮ কুইন্টাল মধু আহরণ করেন। 

 

২০১৯-২০ অর্থবছরে রাজস্বের পরিমাণও বেড়েছে অনেক। এবার মধু থেকে রাজস্ব এসেছে ৯ লাখ ১৫ হাজার ৩৭৫ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে রাজস্ব ছিল ৫ লাখ ৫৬ হাজার ৮৭৫ টাকা এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ছিল ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৪৮০ টাকা মাত্র।

 

মধুর উৎপাদনের সঙ্গে মোমেরও উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে এ বছর। ২০১৯-২০ অর্থবছরে সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগে ৩৬৬ কুইন্টাল মোম উৎপাদন হয়েছে। এ থেকে রাজস্ব আদায় হয়েছে ৩ লাখ ৬৬ হাজার ১৫০ টাকা। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে মোমের উৎপাদন ছিল ২২৯ কুইন্টাল এবং রাজস্ব ছিল ২ লাখ ২৯ হাজার ৬০০ টাকা। ২০১৭-১৮ বছরে মোমের উৎপাদন ছিল মাত্র ১৫৮ কুইন্টাল এবং রাজস্ব আদায় হয়েছিল ১ লাখ ৫৮ হাজার ৪৫৩ টাকা।

 

সুন্দরবন নিয়ে গবেষণা করা প্রতিষ্ঠান সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম জানান, মৌমাছিরা ফুলে ফুলে বিচরণ করে ফুলের রেণু ও মিষ্টি রস সংগ্রহ করে পাকস্থলিতে রাখে। পরে সেখানে তাদের মুখ নিঃসৃত লালা মিশ্রিত হয়ে রাসায়নিক জটিল বিক্রিয়ায় মধু তৈরি হয়। এরপর মুখ হতে মৌচাকের প্রকোষ্ঠে তা জমা করে তারা। মূলত নিজেদের খাবারের জন্য মধু তৈরি করে মৌমাছি। 

 

মধুর প্রধান উপকরণ সুগার (চিনি)। এটি আমরা অনেকেই এড়িয়ে চলি। কিন্তু মধুতে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ সরাসরি মেটাবলাইজড হয়ে যায় এবং ফ্যাট হিসেবে জমা হয় না। এতে অ্যালুমিনিয়াম, বোরন, ক্রোমিয়াম, কপার, লেড, টিন, জিংক ও জৈব এসিড (যেমন-ম্যালিক এসিড, সাইট্রিক এসিড, টারটারিক এসিড এবং অক্সালিক এসিড), কতিপয় ভিটামিন, প্রোটিন, হরমোনস, এসিটাইল কোলিন, অ্যান্টিবায়োটিকস, ফাইটোনসাইডস, সাইস্টোস্ট্যাটিক্স এবং পানি (১৯-২১%) রয়েছে। 

 

এছাড়া অন্যান্য পুষ্টিকর উপাদান যথা ভিটামিন সি বা অ্যাসকরবিক এসিড, ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩, বি-৫, বি-৬, ভিটামিন-ই, ভিটামিন-কে, ভিটামিন-এ বা ক্যারোটিন ইত্যাদি বিদ্যমান। 
মধু এমন ধরনের ওষুধ, যার পচন নিবারক (অ্যান্টিসেপটিক), কোলেস্টেরলবিরোধী এবং ব্যাকটেরিয়াবিরোধী ধর্ম আছে। নিয়মিত ও পরিমিত তা সেবন করলে উপকার পাওয়া যায়। এ কারণে করোনার পরিস্থিতিতে সুন্দরবনের মধুর কদর বেড়েছে।

 

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মোহাম্মাদ বেলায়েত হোসেন বলেন, গত ২৬ মার্চ গোটা সুন্দরবনে সবধরনের পর্যটকসহ জেলে-বনজীবীদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করে সর্বোচ্চ সর্তকতা ‘রেড অ্যালার্ট’ জারি করে বন অধিদপ্তর। ফলে প্র্রাণ ফিরে পেয়েছে সুন্দরবন। এখানে মৌমাছির আবাসস্থলও বৃদ্ধি পেয়েছে। এ কারণে ২০১৯-২০ অর্থবছরে মধু আহরণ ও মোমের উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। আশা করি এ ধারা অব্যাহত থাকবে।

অর্থনীতি বিভাগের পাঠকপ্রিয় খবর