ঢাকা, ২০ এপ্রিল শনিবার, ২০২৪ || ৭ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
১০১৭

মহিলারা লেখাটি অবশ্যই পড়বেন

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ২১:৩৮ ১১ নভেম্বর ২০১৯  

সম্প্রতি স্তন ক্যান্সারে আমার এক বন্ধুর স্ত্রীর মৃত্যু হয়েছে। এর পর তার অনুরোধে আমি এ গুরুত্বপূর্ণ লেখাটি সবার অবগতি ও সচেতনতা সৃষ্টির জন্য উপস্থাপন করছি। এ ক্যান্সারের চিকিৎসায় অভূতপূর্ব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। তবে এখনো বিশ্বে প্রতি ৬৯ সেকেন্ডে এতে একজন মহিলা মৃত্যুবরণ করেন।

অথচ প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে এ ক্যান্সার নিয়ন্ত্রণ ও চিকিৎসা সহজ হয়। বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা বহুলাংশে বেড়ে যায়। কারণ, এর কোষ সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়লে (Metastasis) ফুসফুস, লিভার, হার্ট, কিডনি, হাড় ও অন্যান্য অঙ্গ ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। তখন সার্জারি,  রেডিয়েশন, কেমোথেরাপির মতো জটিল ও মারণঘাতি চিকিৎসার দরকার হয়।

বিশেষজ্ঞরা ইদানীং মনে করছেন, স্তন ক্যান্সারের কোনো কারণ নির্ণয় সহজ নয়, এটা নিছক ভাগ্য দোষ। কে কখন এতে আক্রান্ত হবে, আর কে হবে না, তা কেউ বলতে পারেন না। এ ধরুন, কোটি কোটি মহিলার মধ্যে কারো স্তন ক্যান্সার হয়, অনেকেরই কেন হয় না- এর বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ আমরা দিতে পারি না। তবুও বলব- আমাদের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, ভুল খাদ্যাভ্যাস, ভুল লাইফস্টাইল, ব্যায়াম না করা বা অলস জীবনযাপন, শরীরে হরমোনের ভারসাম্যহীনতা বা হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি ক্যান্সার সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অল্প বয়সী মেয়েদের স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা কম নয়। তাই তাদের প্রথম থেকেই সচেতন হতে হবে। এটি নির্ণয়ের জন্য নিয়মিত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।  বছরে একবার ম্যামোগ্রাম (স্তনের এক্স রে), এমআরআই (ম্যাগনেটিক রেজনেন্স ইমেজিং) করে আপনি ক্যান্সারে আক্রান্ত কি না তা নিশ্চিত হয়ে নিন। আপনারা কী জানেন, চিকিৎসক ছাড়াও ঘরে বসে নিজের স্তন আপনারা নিজেরাই পরীক্ষা করতে পারেন?

প্রথমত, সুক্ষ্মভাবে পরীক্ষা করে দেখুন স্তনে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হচ্ছে কি না। দুই স্তনের আকার-আকৃতিতে পরিবর্তন, অংশ বিশেষ বা পুরো স্তন ফুলে যাওয়া, রং পরিবর্তন, চামড়া মোটা বা খসখসে হয়ে যাওয়া, স্তনের বোঁটায় অস্বাভাবিকতা, বোঁটা দিয়ে রক্ত বা রক্তমিশ্রিত তরল পদার্থ নির্গত হওয়া, স্তনের যেকোনো স্থানে, বাহুমূল বা বগলে লাম্প বা শক্ত পিন্ড সৃষ্টি হওয়া এ ক্যান্সারের কিছু উপসর্গ।

প্রায়শ স্তন ক্যান্সারে কোনো ব্যথা না থাকার কারণে অনেকেই ভ্রান্তভাবে মনে করেন- তারা নিরাপদ আছেন। আসলে তা নয়। স্তনে লাম্প বা পিন্ডের উপস্থিতি আপনি নিজেই ঘরে বসে পরীক্ষা করতে পারেন বা আপনার চিকিৎসক দিয়ে করাতে পারেন। প্রতি মাসের নির্দিষ্ট দিনে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে হাতের তালু চাপ দিয়ে পুরো স্তনে চালিয়ে পরীক্ষা করে দেখুন লাম্প/পিন্ড বা কোনো শক্ত কিছু আঙ্গুলে অনুভুত হয় কি না।

স্তনে সাবান মেখে আঙ্গুল চালাতে সহজ হয় বলে গোসল করার সময় পরীক্ষাটা করা উত্তম। যদি কোনো লাম্প বা পিন্ড হাতের আঙ্গুলের তালুতে ধরা পড়ে, তবে দেরি না করে চিকিৎসকের স্মরণাপন্ন হোন। মনে রাখবেন- সব টিউমার ক্ষতিকর নয়। তবে কোন টিউমার ক্ষতিকর, আর কোনটি ক্ষতিকর নয় তা শুধু পরীক্ষার মাধ্যমে জানা সম্ভব। কোনো অস্বাভাবিকতা ধরা না পড়লেও পরীক্ষার জন্য নিয়মিত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা দরকার।

মনে রাখবেন, প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার ধরা পড়লে আপনার বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা বহুলাংশে বেড়ে যাবে। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি, এ সহজ কথাটি অনেক মহিলা জানে না। তাই অনেককেই পরবর্তীতে পস্তাতে হয়।

ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ: অধ্যাপক, ফার্মেসি অনুষদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়