ঢাকা, ২৯ এপ্রিল সোমবার, ২০২৪ || ১৬ বৈশাখ ১৪৩১
good-food
৩৩৪

মির্জা ফখরুলের আটক ও চলমান রাজনীতি

লাইফ টিভি 24

প্রকাশিত: ০২:১৮ ২ নভেম্বর ২০২৩  

দেশের রাজনীতি বিপর্যয়ের দিকে এগুচ্ছে এটা সবাই বোঝে। আমি নিজে বইপত্র লেখালেখি নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও সচেতন নাগরিক হিসেবে চলমান পরিস্থিতির খবর না রেখে উপায় নেই। বিশেষত যেহেতু স্বল্পোন্নত দেশের জন্য পৃথবীব্যাপী ভূরাজনীতির নতুন মেরুকরণ কী তাৎপর্য বহন করছে তা নিয়ে কিছু গবেষণা করছি। তবে সেটা এ লেখার বিষয় নয়।
 
 
 
সুশীল সমাজের পক্ষ হয়ে কোনও পর্যবেক্ষণ করার অবস্থানেও আমি নেই। তবে আমার মনে হয়েছে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এ সময়ে আটক করা আগামী নির্বাচন পূর্ববর্তী পরিস্থিতির জন্য সমীচীন হয়নি। নেতৃত্বস্থানীয় রাজনিতিকদের মধ্যে তিনিই বোধ হয় ক্রমাগত এককভাবে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের কথা বলে আসছেন এবং সংঘাত সৃষ্টির মতো উস্কানিমূলক বক্তব্য থেকে বিরত থেকেছেন।
 
 
বাইরে থেকে ঘটনাপ্রবাহ দেখলে এবং তাঁর বক্তব্য শুনলে অন্তত আপাতদৃষ্টে মনে হবে তিনি কোনোরকম সংঘাত এড়িয়ে শুধু সতস্ফূর্ত অহিংস গণজাগরণের মাধ্যমেই দলের লক্ষ্য অর্জন করতে চাইছেন; সেটা সফল হবে কিনা তা ভিন্ন প্রশ্ন। তাঁর গোপন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড থাকলেও তা নিয়ে তো আমাদের মন্তব্য করার সুযোগ নেই; যা দৃশ্যমান তা নিয়েই শুধু রাজনীতিকে এ মুহূর্তে বিচার করতে পারি।
 
 
এর বিপরীতে উভয় দলের অনান্য অনেক নেতার গণমাধ্যমে প্রচারিত বক্তব্য থেকে এ ধরণের অহিংস আন্দলনের বদলে যুদ্ধংদেহী মনোভাবের পরিচয়ই বেশী দেখা যায়। এ অবস্থায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দৃশ্যপট থেকে সরিয়ে দেয়ার মানে হল সংঘাতময় পরিস্থিতির সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেয়া। অবশ্য তিনি তাঁর দলকে কতখানি সংযত রাখার ক্ষমতা রাখেন তা আমার মতো রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ মানুষের জানার কথা নয়।
 
 
নানা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রের খবরও আমদের পক্ষে জানা সম্ভব নয়। কিন্তু আপাতদৃষ্টে তাঁর মতো ঘোষিত একজন অহিংসবাদী মূল রাজনৈতিক নেতার অনুপস্থিতি চলমান রাজনীতির সংঘাত প্রশমনের সহায়ক হবে না বলেই মনে হবার কথা। কিছু না হোক, অন্ততপক্ষে রাজনৈতিক শিষ্টাচার ও পরিশীলিত বক্তব্যের একটা দৃষ্টান্ত তো থাকবে, যদিবা দলের উপর তাঁর অতটা কার্যকর নিয়ন্ত্রণ নাও থাকে।
 
 
চলমান রাজনীতির সমাধান অহিংস পথে হবে না সংঘাতের মাধম্যে ফয়সলা হবে ফখরুলের উপর নির্ভর করবে দেশের অর্থনীতির ভবিষ্যৎঃ মূল্যস্ফীতির চাপ নির্দিষ্ট বা বাধা আয়ের মানুষের উপর আরও কত দুর্বিষহ হয়ে উঠবে, দেশের অর্থনৈতিক অগ্রগতি কতখানি ধরে রাখা যাবে এবং আমরা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার দিকে আদৌ এগুতে পারবো কিনা।
 
 
এই বড় প্রেক্ষাপটে মির্জা ফখরুলের আটকের ঘটনাকে হয়তো অতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে নাও হতে পারে, কিন্তু এটা বড় কিছুর অণুঘটক হিসেবে কাজ করলেও আশ্চর্য হবার কিছু নেই। তাঁকে আবার তাঁর অহিংস রাজনীতির ধারা ধরে রাখার প্রচেষ্টায় ফিরে যেতে দেয়াই দেশের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক সংস্কৃতির জন্য হয়তো মঙ্গলকর হবে।
 

(অর্থনীতিবিদ ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদের ফেসবুক স্ট্যাটাস থেকে নেওয়া)